অপরূপ খৈয়াছড়া ঝর্ণা

ছুটির দিন। কার না মন চায় বেড়াতে? তাই বন্ধুরা ঠিক করলাম খৈয়াছড়া ঝর্ণা দেখতে যাবো। যে-ই ভাবা সেই কাজ।

আজহার মাহমুদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Nov 2019, 10:09 AM
Updated : 1 Nov 2019, 10:09 AM

সবাই মিলে গাড়ি ঠিক করলাম। চট্টগ্রামের একেখান থেকে নোয়াখালীগামী একটি বাসে উঠলাম। এক ঘণ্টা আগেই আমরা পৌঁছলাম খৈয়াছড়া যাওয়ার মূল রাস্তায়। এটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে র্পূবদিকে। মূল সড়ক থেকে পূর্বদিকে প্রায় অনেক পথ যেতে হবে।

রাস্তার পাশেই কিছু সিএনজি আছে। তারা অর্ধেক রাস্তা পর্যন্ত যায়। প্রতিজন ভাড়া ১৫ টাকা। আমরাও অর্ধেক পথ গাড়িতে করে গেলাম। গাড়ি থেকে নামতেই দেখি কিছু লোক ছোট ছোট বাঁশ বিক্রি করছে। যারাই ঝর্ণার দিকে যাচ্ছে সবার হাতেই বাঁশ। আমরাও পাঁচ টাকা দিয়ে কিনে নিলাম বাঁশ। এই বাঁশ ছাড়া আপনি হাঁটতে পারবেন না। যত ভেতরে যাবেন তত গভীর কাদা মাটি। সেইসঙ্গে ঝর্ণার পানির স্রোত। সবমিলিয়ে আপনার ভারসাম্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই খৈয়াছড়া যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই হাতে একটা করে শক্ত লাটি কিংবা বাঁশ নিয়ে যেতে হবে।

আমরাও একইভাবে এগুচ্ছি। যেখানে গাড়ি নামিয়ে দিয়েছে সেখান থেকে খাবারের হোটেল পর্যন্ত পৌঁছতে আরও পাঁচ মিনিট হাঁটতে হবে। এরপর এসব হোটেলে দুপুরের খাবার অর্ডার করে যেতে হয়। মোবাইল, ব্যাগ সবকিছু হোটেলের লকারে জমা রেখে যেতে পারবেন। আমরাও তাই করেছি।

এরপর শুরু হলো মূলপর্ব। হোটেলের লোকজনকে জিজ্ঞেস করলাম এখান থেকে ঝর্ণার কাছাকাছি যেতে কতক্ষণ লাগবে? ওনারা বলেন, দ্রুত গেলে আধ ঘণ্টা লাগবে। এরপর আমরাও দ্রুত ছুটতে লাগলাম। যত যাচ্ছি তত কঠিন পথ। কোথাও ঝর্ণার পানি, কোথাও হাঁটু পর্যন্ত কাদা। অনেকে আবার পিচ্ছিল কাদায় স্লিপ খেয়ে পড়ে গেছে। খুব সর্তকভাবে পা দিতে হয়। পাহাড়ের মাটিগুলো এতো শক্ত যে মনে হচ্ছে পাথর।

যেতে যেত কখনও ঝর্ণার পানির স্রোত দেখে মন জুড়ায়, কখনও পাহাড়ের কঠিন পথ দেখে চ্যালেঞ্জ নিই। মজার বিষয় হচ্ছে যাওয়ার পথে আমরা অনেকগুলো পাখি আর বানর দেখেছি। এতো সুন্দর বানরগুলোকে দেখে ভীষণ আনন্দ লাগবে যে কারো। চিড়িয়াখানার বানর আর খোলা বনের বানর দেখার মধ্যে তফাৎ আছে।

এভাবে একসময় চলে এলাম প্রথম ঝর্ণায়। ওহ! আপনাদের তো বলাই হয়নি। এখানে অনেকগুলো ঝর্ণা রয়েছে। বিভিন্নজনের কাছে বিভিন্ন মত পেয়েছি। কেউ বলে সাতটা, আবার কেউ বলে এগারটা ঝর্ণা রয়েছে। তবে প্রথম ঝর্ণাটা নিচে বলে সবাই একটু কষ্ট করলেই দেখতে পারে। এরপরের ঝর্ণাগুলো দেখতে হলে অনেকটা ঝুঁকি নিতে হবে। কারণ দ্বিতীয় ঝর্ণা থেকে সবগুলো পাহাড়ের উপর। যত উঁচুতে যাবেন তত ঝর্ণা।

বৃষ্টির দিন সবকিছু পিচ্ছিল। প্রথম ঝর্ণায় প্রচুর মানুষ। কারণ এতোটুকুই আসে বেশিরভাগ মানুষ। পর্যটকদের ৯৫ শতাংশ এখান থেকেই তৃপ্তি নিয়ে ফিরে যায়। তবে প্রথম ঝর্ণাটা দেখতে বেশ। আকারেও বড় মনে হচ্ছে। ঝর্ণার পানির গতি প্রচুর। মানুষও অনেক। বেশ উৎসব উৎসব মনে হচ্ছে। আমার সঙ্গে এসেছে দশজন। যার মধ্যে চারজন সিদ্ধান্ত নিলাম বাকি ঝর্ণাগুলো দেখবো। অন্যরা সাহস করতে পারছে না। কয়েকজন পাহাড়ের অর্ধেক উঠে আবার ফেরত গিয়েছে।

যাই হোক, ওখান থেকে আমাদের খৈয়াছড়া ঝর্ণার মূল ট্র্যাকিং শুরু করতে হলো। পাহাড়ের গাছগুলোর সঙ্গে মোটা মোটা রশি বাঁধা রয়েছে। রশিগুলো দেখে বুঝা যাচ্ছিলো অনেক পুরাতন। নিচ থেকে সেই রশিগুলো ধরে ধরে উঠতে থাকলাম উপরে। কিছুপথ উঠে দেখি আর রশি নেই। এরপর বাঁশ আর গাছ ধরে ধরে উঠতে থাকলাম। উঠতে উঠতে হাঁপিয়ে গেলাম।

মাঝপথে একটু জিরিয়ে নিলাম। এরপর আরও উপরে উঠলাম। মানুষের হাঁটার চিহ্ন দেখে বুঝতে পারলাম ঝর্ণা আশপাশেই আছে। একটু পর ঝর্ণার পানির শব্দ। খুশিতে লাফাচ্ছি। ঝর্ণার কাছে গেলাম। পানিতে ভিজলাম। প্রকৃতিটাও বেশ সুন্দর। পাহাড়ের অনেক উপরে। এখানেও দেখলাম ৫/৬ জন ছেলে। ওরা এসেছে কুমিল্লা থেকে। ওদের জিজ্ঞেস করলাম, এটা কয় নম্বর ঝর্ণা? ওরা বললো, পাঁচ নম্বর ঝর্ণা। আমরা তখন অবাক। তাহলে বাকিগুলো কি ফেলে এলাম! 

এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আর উপরে যাবো না। নিচে নেমে পরের ঝর্ণাগুলো উপভোগ করে বাড়ি ফিরবো। নিচে নেমে পেলাম চতুর্থ ঝর্ণা। এখানে অনেকটা সময় ছবি তুলেছি। তবে চারপাশে বেশ অন্ধকার অন্ধকার। একা থাকলে যে কেউ ভয় পাবে দিনের বেলায়ও। 

চতুর্থ ঝর্ণা থেকে তৃতীয় ঝর্ণায় নামতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। নামার অবস্থা নেই বললেই চলে। আর পাহাড়ের মাটিগুলো মাটি না বলে পাথর বললেও ভুল হবে না। খুব কষ্টে তৃতীয় ঝর্ণায় আসলাম। এখানকার প্রকৃতি উপভোগ করলাম। তবে এ ঝর্ণার পানিগুলো বেশ ঠাণ্ডা। চারপাশের দৃশ্য ছিলো অসাধারণ। পাহাড়ের উপর থেকে পুরো শহরটা কত সুন্দর লাগছে সেটা বলে বুঝানো যাবে না। এরপর নিচে নামতেই পেলাম দ্বিতীয় ঝর্ণা। দেখেই মন জুড়ালো।

দ্বিতীয় ঝর্ণায় বেশ কয়েকটি ছবি তুলে নেমে এলাম সেই প্রথম ঝর্ণায়। যেখানে সবাই রয়েছে। নিচে নেমে ভাবছি, সৃষ্টির্কতার কি সুন্দর সৃষ্টি। কি অদ্ভুত! আমাদের চারপাশে কত সুন্দর স্থান রয়েছে। আমরা চাইলেও যা উপভোগ করতে পারি না। এরপর সবাই মিলে হোটেলে এলাম। বিকেল পাঁচটায় আমরা দুপুরের খাবার খেতে বসলাম। খাওয়া শেষ করে আবার সেই আগের কায়দায় বাড়ি ফিরে এলাম।

কিভাবে যাবেন: চট্টগ্রাম শহরের একেখান থেকে ঢাকা, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন লোকাল বাসে ৫০ থেকে ৮০ টাকার মাধ্যমে খৈয়াছড়া রাস্তার মুখে নামবেন। গাড়ির হেলপারকে বললেই নামিয়ে দিবে। একইভাবে ঢাকার যেকোনো বাস কাউন্টার থেকে চট্টগ্রামগামী বাসে উঠবেন। যাওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে চট্টগ্রামের মিরসরাই পার হয়ে বড়তাকিয়া বাজারের আগে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নামবেন।

ওখানে নেমে স্থানীয় লোকদের জিজ্ঞাসা করলেই তারা বলে দেবে কোন পথে যেতে হবে। লোকজন যে রাস্তা দেখিয়ে দেবে ওই রাস্তার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা সিএনজিগুলোতে ১৫ টাকা দিয়ে অর্ধেক রাস্তা পর্যন্ত যায়। সিএনজিগুলোর কাজ শুধু এটাই। বাকি পথ হেঁটে যেতে হবে। ঝর্ণায় যাওয়ার রাস্তা একটিই, আর পথে আরো অনেক অ্যাডভেঞ্চার-পিয়াসীর দেখা পাবেন, কাজেই পথ হারানোর ভয় তেমন একটা নেই বললেই চলে।

কোথায় থাকবেন: বড়তাকিয়া বাজারে থাকার কোন হোটেল নেই। কিন্তু আপনি চাইলে চেয়ারম্যানের বাংলোয় উঠতে পারেন। এছাড়া মিরসরাই বা সীতাকুণ্ডে আপনি থাকার জন্য বেশ কিছু স্থানীয় হোটেল পাবেন। মিরসরাই বা সীতাকুণ্ডে খাওয়ার জন্য অনেক রেস্টুরেন্টও পাবেন। অথবা আপনি চট্টগ্রাম শহরে চলে আসতে পারেন। বড়তাকিয়া বাজার থেকে গাড়িযোগে চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করলে থাকার অনেক ভালো মানের হোটেল রয়েছে। তাছাড়া অনেক রেস্তোরাঁও রয়েছে খাওয়ার জন্য।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com । সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!