আমি গাড়িতে বসে আছি। ডানে বামে দেখছি। একটু দূরে একজন নারী বসে আছে। তার কোলে একটা ছোট্ট শিশু। দেখে মনে হচ্ছে নারীটির কোনো থাকার জায়গা নেই। কাগজের ঠোঙ্গা দিয়ে বাচ্চাটাকে বাতাস করছে।
বাচ্চাটা তবুও কাঁদছে। তার বয়স আনুমানিক ২ বছর, তার কমও হতে পারে। আমি তাদের দিকে তাকিয়ে আছি মনোযোগ দিয়ে। এতটাই মনোযোগ দিয়েছি যে রাস্তার জ্যাম ছুটে গেছে কিন্তু আমার মনোযোগ ছোটে না।
এদিকে প্রচণ্ড গরমে আমার শরীর ঘেমে গেছে। বলা যায় শার্ট ভিজে গেছে। এবার আন্দাজ করতে পারেন গরমের তাপ কতটা ছিলো। যাই হোক, আমার মনোযোগ ছিলো নারীটির দিকে। সে দেখতে খুবই রোগা ছিলো। তার সন্তানকে সে ঠোঙ্গা দিয়ে বাতাস করলেও সন্তান কাঁদছে। এমনভাবে কাঁদছে যে নারীটিও সহ্য করতে পারছে না। তাই এবার নারীটিও কাঁদছে।
একটু পর আমি লক্ষ্য করলাম নারীটি তার বাচ্চাকে মুখ দিয়ে ফুঁ দিয়ে বাতাস করছে। এবার মনে হচ্ছে বাচ্চা একটু শান্ত হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে নারীটিও গরমে অতিষ্ঠ। তার চোখেমুখে ভেসে উঠছে যন্ত্রণার ছায়া।
আমি তখনও নিশ্চুপ দেখছি। মনে মনে ভাবছি কী করতে পারি? এর মধ্যে ভাবছি, আমরাতো হরহামেশা মানবতা, মনুষ্যত্ব নিয়ে আলোচনা করি। বাস্তবে সেটা কতটুকু পালন করি! এসব কথা ভাবতে ভাবতে নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। গাড়ি থেকে নেমে নারীটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। মানে টাকা চাইছে।
আমি তখন বললাম, ‘এই নেন ১০০ টাকা। একটা হাতপাখা কিনে বাচ্চাকে বাতাস কইরেন।’ নারীটি অনেক খুশি হয়ে জবাব দিলো, ‘ঠিক আছে বাবা।’
কিন্তু নারীটি হাতপাখা কিনবে না। কারণ সারাদিন ভিক্ষা করে যা টাকা পায় তা দিয়ে তার আর তার বাচ্চার খাবারের খরচ হয় না। হাতপাখা কিনবে কোন সুখে!
এমন চিন্তা আমার ভেতরও চলছে। তখন আমি বাণিজ্যমেলায় যাচ্ছি। যাওয়ার সময় ভাবলাম, নারীটির জন্য একটা হাতপাখা কিনবো। বাসায় যাওয়ার সময় দিয়ে যাবো। যেই ভাবা সেই কাজ। মেলায় গিয়ে একটা সুন্দর হাতপাখা কিনলাম। দাম ২৪০ টাকা। এটা ছোট করে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখা যায়। তাই দামও একটু বেশি। অনেক দরদাম করে ২৪০ পর্যন্ত রাখলো। একটু আনন্দ নিয়েই যাচ্ছিলাম নারীটির কাছে। ভালো কিছু করেছি বলে একটু আনন্দ হচ্ছে।
কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে দেখি যে স্থানে নারীটিকে ১০০ টাকা দিয়েছিলাম সেখানে সে নেই। পুরো এলাকাতেই খুঁজেছি অনেক। প্রায় ২০-২৫টা দোকানে নারীটির সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। কেউ সঠিক কিছু বলতে পারলো না।
রাত যখন ১১টা তখন বাসা থেকে বাবার ফোন আসলো। এত রাত পর্যন্ত বাইরে থাকি না কখনও। তাই বাবা একটু বকাও দিলো।
তাড়াতাড়ি বাসার দিকে রওনা দিলাম। সেই সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নারীটির খোঁজ করেও পেলাম না। মনটা আমার বিষাদে ভরে গেলো। খুব খারাপ লাগছে। বাসায় গিয়েও মাথায় একই বিষয় নিয়ে ভাবছি। বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই আমাকে দেখে বুঝতে পেরেছে আমি চিন্তিত। তাই তারা খুব গুরুত্ব দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে, আমার কী হয়েছে। আমি সারাদিনের কথা তাদের খুলে বলি।
এরপর আমার বাবা-মা আমাকে সান্ত্বনা দেয়। বাবা বলেন, কপালে থাকলে আবারও দেখা হবে। এটা নিয়ে চিন্তা করলে কোনো লাভ হবে না। তবুও চিন্তাটা মাথায় থেকে গেলো। হাতপাখাটিও আমার ব্যাগে থেকে গেলো। আজও আমি নারী ও তার বাচ্চাটাকে খুঁজি, হাতপাখাটি দেবো বলে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ওমরগণি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com । সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |