আচ্ছা বাবা, তুমি না বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলে?
একাত্তরে যুদ্ধ করলে বন্ধুরা সব মিলে!
তোমার বন্ধু শহীদ হলো, বুলেটবিদ্ধ তুমি
রক্ত দিয়ে করলে স্বাধীন প্রিয় স্বদেশভূমি।
তোমার খোঁজে রাজাকাররা হামলা করলো গ্রামে
ঘরবাড়ি সব পুড়িয়ে দিলো তোমায় খোঁজার নামে!
ফুপিটাকে তুলেই দিলো আর্মিগুলোর হাতে
আত্মহত্যা করলো ফুপি দুঃসহ সেই রাতে।
তোমার বোনের সম্ভ্রম আর অশ্রু-প্রাণের দামে
অমূল্য ধন পেলে তুমি ‘স্বাধীনতা’র নামে।
কিন্তু তুমি ভুলেই গেছো আজকে ফুপির দান
সকল ভুলে গাইছো তুমি রাজাকারের গান!
রাজাকারদের সঙ্গে তোমার নিত্য চলাফেরা
রাজাকারদের নিয়েই তোমার সকল স্বপ্ন ঘেরা।
ওদের সঙ্গে এক মঞ্চে ভাষণ দিচ্ছো তুমি!
শহীদ ছেলের হাড্ডি দিয়ে বাজাচ্ছো ঝুমঝুমি!
শহীদ মায়ের শহীদ বোনের শহীদ ভাইয়ের খুনে
স্বাধীন দেশের সকল প্রাপ্তি নিচ্ছো গুনেগুনে!
পাচ্ছো নিত্য অঢেল বিত্ত আর ক্ষমতার ভাগ
রাজাকারদের প্রতি তোমার বাড়ছে অনুরাগ!
মিত্র তোমার একাত্তরের যুদ্ধ অপরাধী
তোমার জন্যে কাঁদি বাবা তোমার জন্যে কাঁদি!
বিত্তবেসাত চাই না কিছুই চাই না বাড়ি গাড়ি
আমিও দেশের অংশ বাবা সামান্য এক নারী
চাইছি ফুপির অপমানের বিচারটুকু হোক
আমি চাইছি, চাইছে দেশের ষোল কোটি লোক।
পশুর অধম মানুষগুলোর বিচার চাও না তুমি?
তুমি-ই বলতে তোমার বন্ধু বাচ্চু-বদি-রুমি...
সহযোদ্ধার মুখগুলো কি দেয় না ছুঁড়ে ঘৃণা?
তুমিই বলো কসম খোদার, ঠিক বলেছি কিনা?
সহযোদ্ধার লাশগুলো কি তোমার চোখে ভাসে?
গেরিলা ফাইট সমুখ লড়াই এসব মনে আসে?
কেমন করে ভুললে বাবা সে গৌরবের স্মৃতি?
কেমন করে জাগলো তোমার ঘৃণ্য-পাকিপ্রীতি!
ধর্ষিতা সেই ফুপির জন্যে নেই কি তোমার দায়?
অই যে দেখো ফুপির রক্ত তোমার পতাকায়।
মন্ত্রী হবার জন্যে তুমি দেশকে বিক্রি করো!
একটা মন্ত্রী বড় নাকি মুক্তিযোদ্ধা বড়?
আজকে বাবা তোমার প্রতি ঘৃণাই শুধু জাগে!
একাত্তরের শহীদ ছেলের হাড়ের দোহাই লাগে—
দোহাই দিচ্ছে মায়ের অশ্রু বোনের কাঁকন নথ
আকাশ পাহাড় বৃক্ষ নদী সাগর মেঠোপথ--
দোহাই দিচ্ছে! শুনতে পাচ্ছো? বাবা আমার বাবা?
বাতাসে কান পাতো যদি শুনতে তুমি পাবা।
ইটের দালান বধ্যভূমি ঢাকার অলিগলি
তালিকাটা দীর্ঘ বাবা কোনটা তোমায় বলি!
পিচঢালা পথ-বর্ষা-শরৎ-চন্দ্র-সূর্য-তারা
দোহাই দিচ্ছে শাপলা-গোলাপ-জুঁই-বেলী-চম্পারা...
দোহাই দিচ্ছে ঝরাপাতা অশত্থ-বট-পাকুড়
দোহাই দিচ্ছে জীবনানন্দ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
ঘাসের শিশির নীল জোনাকি লজ্জাবতী লতা
দোহাই দিচ্ছে রৌদ্র-দুপুর নিঝুম নিরবতা
ইস্টিমারের করুণ ভেঁপু নৌকা ও সাম্পান
দোহাই দিচ্ছে ভোরের পাখি থামিয়ে তাদের গান।
দোহাই দিচ্ছে বীরঙ্গনার আর্তনাদ আর খুন,
ধর্ষিতাদের যুদ্ধশিশু, তাঁদের মৃত ভ্রূণ—
গুমড়ে মরা দোহাইগুলো অভিশাপের মতো
তোমার মুখে রোজ প্রতিদিন এঁকে দিচ্ছে ক্ষত!
তোমায় দেখে ভিখিরিটাও ঘৃণায় ফেরায় মুখ!
কোন্ আনন্দে বাঁচো তুমি? তোমার কিসের সুখ!
কিসের লোভে মেনে নিচ্ছো ঘৃণ্য পরিণতি?
তোমার জন্যে আজকে দেশের দুর্দশা দুর্গতি!
মুক্তিযোদ্ধা! তোমার মাঝে রাজাকারের বেশ!
আমি কাঁদছি, আমার সঙ্গে কাঁদছে বাংলাদেশ!
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |