শিশুরা রাতে কেনো কাঁদে?

হঠাৎ আপনার পাঁচমাস বয়েসী শিশুটি চিৎকার করে কান্না শুরু করলো, সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত সে একটানা কেঁদেই যাচ্ছে। কোনোভাবেই শান্ত হচ্ছে না।পর পর সাত-আটদিন ধরে এই ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে!

>>বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2019, 04:00 AM
Updated : 17 Jan 2019, 04:00 AM

দুই থেকে ছয় মাস বয়েসী প্রায় ২০-২৫% শিশুর একটি সাধারণ চিত্র এটি- টানা কিছুদিন ধরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো কারণ ছাড়াই কান্না। ছোটশিশুর এরকম কান্নাকাটি পরিবারের অন্যদের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়। বারবার ডাক্তারের কাছে শরণাপন্ন হচ্ছেন, কোনো শারীরিক কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ডাক্তার বুঝিয়ে দেবার পরও আপনার মন মানছে না।

আশপাশের কোনো কুসংস্কারাচ্ছন্ন প্রতিবেশী কিংবা বয়োজ্যেষ্ঠ কারো কথায় আপনিও বিশ্বাস করতে শুরু করলেন- শিশুটির উপর জিন-ভূতের উপদ্রব হয়েছে! নইলে প্রতিদিন একই সময়ে কান্নাকাটি করছে কীভাবে- শিশুতো আর ঘড়ির সময় বোঝেনা! ব্যস, শুরু করে দিলেন তাবিজ- কবজ, ঝাড় ফুঁক চিকিৎসা! বাংলাদেশ তথা গোটা ভারতীয় উপমহাদেশেই এই প্রথা চালু আছে!

আর নয় ঝাড়ফুঁক, বারবার ডাক্তারের কাছেও নয়, নিজেই জেনে নিন কেনো হচ্ছে এ ঘটনা!

কোলিক: 

শিশুদের প্রতিদিন এই নির্দিষ্ট সময় ধরে কান্নাকাটিকে বলা হয় কোলিক বা ইনফ্যান্টাইল কোলিক।

লক্ষণ সমূহ:  

এই কান্নাকাটিকে কোলিক বলতে হলে অবশ্যই নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো পূরণ করতে হবে-
– শিশুর বয়স ২-৬ মাসের মধ্যে। তবে দুই সপ্তাহের এবং ছয় মাসের বেশি বয়েসী শিশুদেরও হতে পারে।
– প্রতিদিন তিন ঘণ্টার বেশি করে পরপর তিনদিন কিংবা সপ্তাহে তিনদিন করে তিন সপ্তাহ।
– প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে কান্না। সাধারণত বিকেল থেকে রাতের মধ্যে।
– কোনো দৃশ্যমান সময় খুঁজে পাওয়া যাবে না ডাক্তারের কাছে গেলে।
– কান্নার সময় শিশু সাধারণত অস্থিরতা দেখায়। এছাড়াও হাঁটু ভাঁজ করে পেটের দিকে রাখে, মুখমণ্ডল লাল, কপালে ভাঁজ এবং হাত শক্ত করে মুঠি করা থাকে।

কারণ:
ছেলে মেয়ে উভয় শিশুই কোলিকে আক্রান্ত হয়। উল্লেখিত ২০-২৫% এর মধ্যে ৫% শিশুর শারীরিক সমস্যা খুঁজে পেতে পারেন ডাক্তার। তবে বেশির ভাগেই কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এসব ক্ষেত্রে কিছু মতবাদ বা অনুমান কারণ হিসেবে ধরা হয়। যেমন-

১. খাবারের সঙ্গে গিলে ফেলা বাতাস। পেটে অস্বস্তি সৃষ্টি করে বলে ধারণা করা হয়, যদিও তা সাধারণত পায়ুপথে বের হয়ে যায়।
২. শিশুর খাবারের মাধ্যমে হতে পারে- মিল্ক প্রোটিন অ্যালার্জি, মিল্ক প্রোটিন ইনটলারেন্স, ল্যাকটোজইন টলারেন্স, ল্যাকটোজ ওভারডোজ

৩. এছাড়াও আয়রন জাতীয় খাবারের কারণে হতে পারে। আয়রন পেটে গ্যাস তৈরি, কোষ্ঠকাঠিন্য ঘটায়

৪. মায়ের খাবারের কারণে। এসব খাবার যদি হয়- পেটে গ্যাস তৈরি করার মতো সোডা যেমন কোমল পানীয়, ক্যাফেইন যেমন চা-কফি, মায়ের অ্যালার্জি হয় যেসব খাবারে।

৫. পেটের সমস্যা- রিফ্লাক্স বা রিগারজিটেড স্টোমাক কনটেন্ট, গ্যাস্ট্রো-কোলিক রিফ্লেক্স

৬. কোষ্ঠকাঠিন্য

৭. ঠিক মতো খাবার হজম না হওয়া

৮. শিশুকে ঠিকমতো কোলে না নেয়া থেকে স্ট্রেস।

৯. শিশুর খিটখিটে মেজাজ।

১. স্নায়ুর সংবেদনশীলতা।

১০. ঘুম না হওয়া।

১১. ভ্যাগাস নার্ভের উপর কোনো কারণে কশেরুকার চাপ।

১২. অন্যান্য কারণ, যেমন- মুখের ভেতরের ইনফেকশন, দাঁতের মাড়িতে ব্যথা, চামড়ার গভীরের র‍্যাশ

চিকিৎসা ও করণীয়:

যেহেতু কোলিক এর সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না, তাই এর নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। সাধারণত খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং সম্ভাব্য কারণগুলো এড়িয়ে চলতে বলা হয়। তবে অবস্থা বুঝে চিকিৎসক কিছু অ্যান্টি কোলিক মেডিসিন যেমন অ্যান্টিহিস্টামিন, অ্যান্টিস্পাজমোটিক, সিডেটিভ, অ্যান্টাসিড ইত্যাদি সাজেস্ট করতে পারেন।

যেহেতু কোলিক একটি প্রায় স্বাভাবিক ঘটনা, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয়। নির্দিষ্ট সময়ে এটি বন্ধ হয়ে যায়। শিশুকে এসময়ে যথাসম্ভব রিল্যাক্সড রাখতে হবে। কান্না থামাতে অবশ্যই তাকে প্রবল বেগে ঝাঁকানো যাবে না। এতে শিশুর ব্রেন ড্যামেজ হবার সম্ভাবনা থাকে।

এই লেখাটির সর্বস্বত্ব টগুমগু কর্তৃক সংরক্ষিত। টগুমগু প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রেগন্যান্সি ও প্যারেন্টিং বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করে যাচ্ছে। টগুমগুর নিজস্ব প্যারেন্টিং ব্লগ ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুমতি না নিয়ে লেখাটি অন্য কোথাও প্রকাশ অথবা বাণিজ্যিক ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!