বোকা বাঘের কাণ্ড

এক বনে এক খরগোশের বিয়ে। বিয়েতে দাওয়াত পেলো বনের অন্য প্রাণীরা। উপস্থিত হলো বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, হরিণ, বানর, হনুমান, কাক, কোকিল, বক, চিল, দোয়েল, কোয়েল, ময়না, টিয়া, বাদুড়, হাতি, ঘোড়া, মহিষ, গরু, ছাগল, ভেড়া, কুকুর, বিড়াল, আঞ্জন, গয়াল ও বনের সবচেয়ে উঁচু প্রাণী জিরাফ।

জব্বার আল নাঈমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2018, 10:04 AM
Updated : 18 August 2018, 10:04 AM

বিয়েতে সবার সঙ্গে সবার দেখা হলো। হলো ভাব বিনিময়। সিংহের সামনে বাঘ, বাঘের সামনে হরিণ। হরিণের দল আনন্দে লাফালাফি করছে। বাঘ বাঁকা চোখে এসব দেখে। কিন্তু ঘাড় মটকাতে পারে না। রক্ত খেতে পারে না। 

বনের গরু সদলবলে বাঘের সামনে হাঁটছে। ভেড়া দলবেঁধে ছোটাছুটি করছে। পাখিরা মনের আনন্দে উড়াউড়ি ঘুরাঘুরি করছে। কেউ কাউকে আক্রমণ করছে না। কারণ, মাস কয়েক আগে বনে নতুন নিয়ম করা হয়েছে। কারো বিয়ে, জন্মদিন কিংবা মৃত্যুদিনের অনুষ্ঠানে বড়রা ছোটদের মারবে না। এমনকি কেউ কারো ঘাড়ও মটকাতে পারবে না। নিয়মের বাইরে গেলে বনের রাজা বিচার করবেন। বিচার অনুয়ায়ী অপরাধীকে সাজা ভোগ করতে হবে।

বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলে যে যার মতো বাড়ি ফিরছিলো। গল্প করতে করতে একসঙ্গে ফিরছে শেয়াল আর কচ্ছপ। দীর্ঘক্ষণ হাঁটার পর দুজনেই ক্লান্ত। একটু দূরে আড়ালে গিয়ে বসলো তারা। এরপর জমিয়ে আড্ডা দেওয়া শুরু করলো। আড্ডায় অনেক আলাপ আলোচনা হয় বনের প্রাণীদের সুখ-দুঃখ নিয়ে। দুর্বলের উপর সবলের আক্রমণ বন্ধ করতে হবে। কেউ কারো উপর অত্যাচার করতে পারবে না এমন আইন করতে হবে।

শেয়াল আর কচ্ছপের বন্ধুত্বের কথা বনের সবাই জানে। জানে বলেই বনের পশু-পাখিরা তাদের হিংসে করে। শেয়াল সেদিকে কান দিতে চায় না। চারপাশের কানাঘুষা চলে। কচ্ছপের মনে ভয় বাড়ে, যদি বন্ধুত্ব ভেঙে যায়, ভুল বুঝে শেয়াল দূরে সরে যায়! শেয়াল কোনো গুজবেই কান দিতে চায় না। নিজেরা ঠিক থাকলে ভুল বোঝাবুঝি হবে না। শেয়াল বিশ্বাস করে, বনে এমন বন্ধুত্ব আরো থাকা দরকার। তাহলে সবার মাঝে শান্তি ফিরবে। কারণে-অকারণে কেউ কাউকে মারবে না। দুর্বলের উপর ঝাপিয়ে পড়বে না। সবার মাঝে ফিরে আসবে শান্তি-শৃঙ্খলা।

শেয়াল আর কচ্ছপ গভীর আলোচনায় মগ্ন। দূর থেকে দেখছে এক বাঘ। বাঘ খুবই ক্ষুধার্ত। সারাদিন কিছু খেতে পায় না। বাঘ ভাবছে এবার অন্তত ক্ষুধা মিটবে। বাঘ নিঃশব্দে এগিয়ে আসে সামনের দিকে। তা দেখতে পায় শেয়াল। এমন বিপদের কথা কচ্ছপকে না জানিয়ে কেটে পড়ে, দূরে গিয়ে সামান্য আড়ালে বসে থাকে। আর মুখ বের করে বাঘের তামাশা দেখে। আপাতত শেয়াল বাঘের নাগাল থেকে দূরে, নিরাপদ জায়গায়।

কচ্ছপ ধীর পায়ে হাঁটছে। কিন্তু বেশিদূর যেতে পারেনি। বাঘ দৌড়ে ধরে ফেলে। আজ কচ্ছপ খেয়েই ক্ষুধা মিটাবো সে। কচ্ছপের মাংস খেতে বেশ মজা। কিন্তু খেতে গিয়ে কোনভাবেই সুবিধা করতে পারল না বাঘ। কচ্ছপের শরীরের উপরের অংশ যে খুব শক্ত! বুড়ো বাঘের দাঁতে কুলোয় না। একবার মুখে নেয় আরেকবার বের করে। কচ্ছপের চোখজোড়া কোটরের ভেতর। মাঝে মধ্যে চোখ খোলে। মিটমিট করে দেখে। দেখতে দেখতে ভয় পায়, ভয়ে আরো জড়ো হয়ে আসে, ভেতরের দিকে যায়। বন্ধুকে খোঁজে। বিপদের দিনে বন্ধুর সহযোগীতা দরকার। বুদ্ধিমান শেয়ালের সহযোগিতা দরকার, অথচ সে আগেই পালিয়েছে।

বাঘ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কচ্ছপের মাংস খাবেই খাবে। কষ্ট হলেও খাবে। চাইলেই যখন-তখন কচ্ছপ মেলে না। কচ্ছপের মাংস খেতে হলে ভাগ্য লাগে। এই মাংসে শক্তি দুই-তিন গুণ বাড়ে। এমন সুযোগ কোন আহাম্মক হাতছাড়া করবে? অন্তত বাঘ হাতছাড়া করতে চায় না। বাঘের মেজাজ খুব খারাপ। সহযোগিতার জন্য এদিক-সেদিক তাকায়। আশপাশে কেউ নেই।

এমন সময় বাঘের কানে ‘মামা’ শব্দটি আসে। কে আমাকে ডাকছে?

বাঘ আবারও সেই মধুর ডাকটি শুনতে পায়, ‘মামা!’। বাঘের নজর আড়ালে থাকা শেয়ালের দিকে।

বাঘ: ভাগিনা, তুমি ওখানে কেনো?

শেয়াল: মামা যেখানে ভাগিনাও সেখানে।

বাঘ: হুম। মামা-ভাগিনা যেখানে বিপদ নাই সেখানে।

শেয়াল: মামা, তুমি এখানে কী করছ?

বাঘ: ভাগিনা, কয়দিন ধরে খুবই ক্ষুধার্ত। সামনেই কচ্ছপটি পেয়ে গেলাম। তাছাড়া কচ্ছপের মাংসে খুবই শক্তি। খেতেও মজা। অল্পতেই ক্ষুধা মিটে। ভাগিনা, চাইলে তুমিও আসতে পারো।

শেয়াল: আমি এলে তোমার ভাগে যে কম পড়বে।

বাঘ: তুমি তো ছোট। পরিমাণে কম খাবে।

শেয়াল: মামা, আগে বলো, এটা খাবো কীভাবে?

বাঘ: চেষ্টা করে দেখি, উপায় একটা বের হবে।

শেয়াল: কষ্ট করার দরকার নেই। এটা খাওয়ার উপায় আমার জানা আছে।

বাঘ: ভাগিনা, জলদি বলো। ক্ষুধায় দুর্বল আমি। কোনো বুদ্ধি মাথায় কাজ করছে না।

শেয়াল: তুমি যে বোকা তা বনের সবাই জানে।

বাঘ: ভাগিনা, তুমিও বোকা বললে? খুব কষ্ট পেয়েছি। মামাকে কেউ বদনাম দিলে তোমার উচিত প্রতিবাদ করা।

শেয়াল: ওরা সংখ্যায় বেশি ছিল। তাই পারিনি।

বাঘ: ওসব পরে হবে। আগে বলো কীভাবে কচ্ছপ খাবো।

শেয়ালঃ মামা, কচ্ছপটি আগুনে ফেলো। তখন পুড়ে নরম হবে, খেতে কষ্ট হবে না। তাছাড়া পোড়া মাংসের মজাই অন্যরকম।

শেয়ালের পরামর্শ শুনে কচ্ছপের জিহ্বা শুকিয়ে আসে। চোখ লাল হয়। পানি জমে। শরীরের অর্ধেক শক্তি কমে আসে। কচ্ছপ ভাবে, শেয়াল আমার বন্ধু! বন্ধু হয়ে সর্বনাশী বুদ্ধি দিতে পারলো! বাস্তবে শেয়াল কারো বন্ধু হয় না। হতে পারে না। বুঝলাম, শেয়াল যার বন্ধু তার শত্রুর প্রয়োজন হবে না। এরা আজীবন ধূর্ত থাকে। হতে পারে শেয়ালই বাঘ ডেকে এনেছে। এতদিন সে আমার সঙ্গে বন্ধুত্বের ভান করেছে। বিপদের দিনে বন্ধু চেনা যায়।

বাঘ: ভাগিনা, বনে আগুন পাবো কোথায়?

শেয়াল: তাই তো... তাই তো! আরেকটি বুদ্ধি বের করি তাহলে?

বাঘ: খুবই ক্ষুধা পেয়েছে। তাড়াতাড়ি বুদ্ধি বের করো। আমার আর সহ্য হচ্ছে না।

শেয়াল: মামা, একে নদীতে ফেলে দাও। ভিজে নরম হবে। তখন খেতে ভালো লাগবে।

বাঘ: তোমার বুদ্ধির জবাব নেই। এই বনে তুমিই আমার একমাত্র ভাগিনা। বাকিরা শত্রু। না হয় এত ভালো বুদ্ধি কেউ দিলো না কেনো! উল্টো সবাই পালিয়েছে।

বাঘ নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়ায়। সামনে-ডানে-বামে একবার করে তাকায়। তাকানোর পর কচ্ছপটি নদীতে ছুঁড়ে মারে। কচ্ছপ তলিয়ে যায়। পাড়ে অপেক্ষা করে বাঘ। কচ্ছপ ভিজে নরম হয়ে এলেই খাবে। এরপর ক্ষুধা মিটাবে। বাঘের অপেক্ষা শুরু হয়। কচ্ছপ আর ফিরে আসে না।

চারপাশে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। সূর্যও ডুবে যাচ্ছে। পাখিরা ঘরে ফিরছে। বাঘ বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত। রাগে-ক্ষোভে ফিরে আসে শেয়ালের কাছে। এসে দেখে সেখানে শেয়াল নেই। বাঘের বুঝতে বাকি রইল না। মনে পড়ল শেয়াল আর কচ্ছপের বন্ধুত্বের কথা। বোকা বাঘ মনের দুঃখে আবার বনের দিকে হাঁটতে শুরু করে।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!