নতুন বছরে মামার বাড়িতে

বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। মামা বাড়ি যাওয়ার কথা শুনে খুব খুশি হয় আরিক। মামা বাড়ির কথা ভাবতেই তার ঘুম আসে না। সারাক্ষণ মনের মধ্যে মামা বাড়ির স্মৃতিগুলো ভাসতে থাকে।

মো. রেজাউল করিমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Dec 2019, 07:04 AM
Updated : 31 Dec 2019, 07:04 AM

মাকে বারবার বলে, মা আমরা কবে মামা বাড়ি যাব?

মামা বাড়ি বেড়াতে আরিকের খুব ভাল লাগে। সেখানে কোন পড়াশোনা করতে হয় না। মা তাকে পড়াশোনার কথা বলে না। সারাক্ষণ শুধু ঘোরাঘুরি আর খেলাধুলা করতে পারে। মামা বাড়ির দিনগুলোতে খুব মজা পায় সে।

মামা বাড়িতে একটি বড় খেলার মাঠ আছে। কত ছেলে-মেয়েরা যে ওই মাঠে খেলতে আসে তা সে ভেবে পায় না। বড় সেই মাঠে কেউ ক্রিকেট খেলে, কেউ ফুটবল খেলে, কেউ ব্যাডমিন্টন খেলে, কেউ বা আবার ছোটাছুটি খেলে।

বড়রা আসে ব্যায়াম করতে, কেউবা হাঁটাহাঁটি করতেও আসে। আরিকও মামার বাড়িতে বেড়াতে গেলে সবার সঙ্গে ওই মাঠে খেলা করে। কখনও সে ক্রিকেট খেলে, কখনও ফুটবল, আবার কখনও ছোটাছুটি। খেলাধুলা করে সে খুব আনন্দ পায়। আর মনে মনে আফসোস করে, ইস! আমাদের এখানে যদি মামার বাড়ির মতো একটি খেলার মাঠ থাকত! কি মজাই না হত!

মামা বাড়ি বেড়াতে গেলে আর একটা বিষয় তার খুব ভাল লাগে। সেটা হল, তার ছোট মামার ব্যক্তিগত লাইব্রেরি। কত বিচিত্র রকম বই যে তার মামার লাইব্রেরিতে আছে তা বলে শেষ করা কঠিন। মানুষ সৃষ্টির ইতিহাস থেকে শুরু করে আদিম ইতিহাস, বর্তমান, ভবিষ্যতের নানা রকম বই ছাড়াও পশুপাখি, প্রাণী, কীটপতঙ্গ, পাহাড়, পর্বত, নদী-নালা, সাগর, মহাসাগর, আকাশ, মহাকাশ, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের বইসহ নানা রকম গল্প, নাটক, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ ও ছড়ার বই আছে। আরও আছে নানা ধরনের ম্যাগাজিন।

আরিক গত বছর বার্ষিক পরীক্ষা শেষে মামা বাড়িতে গিয়ে একটা মজার জিনিস জেনেছিল। একদিন দুপুরে সে চুপিচুপি ছোট মামার লাইব্রেরিতে ঢুকে তার বইগুলো দেখছিল। পড়ার টেবিলে একটি ম্যাগাজিন ভাঁজ করা ছিল। সে ম্যাগাজিনটি খুলে পড়তে লাগল। লেখা ছিল কিভাবে নিউ ইয়ার বা নতুন বর্ষবরণ এলো। বিষয়টা তার খুব ভাল লাগল। মনে মনে কৌতুহলী হয়। আরিক চেয়ারে বসে পড়তে আরম্ভ করল।

নিউ ইয়ার বা নতুন বর্ষবরণ উৎসবটি পৃথিবীতে বেশ পুরনো। প্রায় চার হাজার বছর আগে অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সাল থেকে নিউ ইয়ার বা নতুন বর্ষবরণ উৎসবের প্রচলন দেখা যায়। আজ যেখানে ইরান অবস্থিত সে এলাকার নাম ছিল ব্যাবিলন। নতুন বছরটি ব্যাবিলনের মানুষ নতুন চাঁদ দিয়ে হিসাব করত। অর্থ্যাৎ মুসলমানরা যেমন চাঁদ দেখে রোজা ও ঈদ করে বিষয়টি তেমন। সেখানে বছর শুরু হত বসন্তের শুরুতে।

ব্যাবিলনে বসন্তের শুরুতে ফসল হত, ফুল ফুটত। ফলে পুরো ব্যাবিলনের চেহারা পাল্টে যেত। নতুন রূপে ব্যাবিলন ধরা দিত মানুষের চোখে। যা নতুন বছরের শুরু হিসেবে চমৎকার। ব্যাবিলনে নিউ ইয়ার উদযাপন করা হত ১১ দিনব্যাপী। প্রতিদিনই আলাদা আলাদা উৎসবের মাধ্যমে নিউ ইয়ার বা বর্ষবরণ পালন করা হতো।

পরবর্তীতে রোমানরা মার্চের শেষে নিউ ইয়ার উৎসব পালন করতে শুরু করল। প্রত্যেক সম্রাট নিজেদের মতো আলাদা আলাদা উৎসব পালন করত এবং নিজেদের মতো ভিন্ন ভিন্ন ক্যালেন্ডার তৈরি করায় নিউ ইয়ার বা নববর্ষের দিনটি বদলে যেতে লাগল।

সাধারণত চাঁদ ও সূর্যের হিসাবে বছর গোনা শুরু হল। খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩ সালে জানুয়ারি মাসে বছর গণনা শুরু হলেও পরবর্তীতে তা বদলে যায়। পরবর্তীতে খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে সম্রাট জুলিয়াস সিজার ১ জানুয়ারিকে নতুন বছরের সূচনা হিসেবে চালু করেন।

তারপর, বিভিন্ন ধর্মীয় কারণে নিউ ইয়ার উৎসব পালন জটিল রূপ ধারণ করে। বর্তমানে যে নিউ ইয়ার বা নতুন বর্ষবরণ উৎসব পালন করা হয় তা মলূত চালু হয় ৪০০ বছর আগে।

নিউ ইয়ার বা বর্ষবরণে একটি বড় আর্কষণ থাকে সারা বছরের জন্য একটি রেজুলেশন। এক বা একাধিক প্রতিজ্ঞা করা। একজন ব্যক্তি নতুন বছরে এসে ঠিক কী কী করবে তা ঠিক করে নিত। যেমন- কেউ এ বছর নিজের শরীরের ওজন কমাবে, কেউ বাবা-মার সঙ্গে ঘুরতে যাবে এইসব।

তবে ব্যাবিলনে মানুষের একটি সাধারণ ব্যাপার ছিল ঋণ করা বা ধার নেওয়া কৃষি উপকরণ ফেরত দেওয়া। তাছাড়া দেশে দেশে নিউ ইয়ার উপলক্ষে নানা রকম খেলাধুলা বা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো। প্রাচীন মিশরে নিউ ইয়ারের সময় একটি শিশুকে নিয়ে আনন্দ করা হতো। পরে এসব ধারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেশে ছড়িয়ে পরে এবং আজ অবধি প্রচলিত আছে।

নিউ ইয়ারে বা নববর্ষে মানুষ বিশ্বাস করত, নতুন বছরের প্রথম দিনে যে কাজ করবে বা যে খাবার খাবে সেই কাজটি সারা বছর করতে হবে বা সেই খাবার খেতে হবে। এই ধারণাগুলোও বহু দেশে বহু যুগ যুগ ধরে প্রচলিত হয়ে আসছে। আজও অনেক সমাজে এই বিশ্বাস নিয়ে নিউ ইয়ার পালন করা হয়। তবে এসব কথার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বললেই চলে।

গত বছর মামার লাইব্রেরিতে ম্যাগাজিনে নিউ ইয়ার বা বর্ষবরণ উৎসবের ইতিহাস জেনে আরিকের খুব ভাল লেগেছিল। এই বছর মামা বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে বড় মাঠে খেলাধুলা আর মামার লাইব্রেরিতে মজার মজার বই পড়ার কথা মনে হতেই মনটা চনমনে হয়ে উঠল।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!