বুড়ি ধাইমার কাপড় সেলাই

বই: নার্স লগটন’স কার্টন, লেখক: ভার্জিনিয়া উলফ (১৮৮২-১৯৪১) যুক্তরাজ্য, অলঙ্করণ: জুলি ভিভাস, প্রকাশক: হার কোর্ট চিলড্রেন্স বুক, প্রকাশকাল: ১৯৯১। শিশুদের জন্য উলফের প্রথম গল্পটি হলো ‘দ্য উইডো অ্যান্ড দ্য প্যারট’।

মাজহার সরকারমাজহার সরকার
Published : 23 Nov 2018, 03:08 AM
Updated : 23 Nov 2018, 03:09 AM

এক ছিলেন বুড়ি ধাইমা, তার নাম নার্স লগটন।

একদিন সে নীল ও সাদা রঙের সুতির কাপড় সেলাই করছিলো। সুঁই দিয়ে জানালার পর্দার কাপড়ের গায়ে ফুটিয়ে তুলছিলো নানা জীবজন্তুর ছবি।

সেলাই করতে করতে বুড়ি চেয়ারের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলো। তার মাথাটা কাত হয়ে কাঁধের কাছে নেমে গেলো। চশমাটা আটকে থাকলো কপালের কাছে। কোলের ওপর পড়ে রইলো কাপড়, আর দুই আঙুলের ফাঁকে ঝুলে রইলো সুঁই-সুতো।

ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ধাইমা নাক ডাকছিলো। একেকবার ঘ্যারঘ্যার করে গর্জন বেরিয়ে আসছিলো নাক দিয়ে। ক্ষণে ক্ষণে শ্বাসনালীর কম্পন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের বাতাস এসে লাগছিলো কোলের ওপর পড়ে থাকা পর্দার কাপড়ে। বুড়ির গলা ও নাকের আশপাশের টিস্যুগুলো কাঁপছিলো। 

এক...দুই...তিন...চার...। বুড়ি যখন পঞ্চমবারের মতো নাক ডেকে ওঠলো তার নাসারন্ধ্র দিয়ে প্রচণ্ড একটা বাতাস এসে ধাক্কা খেলো কাপড়ের ওপর, আর তাতে কাপড়ে তোলা সুতোর ছোট্ট নকশাগুলো নড়েচড়ে উঠলো। নকশাগুলো পরস্পরকে সংকেত দিতে লাগলো- ‘জাগো জাগো, এখন আমরা নিরাপদ। বুড়ি ঘুমিয়ে গেছে, তার আঙুল থেমে গেছে’।

প্রথমে হরিণ ধাক্কা দিয়ে জেব্রাকে তুললো। জেব্রা তার ওপরের আরও তিনজনকে ডেকে তুললো। পুরো প্রাণীকুলেই  প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিতে লাগলো। কাপড় থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে নেমে এলো জেব্রা, হরিণ, পেঙ্গুইন, সিংহ, বানর আর জিরাফ। আর ছিলো এক বৃদ্ধা রানি আর এক রাক্ষস। 

সেলাইয়ের জন্য ধাইমার আঙুলে লাগানো টোপর সূর্যের মতো জ্বলজ্বল করছে। আর জীবজন্তুর নকশাগুলো লাফ দিয়ে দিয়ে ঘাস আর বৃক্ষের বাগানে এসে পড়ছে। গড়াগড়ি আর দুলতে দুলতে পৌঁছে যাচ্ছে ঝিলিমিলি হ্রদের পানিতে আর জাদুর শহরে।

বৃদ্ধা রানি পালকিকে চড়ে কাপড় থেকে নেমে এলেন, তখন সামরিক বাহিনীর সৈন্যরা কুচয়াওয়াজ করতে করতে রাস্তা পেরিয়ে শহরের ব্রিজটা পেরিয়ে গেলো। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদের মান্যগণ্য ব্যক্তিদের সম্মানে সালামি প্যারেডে অংশ নিলো। এই জাদুর শহরের নাম হলো ‘মিলামমার্চমান্টোপলিস’। 

ছোট ছোট বাড়িঘরের জানালা থেকে ছেলে-বুড়ো-গৃহিনী সবাই উঁকি দিয়ে দেখছিলো এসব। জানালার বাইরে শরীর ঝুলিয়ে দিয়ে তারা হাত নেড়ে জীবজন্তুদের প্রশংসা শুরু করলো, ‘কি সুন্দর প্রাণী!’। ফুলগুলো বাতাসে দোল খেতে লাগলো, পাকা ফলে ঠোকরাতে শুরু করলো পাখিরা।

তখন একটা মাছি ভোঁ ভোঁ করে উড়ে এসে বসলো বুড়ির নাকে। আর তাতে বুড়ির ঘুম ভেঙে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে সব জীবজন্তু, বাড়ি-ঘরের মানুষ আর ফুল-ফলগুলো কাপড়ের নকাশায় আবার ঢুকে গেলো, আগের মতো স্থির হয়ে ছবি হয়ে রইলো।

কিন্তু এতক্ষণ যা ঘটে গেলো এসবের কিছুই বুড়ি ধাইমা টের পেলো না। সে আবার সুঁই-সুতো নিয়ে কাপড়ের গায়ে সেলাই করতে লাগলো।