মওলানার গল্প: বেনে ও তার তোতা

বই: দ্য পেরোট অ্যান্ড দ্য মার্চেন্ট, লেখক: মওলানা জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি (১২০৭ - ১২৭৩), মূল ফার্সি থেকে ইংরেজি অনুবাদ: পিপ্পা গুডহার্ট, অলঙ্করণ: মারজান ভাফাইয়ান, প্রকাশনি: টিনি ওউল পাবলিশিং লিমিটেড, যুক্তরাজ্য। এটি মূলত ফার্সি কবি রুমির বই ‘মসনবি’র একটি কবিতা।

মাজহার সরকারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2019, 09:25 AM
Updated : 19 May 2019, 09:25 AM

এক দেশে ছিলো এক বেনে। তার ছিলো এক কথাবলা তোতা পাখি, সেই পোষা তোতাকে সে খাঁচায় বন্দি করে রেখেছিলো।

একদিন বেনে সিদ্ধান্ত নিলো ব্যবসার কাজে সে ভারতবর্ষ ভ্রমণে যাবে। যাওয়ার আগে সে তার দাস-দাসীদের কাছে জানতে চাইলো তারা ভারতবর্ষ থেকে কী কী উপহার চায়। একেকজন একেক কিছু চাইলো। কেউ চাইলো এক টুকরো রেশম, কেউ চাইলো পিতলের একটি মূর্তি, আবার কেউ চাইলো মুক্তোর মালা।

তোতার কাছে বেনে জানতে চাইলো ভারতে তার আত্মীয়-স্বজনের কাছে খবর পাঠাতে চায় কিনা। তোতা বেনেকে বললো, সে যে এই দূর দেশে খাঁচায় বন্দি আছে এটা যেনো তার ভাই-বন্ধুকে জানানো হয়।

তোতা বললো, ‘আমার ভাইদের জানিও আমি তাদের কথা ভুলিনি। দিনের আলো ফোটার আগে কুয়াশায় আর রোদের মধ্যে একসঙ্গে উড়ে যাওয়ার কথা মনে পড়ে আমার। মনে পড়ে আমরা দলবেঁধে এক গাছ থেকে উড়ে গিয়ে আরেক গাছে বসতাম।’

‘তাদের বলো, আমার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে গেছে আমি। তারা যেনো আমার কথা স্মরণ করে শোকসভা করে।’

‘তাদের বলো, গাছের ডালে বসে আমাদের পরস্পরের ঝগড়া-ঝাটির কোলাহল ছিলো পৃথিবীর যে কোনো সঙ্গীতের চেয়ে সেরা সঙ্গীত।’

‘তাদেরকে বলো, তোমাদের এক ভাই এই দূর দেশে বন্দি জীবন কাটাচ্ছে। সে মুক্তি চায়, মুক্তি পেয়ে ভারতবর্ষে তার জ্ঞাতি ভাইয়ের কাছে ফিরে আসতে চায়।’

তোতাকে বেনে কথা দিলো যে তার এই খবর সে পৌঁছে দেবে। ভারতে পৌঁছেই বেনে তোতা পাখির একটা ঝাঁক দেখতে পেলো, আর চেঁচিয়ে বললো, ‘তোমরা থামো! থামো! তোমাদের জন্য তোমাদের এক ভাই খবর পাঠিয়েছে।’

বেনে তার পোষা তোতার বন্দি থাকার খবর পৌঁছে দিলো। একথা শোনামাত্র তোতার ঝাঁকের মধ্যে একটা তোতা টুপ করে মাটিতে পড়ে গেলো। পড়ে গিয়ে তড়পাতে তড়পাতে মারা গেলো।

বেনে মনে মনে বললো, ‘আহা! এটা আমি কী করলাম! এই তোতাটা নিশ্চয়ই আমার পোষা তোতার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। ভাইয়ের বন্দি থাকার শোকে সে মরেই গেলো! দেশে পৌঁছে তার মৃত্যুর খবরটা জানাতে হবে।’

বেনে খুব মন খারাপ করলো, এমন বাজে খবর দেওয়ার জন্য নিজেকে অপরাধী ভাবলো। আত্মীয় স্বজনের জন্য নানা উপহার উপটৌকন নিয়ে দেশে ফিরে এলো বেনে।

এসে পোষা তোতার কাছে গেলো। তোতা বললো, ‘বলো আমার ভাইয়েরা আমার কথা শুনে কী বললো?’

বেনে বললো, ‘আমি বলতে পারবো না। সে ভারি দুঃখের কথা।’

তোতা বললো, ‘না, তোমাকে বলতেই হবে। আমার খবর শুনে কী জানিয়েছে তারা?’

বেনে জানালো তার বন্দি থাকার খবর শুনে একটা তোতা তখনই মাটিতে পড়ে মারা গেছে।

এই খবর শোনামাত্র বেনের পোষা তোতা খাঁচার ভেতর তড়পাতে তড়পাতে নিস্তেজ হয়ে গেলো।

এবার নিজের পোষা তোতার মৃত্যুতে আরও মন খারাপ হলো বেনের। সে খাঁচার দরজা খুলে তোতার মরা দেহটা বের করে আনলো আর বাইরে ছুড়ে ফেললো।

যেই না তোতাতে বাইরে ছুড়ে ফেলা হলো এমনই তোতা তার জীবন ফিরে পেলো আর পা মেলে উঠে দাঁড়ালো। তারপর ডানা ছড়িয়ে উড়ে গেলো।

পেছন থেকে বেনে চিৎকার করে জানতে চাইলো, ‘তোমার জ্ঞাতি ভাই তোমার কাছে কী সাংবাদ পাঠিয়েছিলো, আমাকে বলে যাও।’

মুক্ত হয়ে যাওয়া তোতা ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে বললো, ‘আমার ভাইটি আমাকে মরে যাওয়ার ভান করার পরামর্শ দিয়েছে, যেনো আমি বন্দি খাঁচা থেকে পালাতে পারি।’

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com । সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!