ছোটগল্প: চার বন্ধুর বৃক্ষরোপন

এবার চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে মিমি। পুরো নাম সুরাইয়া ইসলাম মিমি। বাড়ি থেকে স্কুলের দুরত্ব তেমন না হলেও একসঙ্গে দলবেঁধে স্কুলে যাওয়া রীতিমতো তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

রুমান হাফিজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2018, 04:58 AM
Updated : 4 Dec 2018, 04:58 AM

তাদের বলতে মিমির বন্ধুরা। মালিহা, সুমাইয়া আর রাফা মোট চারজন। সবাই একই ক্লাসে পড়ে। প্রতিদিন সকালবেলা এক এক করে সবাই এসে জড়ো হয় মিমিদের বাড়িতে। তারপর গল্প করতে করতে স্কুলে এসে হাজির। ঠিক তেমনিভাবে স্কুল ছুটির পর একসঙ্গে বাড়িতে ফিরে। বিকেলবেলা আবার সবাই মিলে খেলাধুলা, গল্প আর ঘোরাঘুরি তো আছেই।

একদিন রহিম স্যার বাংলা ক্লাসে গাছ নিয়ে রচনা লিখে নিয়ে আসতে বললেন। ঠিক সময়ে জমা দেওয়ার জন্য স্যারের বেধে দেওয়া সময়ের আগেই তারা লেখা শেষ করলো। মিমির বাড়িতে এসে তারা সবাই গাছ নিয়ে রচনা লিখছিল। হঠাৎ মালিহা সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

-আচ্ছা আমাদের স্কুলের মাঠ তো পুরোটাই ফাঁকা। আমরা কি সেই খালি জায়গায় গাছ লাগাতে পারি না?

মালিহার কথায় সবাই একটু নড়েচড়ে বসলো। মিমি একটু যোগ করে বললো,

-হ্যাঁ, খুবই ভালো কথা বলেছিস। আমরা চাইলে তো তা করতে পারি, তাইনা?

সবাই সমস্বরে মিমির কথার সঙ্গে একমত পোষণ করলো।

এবার সবার থেকে বেশি চঞ্চল স্বভাবের সুমাইয়া বললো,

-তো, আমরা সবাই তো আছি। এখন কীভাবে কী করতে হবে সেটা ঠিক করে নিলে আমাদের কাজটা সফল হবে।

সবাই নিজ নিজ মতামত দিতে থাকলো। কেউ ফুলের গাছ, কেউবা ফলের গাছ লাগানোর কথা বলছিল। মিমি সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

-আমরা ফুল, ফল দুটোই লাগাবো, কেমন! এখন কথা হচ্ছে আমরা গাছগুলো কীভাবে জোগাড় করবো।

রাফা বললো,

-গাছ জোগাড় করা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমার বড় মামার বন্ধুর নার্সারি আছে। ওই তো দক্ষিণ গ্রামে। আমরা ওখান থেকে নিতে পারি।

 -তাহলে তো ভালোই হয়। কিন্তু গাছ কেনার জন্য টাকা...! মালিহার কথা পুরোটা শেষ করতে না দিয়েই মিমি বলতে লাগলো,

-গাছ কেনার জন্য আমরা নিজেরা টাকা দেবো, যে যতটুকু পারি। তাছাড়া আব্বু-আম্মুদের থেকেও তো বলে নিতে পারি। কি বলিস!

সবার টাকা একত্রে করে তারা গাছ কেনার জন্য নার্সারিতে গেলো। তালিকা অনুযায়ী গাছ নির্বাচন। নিমগাছ দুটো, সঙ্গে চারটা ফলের আর চারটা ফুলের গাছ কেনা হলো। তারপর দামদর ঠিকঠাক করে বাড়িতে নিয়ে আসা। পরদিন সবাই মিলে গাছগুলো স্কুলে নিয়ে আসে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা প্রধানশিক্ষক ফৌজিয়া লীনা ম্যামের কাছে গেলো। সবকিছুই বিস্তর জানায় ম্যামকে।

সব শুনে ম্যাম তো মহাখুশি। সঙ্গে সঙ্গে স্কুলের সব শিক্ষক-কর্মচারীদের ডেকে পাঠালেন। মিমিদের কথা তাদেরকে বললেন। পাশাপাশি সব ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে মাঠে আসার নির্দেশও দিলেন। কর্মচারীদের দিয়ে গাছ লাগানোর সব সরঞ্জাম আনানো হলো।

একে একে ছাত্র ছাত্রীরা আসতে শুরু করলো। এবার প্রধানশিক্ষক লীনা ম্যাম মিমিদের নিয়ে হাজির হলেন। উপস্থিত ছাত্র-শিক্ষক সবার উদ্দেশ্যে ম্যাম তখন কিছু কথা বললেন। বিশেষ করে মিমিদের এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগের ব্যাপারে অনেক প্রশংসা করলেন। তাছাড়া গাছ লাগানোর উপকারিতাসহ নানাদিক নিয়ে পরামর্শমূলক কথা বললেন।

এবার গাছ রোপনের পালা। পুরো স্কুল মাঠ জুড়ে পিনপতন নিরবতা। লীনা ম্যাম একটা নিম গাছ হাতে নিয়ে গর্তের মধ্যে রোপণ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে গোটা মাঠটাই করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠলো। লীনা ম্যাম মিমিদের জড়িয়ে ধরলেন। ওদের চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো। এ যে বড় সুখের কান্না।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি,সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানাkidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!