ছোটগল্প: স্টেডিয়ামে একদিন

বাবার সঙ্গে স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখবে শাহান। তবে মাঠে বসে সরাসরি খেলা দেখার ব্যাপারে শাহানের চেয়ে তার বাবার আগ্রহটাই বেশি। কতো বাবা-মা’ই তো তাদের সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে খেলা দেখতে যান। ছোট ছোট শিশুরাও বাদ যায় না।

বোরহান বিশ্বাসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2018, 11:32 AM
Updated : 15 Sept 2018, 11:32 AM

এসব দেখে শাহানের বাবারও ইচ্ছে হয় ছেলেকে নিয়ে গ্যালারিতে বসে সরাসরি খেলা দেখবেন। সেই ভাবনা থেকেই মাঠে যাওয়ার প্রস্তুতি। বাপ-বেটার সঙ্গে শাহানের মা’ও যাচ্ছেন স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে।

সন্ধ্যা সাতটায় খেলা শুরু হবে। বিকেল পাঁচটায় তারা স্টেডিয়ামের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লেন। ভ্যাপসা গরম কেটে গিয়ে হালকা বাতাস বইছে। চলন্ত রিকশায় সেই বাতাস গায়ে লাগায় সবাই বেশ ফুরফুরে। রাস্তায় তেমন যানজট নেই। খিলগাঁও থেকে রিকশা দ্রুতই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের মশাল গেটে এসে পৌঁছল।

সন্ধ্যার ছায়া পড়েছে। ফ্লাড লাইটের আলোতে চারদিক ঝলমলে করছে। শাহান বেশ মজা পাচ্ছে। এতো আলো এর আগে সে কখনো দেখেনি। উৎসুক মনে তাই বাবাকে বলছে, ‘আব্বু কতগুলো লাইট একসঙ্গে, দেখেছো! কতো আলো!’

দুটো টিকেট কিনলেন শাহানের বাবা। দর্শকরা টিকেট দেখিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছেন। মনে হচ্ছে ভেতরে খুব একটা ভিড় নেই। কিন্তু স্টেডিয়ামে ঢুকে দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। নিচ থেকে দাঁড়িয়ে স্পষ্টই বোঝা গেলো গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। শুধু মানুষের মাথা আর মাথা। উপরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে লাভ নেই।

শাহানের বাবার পি চেপেছে। তবে চাপটা খুব বেশি না। গ্যালারির একেবারে উপরে ইউরিনাল। কিন্তু সেখানে ওঠার জন্য যে সিঁড়ি সেটা পর্যন্ত দখল হয়ে গেছে। যাওয়ার কোনো উপায় নেই। তাই সামান্য চাপ থাকা পি’র বেগটা তিনি চেপেই রাখলেন। গ্যালারির নিচের দিকে সামান্য কিছু ফাঁকা জায়গা আছে। সেটা যে কোনো মুহূর্তে দখল হয়ে যেতে পারে। তাই সুবিধা মতো একটা জায়গায় তারা বসে পড়লেন। বাবা-মার মাঝখানে বসেছে শাহান।

ফ্লাড লাইটে মাঠের সবুজ ঘাসগুলো শিশিরের মতো চিকচিক করছে। দেখতে সুন্দর লাগছে। শাহানের খুব আনন্দ হচ্ছে। নতুন পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হতে সে বারবার এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। দর্শকরা হাতে পতাকা নিয়ে ওড়াচ্ছেন। কারো কারো মাথায় ও কপালে পাতাকা বাঁধা। কেউ গালে পতাকা এঁকেছে। ভিড়ের মধ্যেই কিছু কম বয়সি ছেলে পানি, বাদাম, চিপস, পপকন, সিঙারা বিক্রি করছে।

কিছুক্ষণের মধ্যে নিচের ফাঁকা জায়গাগুলোও পূরণ হয়ে গেলো। ভুভুজেলার শব্দ আসছে চারপাশ থেকে। খেলা শুরু হয়ে গেছে। দর্শকদের মধ্যেও শুরু হয়েছে উত্তেজনা। এরই মধ্যে বাবাকে পি চাপার কথা জানালো শাহান। কী আর করা! এদিক-সেদিক তাকিয়ে ছেলেকে কাঁধে নিয়ে গ্যালারির একেবারে কর্নারে নিচের শেষ সিঁড়িতে দাঁড় করিয়ে দিলেন। আবার কাঁধে করে নিয়ে এলেন। সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার সময় গ্যালারি থেকে কিছু কথা কানে ভেসে আসলো- ‘আর সময় পাইলেন মিয়া, সরেন সরেন সামনের থ্যাইকা সরেন, খেলা দেখতে দেন। পোলাপাইন লইয়া মাঠে আইছে খেলা দেখতে!’

গ্যালারিতে তিল ধারণের জায়গা নেই। পরিবেশ ধীরে ধীরে অস্বস্তিকর হয়ে উঠলো শাহানের জন্য। অনবরত বাজতে থাকা ভুভুজেলার শব্দ এখন আর ভালো লাগছে না তার। বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এক পর্যায়ে কেঁদেই ফেললো সে। খেলার বিরতি হতে আরো ১৫ মিনিট বাকি। শাহানের কান্না থামছেই না। এদিকে, নড়ারও কোনো উপায় নেই। একবার বাবার কোলে, একবার মায়ের কোলে যেতে লাগলো সে। তবুও স্বস্তি মিলছে না।

হঠাৎ রেফারির লম্বা বাঁশি, খেলার মধ্য বিরতি। শাহানের অবস্থা দেখে বাবা-মা আর ভেতরে থাকতে চাইলেন না। তারা উঠে দাঁড়ালেন বের হওয়ার জন্য। কিন্তু দর্শকদের প্রচণ্ড ভিড়ে কিছুতেই সামনে এগোনো যাচ্ছে না। বিরতিতে যে পরিমান দর্শক মাঠ থেকে বেরুচ্ছে, ঢুকছে তার চেয়ে বেশি। কোনোভাবেই গেটের কাছে যেতে পারছেন না তারা। খেলোয়াড়রা বিরতির পর আবার মাঠে নেমেছেন। এখনি খেলা শুরু হবে।  দর্শকরাও বেশ উত্তেজিত। থেকে থেকে চিৎকার করে উঠছেন।

অনেক কষ্টে গেটের কাছে পৌঁছানো গেলো। ধাক্কাধাক্কির মধ্যে এক সময় তারা বেরিয়ে এলেন। রিকশা নিয়ে সোজা চলে এলেন বাসায়।

জামা-কাপড় না খুলেই টিভি সেটের সামনে খেলা দেখতে বসে গেলেন শাহানের বাবা। শেষের দিকে চলে এসেছে খেলা। এখনো গোলশুন্য। একেবারে অন্তিমে এসে একটি গোল হলো। ওই এক গোলেই শাহানের বাবার পছন্দের দলটি জিতে গেলো। শাহান তখন বিছানায় ঘুমের রাজ্যে।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!