এই মুহূর্তে ফেরেশতার সাথে মোচোমোচো খেলছে। ফেরেশতা সাহেবের সফেদ দাঁড়ি ধরে সে ঝুলছে। বিশাল দাড়ির ভিতরে একশ মোচোমোচো লুকিয়ে থাকতে পারে। দাড়িতে লুকাচ্ছে আর মোচোমোচো বলছে -টুকি, আমি কোথায় বলোতো দেখি! ফেরেশতা সাহেব দাড়ি হাতড়ে তাকে খুঁজে বের করছেন।
মোচোমোচো খিলখিল করে হাসছে। তার গা দিয়ে ভুরভুর করে বেহেশতি গন্ধ বের হচ্ছে। বলা হয় ঈশ্বর নাকি নিজের জন্যও এই সুগন্ধী ব্যবহার করেন।
ফেরেশতাদের বিষণ্ণ হতে নেই, মন খারাপ হতে নেই, তবু মোচোমোচোর দেখভালকারী ফেরেশতার মন খুব উদাস। এই মানব শিশুটা আর বেশিদিন তার সাথে নেই। এর সময় এসেছে পৃথিবীর পথে পা বাড়ানোর।
স্বর্গে এরকম শিশুরা খেলা করে যায় দেখভালকারী ফেরেশতাদের সাথে, যতোক্ষণ পর্যন্ত না তারা ঈশ্বরের নির্দেশে পৃথিবীতে আসে। পৃথিবীতে আসার জন্য অপেক্ষারত সব শিশুরাই এক বয়সী থাকে। সব শিশুর মনেই কিছু কমন প্রশ্ন থাকে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন থাকে- কেমন হবে তাদের বাবা-মা।
খেলা শেষ করে মোচোমোচো যখন ক্লান্ত, তখন সে আবারো এই প্রশ্ন করে- আচ্ছা ফেরে দাদু (ফেরেশতা সে বলতে পারে না) আমার আব্বু আম্মু ক্যামন?
মোচোমোচোর এই প্রশ্ন শুনে ফেরেশতা সাহেবের হঠাৎ মনে পড়ে কালকেই চারটা কুকুর ছানা বেহেশতে এসেছে, যারা পৃথিবীতে মোচোমোচোর বাবা-মাকে খুব কাছ থেকে দেখে এসেছে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ায় তারা ক্লান্ত। ঘুমাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠলেই তাদের কাছে মচোমচোকে নিয়ে যাবেন তিনি।
দুই.
চারটে কুকুর ছানা। তাদের নাম মোটু, পাতলু, সুন্দরী আর টমি। স্বর্গের কুকুরদের হোটেলে তারা বিশ্রাম নেয়া শেষ করেছে কেবল। তখন ফেরেশতা সাহেব মোচোমোচোকে নিয়ে হাজির হলেন।
মোচোমচোর জন্য এটা এক নতুন অভিজ্ঞতা। চারটে কুকুর ছানার সাথে সে প্রথমেই কিছুক্ষণ খেলে নিল। কুকুর ছানাগুলোও দুই পা তুলে, গুড়গুড়িয়ে দৌড়ঝাপ করে মোচোমচোর সাথে খেললো। তার গাল সুড়ুৎ-পুড়ুৎ করে চেটে দিলো। তারপর থিতু হয়ে বসলে, ফেরেশতা বললো- এবার বলো তো ছানারা আমাদের মোচোমোচোর বাবা- কেমন?
সব কটা কুকুর ছানা একসাথে কুঁইকুঁই করতে লাগলো। ফেরেশতা সাহেব তাদের থামিয়ে বললেন- এক এক করে বলো।
সুন্দরী (মেয়ে ছানা)- আমি তো বেশিদিন দেখিনি, হুম আমাকে তারা খাবার দিয়েছে, কিন্তু আমার অসুখ হলে রাস্তাতেই রেখেছে। বাসায় তো নিতে পারতো! গায়ে একটা কিছু দেয় নাই। সে জন্যই তো আমি মারা গেলাম...
পাতলু (মেয়ে ছানা)- আমাকেও খাবার দিয়েছে। কিন্তু সকালে কিছু দিত না। আমি খাবারের খোঁজে বাইরে বের হলাম এক সকালে। তারপর গাড়ির নিচে পড়লাম... আর তোমার মা আমাকে রেখেই বাপের বাড়িতে ঘুরতে চলে গিয়েছিল। বাবাটাও কেলাস...
মোটু (মেয়ে ছানা)- আমারো অসুখ করেছিল। আমাকে খুব আদর করতো ঠিকই কিন্তু আমাকে ডাক্তার দেখায়নি। রক্ত বমি করেই মারা গেলাম...
টমি (ছেলে ছানা)- আমার সাথে তোমার বাবা মায়ের দেখা অ্যাক্সিডেন্ট করে হাত থেঁতলে যাবার পর। তারা আমাকে ডাক্তার দেখাইছে ঠিকই, কিন্তু খালি বেঁধে রাখতো। আর ইঞ্জেকশন দিতো। ব্যথার জায়গাটায় রোজ কষ্ট দিতো। কি একটা ওষুধ দিছিলো সেইখানে, সেটা চেটেই তো আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল, আমি মারা গেলাম।
মোচোমোচোর মন খারাপ হয়ে যায়। সে বোঝে তার বাবা-মা ততোটা যত্নবান কিংবা দায়িত্ববান নয়। এই কুকুর ছানাগুলো তাদের কারণেই মারা গেছে, কিংবা কষ্ট পেয়েছে।
সে ফেরেশতার হাত ধরে বেহেশতে নিজের বাড়ি ফেরার সময় বলে- আমি কী অন্য বাবা-মা পেতে পারি না!
তিন.
ঘর আলো করে দিয়ে মচোমচো পৃথিবীতে এসেছিল। বেহেশতে তার নাম যা ছিল, পৃথিবীতেও তার নাম ছোটবেলায় তাই ছিল। মচোমচো বলেই তার বাবা-মা ডাকতো।
সেই মোচোমোচো এখন দেশের সবচেয়ে নিবেদিতপ্রাণ পশু ডাক্তার। সকাল বিকাল নেই ছুটে বেড়ায় কুকুর, বেড়াল, ছাগল, গরুসহ নানা পশুর চিকিৎসায়। বিশাল প্রাণী অধিকার আন্দোলন গড়ে তুলেছে। শত শত কর্মী আর শুভানুধ্যায়ী।
জন্মের পর থেকেই তার বাবা-মা মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিল তাকে অবলা প্রাণীদের সেবার জন্য পৃথিবীতে আনা হয়েছে। কেননা, তার জন্মের আগে বাবা-মা চারটা রাস্তার কুকুরকে সেবা করেও বাঁচাতে পারেনি। তাদের একটা স্বপ্ন ছিল, তাদের সন্তান হবে অবলা প্রাণীদের গ্রেট রেস্কিউয়ার।
মোচোমোচো সেই স্বপ্ন পূরণের পথে। যদিও সে ভুলে গেছে বেহেশতে তার সাথে কুকুর ছানাদের কী কথা হয়েছিল, আর সে যে এই বাবা-মার কাছে আসতে চায়নি- সেই কথাও।
কিডস পাতায় শিশু-কিশোররা লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |