বাবার সাইকেলে চড়ে

হারিয়ে যাওয়া একটি বিকেলের কথা। প্রতিদিনের মতই গ্রীষ্মের ঝকঝকে রোদ, ছড়িয়ে পড়েছে মাঠ ও ক্ষেতজুড়ে সবখানে।

রিজভী নাভিনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2019, 07:20 AM
Updated : 28 July 2019, 07:20 AM

সাদা মেঘেদের ভিড়ে আকাশটা পূর্ণ ছিল। উত্তরের হাওয়ায় গ্রীষ্ম উজ্জ্বীবিত, আধ শুকনো নদীর বুকে গুচ্ছ গুচ্ছ কাশফুল দুলছে, পাশ দিয়ে যাচ্ছে ছোট দুটো-একটা নৌকো, রোদলাগা রুপোলি ঢেউয়ে মাঝির বৈঠা ও পানি এক হয়েও আলাদা হয়ে যায় বারবার।

দূরের কিছু পানকৌড়ি আর বক দলবদ্ধভাবে শাপলা কচুরিপানার ফাঁকে মুখ ডুবিয়ে কি যেন খুঁজছে। পুব থেকে উড়ে আসা আরও কিছু মরাল-মরালী যোগ দিল তাদের সঙ্গে। সব দৃশ্য নিতান্ত মূল্যহীন আমার কাছে। শুধু অপেক্ষা কখন যে আসবে বাবা!

গ্রামের ধুলোময় বাঁকা পথটা, নদী ঘেষে চলে গেছে বাড়ি থেকে সোজা হাটের দিকে, দুই পাশ আবৃত খেজুর ও তুঁত গাছে। ঘাটের পারে বড় শিমুল গাছটা দাঁড়িয়ে রয়েছে বহুকাল ধরে। প্রতিটা নৌকার দড়ি বাঁধা, তার শরীরে, আর সেও চুপ হয়ে পাহারা দিয়ে যাচ্ছে অনেক দিন, নিস্তার নেই যেন।

এই রাস্তার ধারেই প্রতীক্ষায় আছি আমি। আমার দাঁড়িয়ে থাকা, সময় হয়েছে বাবা ও তার সাইকেল আসার! কখন আসবে বাবা? কখন তুলবে সামনে ছোট করে পাতা সেই সিটে? সাইকেলে চড়বো বলে মন অস্থির।

হঠাৎ বাঁকা পথের লাইন ধরে ভেসে আসলো পরিচিতি সেই শব্দ, ক্রিং ক্রিং ক্রিং। যা স্নায়ুতে গেঁথে ছিল প্রতিটা সময়। কালের আবহে সেই শব্দটা ভুলে গেছি কখন, জানি না। আক্ষেপ ভরা দুই চোখে চেয়ে দেখি বাবা আসছে। সামনে ঝোলানো বাজারের ব্যাগ, কাছে এসে স্নেহের দৃষ্টিতে চেয়ে সাইকেলে তুলে নিলো আমাকে।

সাইকেল চলছে, আনন্দে পিছু ফিরে তাকাই। শিমুল গাছটা স্মিত, নির্বাক তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে, বিদায় জানানোর ভাষা নেই তার। আমরা চললাম, দুই পা ফেলে হাওয়ায়, সাইকেলে।

বিকেলের শেষ, পশ্চিমের সূর্য গড়িয়ে পড়লো। আর চলতে চলতে দিগন্ত ভেদ করে আবিরের মাঝে হঠাৎ বিলীন হয়ে গেলাম।

লেখক: পর্তুগাল প্রবাসী বাংলাদেশি

ই-মেইল: rizvynavin@gmail.com

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com । সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!