বৈমানিক অনেক চেষ্টা করলেন ভেড়া আঁকতে, হলো না। শেষ পর্যন্ত আঁকলেন একটা বাক্স। আর তা-ই রাজপুত্রকে দিয়ে বললেন- ‘বাক্সের ভেতর ভেড়া আছে’। অদ্ভুত এ ছবি পেয়ে রাজপুত্র উচ্ছ্বসিত হলো, হয়ে গেলো তাদের বন্ধুত্ব। আর তা থেকেই জানা যায় ছোট্ট রাজপুত্রের পৃথিবীতে আগমনের কাহিনী।
বাগানের একমাত্র প্রিয় গোলাপের সঙ্গে অভিমান করে রাজপুত্র, নিজ গ্রহ ছেড়ে যায়। তারপর আরও আরও গ্রহ-উপগ্রহ-নক্ষত্র পেরিয়ে চলে আসে পৃথিবীতে। আসার পথে দেখা হয় বহু রকম মানুষের সঙ্গে। সে গল্পই বৈমানিককে জানায় রাজপুত্র। এক বণিকের সঙ্গে দেখা হলো যার অভ্যাস হলো আকাশের তারা গোনা। সেই নাকি ওই তারাগুলোর মালিক, নষ্ট করবার মতো সময় তার হাতে নেই। ছোট্ট রাজপুত্রকে বণিক বলে, ‘যদি তুমি কোনো হীরার টুকরো পাও, এর মালিক অন্য কেউ নয়; এটি হয়ে যাবে কেবল তোমার। যদি তুমি কোনো দ্বীপ আবিষ্কার করো, এর মালিক কেউ নয়; এটা হয়ে যাবে শুধু তোমার। যদি তুমি কোনো আইডিয়া পাও যা আগে কেউ ভেবে দেখেনি, তুমি এটা প্যাটেন্ট করে নেবে এবং তা হয়ে যাবে চিরদিনের জন্য তোমার সম্পদ। তাই আমার ক্ষেত্রে এই তারাগুলোও আমার। কারণ আমার আগে তারাগুলোকে নিজের করে নেওয়ার কথা চিন্তা কেউ করেনি।’
দেখা হয় এক মাতালের সঙ্গে, মদপানের লজ্জা ভুলতে সে আরও বেশি করে মদ গিলছে। পাওয়া গেলো এক বাতিওলাকে, তার বিশ্রাম নেওয়ারও সময় নেই। সে তার গ্রহে রাতের বেলা বাতি জ্বালায় আর সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাতি নিভিয়ে ফেলে। পাওয়া গেলো এক স্বার্থপরকে যে সারাদিন নিজের প্রশংসা শুনতে চায়। আরও দেখা হলো এক ফেরিওয়ালার সঙ্গে, যে বেচে তৃষ্ণামেটানো বড়ি। দেখা হলো ঘরবাড়িহীন লোকেদের সঙ্গে যারা খালি ছুটে চলে, যারা বিরামহীন যায় আর আসে।
মরুভূমিতে বসে বৈমানিককে এইসব গল্প শোনায় রাজপুত্র, জানায় তার ছোট্ট গ্রহের সবকিছুর আকৃতিই খুব ছোট। ছোট মানুষ, ছোট পশুপাখি, ছোট ঘরবাড়ি, সবকিছুই ছোট। বৈমানিক জানায় সেও একসময় ছোটই ছিল। তার বয়স যখন ছয়, তখন সেও ক্রেয়ন দিয়ে ইচ্ছেমতো নানারকম ছবি আঁকতে ভালোবাসতো। কিন্তু বয়সে যারা বড় তারা তার আঁকা ছবির মানে বুঝতো না। সেই দুঃখে সে একসময় ওইসব আঁকাজোখা দিলো ছেড়ে। বড়রা কি আজব, ছোটদের তারা ঠিকমতো বুঝতেই পারে না, তাই না! আর তাই তো সবসময় দেখা যায়, শিশুরা শুধু বড়দের নানা জিনিস বুঝানোর চেষ্টা করে। তবু তারা বুঝে না। সব বড়রাই একদিন শিশু ছিলো, কিন্তু সবাই তার শৈশব মনে রাখতে পারে না।
রাজপুত্র ভালোবাসত তার গ্রহের একমাত্র গোলাপ ফুলটিকে। কোন সে দূর অচিনপুর থেকে উড়ে এসেছিল তার বীজ, সে বীজ এসে এ গ্রহের মাটিতে পড়লো, তাই থেকে চারা গজালো, প্রতিদিন সূর্যোদয়ে ঝলমলিয়ে ফুটে উঠতো সেই ফুল। পৃথিবীতে এসে ছোট্ট রাজপুত্র দেখা পেলো আরও পাঁচ হাজার গোলাপের। কিন্তু তার গ্রহের ওই গোলাপের মতো কোনটিই নয়। তখন সে বুঝলো তার ফেলে আসা গোলাপ ফুলটি অনন্য।
শেয়াল ছোট্ট রাজপুত্রের কানেকানে বললো, ‘পৃথিবীতে যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তা চোখ দিয়ে দেখা যায় না বা ছোঁয়া যায় না। সেসব দেখতে হলে হৃদয় লাগে। যা কিছু খাঁটি তা থাকে লুকিয়ে, অন্তরালে; ঝিনুকের ভেতর যেমন মুক্তো থাকে সে রকম। শুধু চোখ থাকলেই দেখা যায় না। হৃদয় দিয়ে দেখতে হয়।’ রাজপুত্র বললো, ‘একদিন আমি তেতাল্লিশবার সূর্য ডুবতে দেখলাম। কারও যখন খুব মন খারাপ থাকে তখন সূর্যাস্ত দেখতে ভালো লাগে।’ রাজপুত্র জিজ্ঞেস করে, ‘আচ্ছা, পোষ মানানোর অর্থ কী?’ শেয়াল উত্তর দেয়, ‘ওর অর্থ হলো গিয়ে সম্পর্ক তৈরি করা।’
পৃথিবীতে ঘুরতে ঘুরতে রাজপুত্রের দেখা হলো একজন রেলওয়ে সুইচম্যান ও একজন বণিকের সঙ্গে, তারপর আবার সে ফিরে এলো বৈমানিকের কাছে। এদিকে মরুভূমিতে আটদিন কেটে গেছে তাদের। অষ্টম দিন তীব্র পানি সংকট দেখা দিলো। সারাদিন হেঁটে খুঁজে অবশেষে ভোরের দিকে একটি কূপ খুঁজে পায় রাজপুত্র, সেই পানি তৃপ্তি নিয়ে খায় বৈমানিক ও রাজপুত্র। এভাবে কেটে যায় মাসের পর মাস। ঠিক এক বছর পর শেষ পর্যন্ত সেই দুর্গম মরুভূমিতে আটকে পড়া বিমান ঠিক করতে পারেন বৈমানিক, ফিরে যান যান নিজ দেশে।
বই: ‘লে পেতি প্রিন্স’ বা ‘দ্য লিটল প্রিন্স’, লেখক: আঁতোয়ান দ্য সাঁৎ জুপেরি (১৯০০-১৯৪৪), প্রথম প্রকাশ: ১৯৪৩, অলঙ্করণ: লেখক নিজে। প্রায় তিনশ ভাষা ও উপভাষায় এটি অনূদিত হয়েছে, নির্বাচিত হয়েছে বিশ শতকে ফ্রান্সের সেরা বই হিসেবে। ক্যাথিরিন উডসের ইংরেজি অনুবাদ থেকে বইটির সারমর্ম লেখা হয়েছে।
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |