একদিন যাদুকর জানতে পারে তার পছন্দের মেয়েটি তারই রাজ্যের এক যাযাবর ছেলের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। যাদুকরতো রেগে আগুন। সে রাগে ক্ষোভে ছেলেটিকে প্রজাপতি বানিয়ে দেয়।
ঘটনাটি মেয়েটির অজানা ছিল। সেদিন বিকেলে মেয়েটির সঙ্গে ছেলেটির দেখা করার কথা। মেয়েটি তার কক্ষে বসে ছেলেটির জন্য অপেক্ষারত। এমন সময় দরজায় শব্দ হয়। একটা শিহরণ অনুভব করে সে। পেছন ফিরে তাকায়। কই কেউ তো নেই। কেবল একটি প্রজাপতি তার চারপাশ ঘিরে উড়ছে।
তাহলে কি তার প্রেমিক পুরুষটি আজ আসবে না! সে তো কথা দিয়েছিল তাকে। এমন সময় দরজার বাইরে যাদুকরের অট্টহাসি শোনা যায়। মেয়েটি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।
যাদুকর দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। মেয়েটি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।
কি, কার জন্য অপেক্ষা করছিলে প্রেয়সী ? সে তো আর আসবে না।
(প্রজাপতিটি এসময় মেয়েটির পেছনে লুকিয়ে পড়ে)
শোন কন্যা, বিয়ের জন্য প্রস্তুত হও। কাল আমি আবার আসবো। এই বলে যাদুকর চলে যায়। এমন সময় মেয়েটি তার কক্ষে ছেলেটির কণ্ঠ শুনতে পায়। এই তো আমি প্রিয়। আমায় শুনতে পাচ্ছো? এই তো আমি। দেখতে পাচ্ছো আমাকে?
মেয়েটি তার কক্ষে এদিক ওদিক ছেলেটিকে খুঁজতে থাকে। ব্যালকনিতে ছুটে যায়। কই কোথাও তো নেই! শুধু প্রজাপতিটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব তার কক্ষে নেই। তাহলে কি প্রজাপতিটিই তার প্রিয়! মেয়েটি নিশ্চিত হয় প্রজাপতিটিই তার প্রিয় প্রেমিক পুরুষ। মেয়েটি তার কক্ষ ও ব্যালকনি ফুল, লতাপাতা দিয়ে সাজিয়ে তোলে যেন প্রিয় প্রজাপতিটি তার কাছাকাছিই থাকে।
পরদিন সকালবেলা। শয়তান যাদুকর কিছুক্ষণ পরই আসবে। তাকে আজকের মধ্যেই কিছু একটা করতে হবে। না হলে প্রিয় প্রজাপতিটির জীবন যে কোন মুহূর্তে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। মেয়েটি জানে হীরকখচিত ওই দণ্ডটিই যাদুকরের যাদুর মূল উৎস। ওই দণ্ডটি তাকে যে কোন ভাবেই হাত করতে হবে।
এমন সময় দূর থেকে যাদুকরের অট্টহাসির শব্দ শোনা যায়। মেয়েটি প্রজাপতিটিকে সাবধানে লুকিয়ে পড়তে বলে।
যাদুকর কক্ষে প্রবেশ করে।
কেমন আছো সুন্দরী ?
হে রাজাধিরাজ, অন্ধকার জগতের অধিপতি, আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। আমি প্রস্তুত।
বাহ চমৎকার! তবে রথে উঠার জন্য প্রস্তুত হও।
হে মহান অধিপতি, আমার কিছু প্রার্থনা ছিল।
কী বলো। নির্দ্বিধায় বলতে পারো। আজ তোমার সমস্ত ইচ্ছাই পূর্ণ হবে।
হে মহান রাজা, আমার জানতে ইচ্ছে করে আপনি আমাকে কতটুকু ভালবাসেন!
বলো, কিভাবে তার প্রমাণ দিতে হবে?
আমি চাই আমার কক্ষের সমস্ত কিছুই আপনার আমার মতো প্রাণ ধারণ করুক।
এটাতো সামান্য বিষয় মেয়ে। তুমি এর পরিবর্তে অন্য কিছু চাইতে পারো। হীরে, জহরত, মুক্তো...
না প্রভু, আমি এগুলো চাই না। আপনি আমার ওই ইচ্ছেটুকুই পূরণ করুন।
আচ্ছা তবে তাই হোক। তোমার ইচ্ছাই পূরণ হোক। কিন্তু তোমার কক্ষের সমস্ত কিছুই প্রাণ পাবে না। কক্ষে যদি কোনো প্রাণী থাকে সে যতই ছোট হোক তারাই শুধু পরিপূর্ণ মানুষ হবে আর বাকিরা জড় মানুষে পরিণত হবে।
প্রভু আমার আর একটা ছোট আর্জি আছে।
কী বলো?
প্রভু আমি দেখতে চাই, আপনি চোখবন্ধ অবস্থায় কতো শক্তিশালী!
ও, এ বিষয়। এ তো সামান্য বিষয়। দাও আমার চোখ বন্ধ করে।
মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে এক টুকরো কাপড় দিয়ে যাদুকরের চোখ বন্ধ করে দেয়। যাদুকর তখন তার হাতের দণ্ডটি দিয়ে সব কিছুকে মানুষে পরিণত করে। প্রজাপতিটি মানুষ হয়ে ওঠে। কক্ষের ভেতর তখন মানুষ হয়ে ওঠা অন্য প্রাণিগুলোর ধাক্কায় যাদুকর পড়ে যায়। দণ্ডটিও হাত থেকে ফসকে যায়।
মেয়েটি এই সুযোগে দণ্ডটি হাতে নেয়। সে যেন একটা অদ্ভুত শক্তি শরীরে অনুভব করছিলো। যাদুকর চিৎকার করতে থাকে তার দণ্ডটি ফিরে পাবার জন্য। মেয়েটি কী করবে বুঝতে পারছিলো না। প্রেমিক ছেলেটি তখন দণ্ডটি কেড়ে নিয়ে উড়ন্ত রথকে তাদের অন্য দেশে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |