ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ টুনটুনির গল্প

‘তোমরা হুনছনি গো হুনছনি ডালে ডালে ঘুইরা বেড়ায় বাসা ভাঙা টুনটুনি...।’ গ্রামগঞ্জের  তোমাদের মতো ছেলেমেয়েরা সুর করে এই বাক্যটি যখন বলে তখন শুনতে বেশ লাগে। তোমরাও অনেকসময় বলে থাক, মনে পড়ে!

>>আবু আফজাল সালেহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2019, 07:58 AM
Updated : 14 Sept 2019, 07:58 AM

আমাদের প্রিয় পাখিদের মধ্যে অন্যতম পাখি হচ্ছে টুনটুনি। তোমাদের কাছে টুনটুনি নামটি ব্যাপক পরিচিত। এ নামে কেউ ডাকলে তোমরাও খুশি হও। আজ এ পাখি নিয়েই আলোচনা করব।  বাচ্চাদের আদর করতেও আমরা টুনটুনি শব্দ ব্যবহার করে থাকি। আদরের জন্তুকেও টুনটুনি বলে ডেকে থাকি। বাবা মায়েরাও আদর করে সন্তানদের ‘টুনটুনি’ বলে সম্বোধন করে থাকে অনেক সময়। টুনটুনি পাখি থেকেই এসব পাওয়া।

এ পাখি দেখতে খুব সুন্দর এবং আকৃতি অনেক ছোট। বাড়ির আশপাশেই এদের দেখা যেত আগে। এখন অনেক কমে গেছে। এককালের সহজলভ্য ও সুন্দর হওয়ায় এ পাখি থেকেই আমরা গ্রহণ করেছি টুনটুনি শব্দ। আদরের সমার্থক হয়ে গেছে পাখির নামটি। টুনটুনির বাসা তৈরিতে নিপুণতা আছে। সুন্দর করে বাসা বানায় এরা। তাই এদেরকে ‘দর্জি পাখি’ বলা হয়। একসময় এদের সহজেই দেখা মিলত। এখন আর সহজে দেখা যায় না! টুনটুনি মানুষের কাছাকাছি থাকতে ভালবাসে।

এরা খুব সৌখিন। বিশেষ করে খাবারের বেলায়। পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে টুনটুনি। চঞ্চল প্রকৃতির পাখি টুনটুনি। কোথাও বসে থাকার সময় নেই। সারাদিন ওড়াউড়ি করতেই থাকে  টুনটুনি পাখি। এখান থেকে ওখানে, ওখান থেকে এখানে শুধু ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে আসা-যাওয়া করতেই থাকে। এরা সারাক্ষণ লতাগুলোর ফাঁক-ফোকরে লাফিয়ে বেড়ায়। ফুরুৎ করে উড়ে যায় এ পাখি। খুব চঞ্চল এ পাখি। ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ ওড়ে। দেখতেও খুব সুন্দর। ছোট এই পাখিটা খুব চালাক প্রকৃতির। চোখের পলকেই উড়ে যায় এরা। দুর হতে দেখলে মনে হয় যেনো তার লেজটা খসে পড়ছে।

এই ছোট পাখির দেখা মেলে ঝোঁপঝাঁড়ে বা বন-জঙ্গলে। ছোট গাছ কিংবা মাঝারি গাছে বাসা বাঁধে এরা। প্রথমে এরা দুটো পাতায় সেলাই করে নিপুণভাবে। তারপর পশমী জিনিস ব্যবহার করে বা তুলাও ব্যবহার করে। বাসা খুব ছোট। পাখিও ছোট। তাই তোমারা অনেক সময় সহজেই দেখতে নাও পেতে পার। নিপুণভাবে বাসা বানাতে জানে বলেই তাদের আর এক নাম ‘দর্জি পাখি’। অনেকের ধারণা টুনটুনির বাসা বাঁধা দেখেই মানুষের পূর্ব প্রজন্ম জামা-কাপড় ও বসতবাড়ি তৈরি করতে শেখে। টুনটুনিকে দর্জি পাখি বলা হয়। সূঁচের মত ধারালো ঠোঁট দিয়ে সুন্দর বুননে এরা তৈরি করে তার নিজের বাসা। দৃষ্টিনন্দন এই বাসা দেখে এটা যে ছোট্ট টুনটুনির তৈরি তা অবিশ্বাস্য মনে হলেও আসলে এর কারিগর কিন্তু টুনটুনিই।

টুনটুনিকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন- নীল টুনটুনি, বেগুন টুনটুনি, মৌটুসকি, মধুচুষকি, দুর্গা টুনটুনি, মধু চমকি ও মৌটুসি। টুনটুনি নাচিয়ে পাখি। ছোট টুনটুনির বাহারি রং খুব সহজেই দৃষ্টি কাড়ে। এরা ৬ থেকে ১০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় বাসা বাঁধে। ছোট গুল্ম জাতীয় গাছ অথবা ঝোপঝাড় ওদের পছন্দ। শিম, লাউ, কাঠ বাদাম, সূর্যমুখী, ডুমুর ও লেবু গাছে এরা বেশি বাসা বাঁধে। এরা বাসা বাঁধে বছরের ফালগুন মাস থেকে আশ্বিন মাসের মধ্যে। বাসা তৈরি শেষ হলেই ৪-৫ টি ডিম পাড়ে। টুনটুনি ডিমে তা দিয়ে ১০ দিনের মধ্যে বাচ্চা ফুটায়। আর দশ দিনের মধ্যেই বাচ্চাসহ বাসা ছেড়ে চলে যায় এরা।

বাংলাদেশের আনাচে কানাচে টুনটুনি পাখি নিয়ে কত গল্পগাঁথা যে আছে! যেমন ‘টুনটুনি টুনটুনাইল, সাত রানীর নাক কাটাইলো’ আরও কত কী! কিংবা টুনটুনির পিঠা খাওয়া। টুনটুনিকে নিয়ে কত গল্প কবিতাই না আছে!

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানাkidz@bdnews24.com । সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!