শেল সিলভারস্টেইনের ছড়া

শেল্ডন অ্যালেন ‘শেল’ সিলভারস্টেইন (১৯৩০ - ১৯৯৯) একজন আমেরিকান সাহিত্যিক, যিনি কার্টুন, কবিতা ও শিশুতোষ বইয়ের জন্য বিখ্যাত। তারা বই তিরিশটিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। প্রচলিত ছন্দকে এড়িয়েও যে মজার ছড়া লেখা যায় তা তিনি দেখিয়েছেন। জনপ্রিয় ছড়াকার আমীরুল ইসলামের অনুবাদ করা কিছু ছড়া এখানে প্রকাশ করা হলো।– কিডস ডেস্ক

আমীরুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2018, 12:25 PM
Updated : 28 July 2018, 12:56 PM

কেন এমন হয়?

কোনো কোনো সকালবেলা

এমন কেন হয়?

কাপড়চোপড় পরতে গেলে

মাপমতো তা নয়।

কেন এমন হয়?

প্যান্টটা ভীষণ টাইট এখন

হয় না নড়াচড়া।

জামা কেন বড্ড ঢোলা

কী আর তখন করা?

দুরকমের সাদা-কালো

ছোট্ট বড় মোজা

পায়ে কেন ঢুকছে না রে

 যায় না সেটা বোঝা!

হ্যাটটা কেন ছোট্ট লাগে

বেল্টটা কেন টাইট

সকালবেলা এসব নিয়ে

করছি আমি ফাইট।

জামা-জুতো ছোট হলেই

অনেক অপচয়

কোনো কোনো সকালবেলা

কেন এমন হয়?

হাসির দেশে

এক যে আছে হাসির দেশ

সবকিছুতে হাসি।

হাসছ কেন? বললে বলে

হাসতে ভালোবাসি।

হাসছে সবাই। হাসির চোটে

কাঁপছে বাড়িঘর।

হাসির দেশে হাসতে হবে

কী বিরক্তিকর!

সিগন্যাল

সবুজবাতি জ্বললে তুমি- ‘যাও’

লালবাতি জ্বললে তুমি- ‘থামো’।

কিন্তু যদি

হলুদবাতি জ্বলে

কিন্তু যদি

কমলাবাতি জ্বলে

কিন্তু যদি

নীলবাতি জ্বলে

তখন তুমি কী করবে- ভাবো

জুতো যখন কথা বলে

আমার আছে এক যে জুতো

সামনে তার হাঁ,

জুতোর সামনে বলি যখন

কথা বলেন না।

জুতোর একটা জিভ রয়েছে

পেরেকগুলোই দাঁত,

জুতোর মুখটা চকচকে খুব

যেই বাড়ালাম হাত-

জুতো বললেন, হাত চাই না

পা চাই আমি- পা,

আমার আছে এক যে জুতো

সামনে তার হাঁ।

আমার মতো

আমি খুবই দুষ্টু ছেলে

বড্ড আমার তেজ,

সবাই বলে আমার নাকি

মস্তবড় লেজ।

চোখটা আমার মায়ের মতো

বাবার মতো নাক,

হাত-পাগুলো দাদার মতো

এসব কথা থাক-

কারও না কারও মতো আমি

এই কথা বলবে না,

ল্যাজটা কিন্তু আমার মতো

ল্যাজ দিয়ে যায় চেনা।

 

রূপকথার গল্প

আজ সকালে লাফ দিয়ে আমি

ঘোড়ার পিঠে চাপি।

যাব দূরের বনে।

যেতে যেতে ...  আমার

পেছনে ধাওয়া করছে বন্য জন্তুরা।

তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে

ফেলে দিল এক গভীর গর্তে।

বুনোবেড়ালের বাস সেখানে।

গুহায় প্রবেশ করতেই

ঘুম ভেঙে গেলো কয়েকজন

জলদস্যুর।

তারা আমাকে বেঁধে ফেলে

লম্বা কাঠের পোলের সঙ্গে।

সামনে জ্বালিয়ে দিল আগুন।

ভয়ে আমি কান্নাকাটি

শুরু করেছি।

এমন সময় সেই গুহায়

এল এক মৎস্যকন্যা।

আমাকে বেঁধে রাখা

দড়ি কেটে দিল।

তারপর মৎস্যকন্যা

বলল, সে আমাকে বিয়ে করতে চায়।

আমি বললাম, আজ নয়।

আগামী বুধবার আমি আবার আসব।

কিন্তু জানি, এটা আমি তাকে

মিথ্যা বলছি।

তারপর আমি জোরে

দৌড় দিয়ে বের হয়ে এলাম

গুহা থেকে।

কোথায় যাব? কোন দিক

দিয়ে পালাব আমি?

পাথর, বালি, পানির উপর দিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছি-

দৌড়াতে দৌড়াতে

অসম্ভব ক্লান্ত হয়ে গেলাম আমি।

একটা জলের-সাপ ছুটে এল

আমার দিকে।

পেছনে পাথর।

সামনে সাপ।

কোথায় যাব আমি?

এমন সময় একটা ঈগল

ছোবল মেরে তুলে নিল আমাকে।

উড়ে গেল অনেক উঁচুতে।

তারপর আমাকে ছুড়ে ফেলল

গরম জলের হ্রদে।

টগবগ করে পানি ফুটছে।

হাজার মাইল লম্বা সেই হ্রদ।

কিন্তু তোমরা আমাকে প্রশ্ন করো না

তারপর আমি কী করলাম?

ভয়াবহ রেস্টুরেন্ট

হোটেলে ঢুকেই আমি বললাম, আমি একটা

বিফ স্টেক খাব।

খুব মৃদুস্বরে কেউ গোঁগোঁ করে উঠল।

ওঠো-বিফ স্টেক!

আমি উপর দিকে তাকালাম। এবং অনুভব করলাম,

আমার খাবারের অর্ডার নেওয়ার জন্য সামনে দাঁড়িয়ে আছেন

জামা-প্যান্ট পরা

একজন নিরীহ গরু।

আমি তাকে দেখেই চিৎকার করে উঠলাম,

ভুল... ভণ্ডুল হয়ে গেছে আমার।

ভুলে যাও বিফ স্টেকের কথা।

আমি এর বদলে চিকেনের কোনো আইটেম চাই।

কক করে শব্দ শুনলাম আমি।

তারপর অনুভব করলাম,

টেবিলে টেবিলে খাবারের প্লেট নিয়ে যে ছোটাছুটি করছে

সে আসলে একজন মুরগিছানা।

আমি বললাম, ওকে! ওকে!

আমার কোনো মুরগির তরকারি দরকার নেই।

আমি চাই মাছ।

সমুদ্রের মাছের কোনো আইটেম।

তারপর অবাক হয়ে একটু দূরে তাকিয়ে দেখি

রান্নাঘরের দরজায়

রাঁধুনির পোশাক পরে

দাঁড়িয়ে আছেন

বিশাল আকারের একজন সামুদ্রিক মাছ।

এবার আমি ভয় পেয়ে গেলাম।

তাহলে কী খাওয়া যায়?

কী খাব আমি?

এমন কোনো পেঁয়াজ বা গাজর বা টমেটো

নিশ্চয়ই নেই।

তাহলে এক প্লেট সালাদ খাওয়াই উত্তম।

সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

তারা বলল, না সালাদ নেই।

আমি সামনে তাকিয়ে

দেখি- এই দোকানের যিনি ম্যানেজার

তিনি চুপচাপ বসে আছেন।

তার মাথাটা একটা বড় বাঁধাকপির মতো।

 

জেব্রা তুমি কেমন আছ

জেব্রা তুমি কেমন আছ?

তোমার গায়ে কি শাদার উপর

কালো দাগ?

নাকি কালোর উপর শাদা দাগ?

তখন জেব্রা উল্টো আমাকে

শুধালা

তুমি কি ভালো- অনেক খারাপ

গুণের মধ্যে?

নাকি তুমি খারাপ- অনেক

ভালো গুণের মধ্যে?

শান্ত সময়ে তুমি কি চিৎকার কর?

নাকি চিৎকারের ভেতরে

তুমি শান্ত থাক?

দুঃখের দিনে তুমি কি সুখী থাক?

নাকি সুখের দিনে তুমি দুঃখি থাক?

আরও আরও আরও

নানা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল জেব্রা।

আমি জেব্রাকে আর

কোনোদিন শুধাব না

তার গায়ের শাদা-কালো

দাগ নিয়ে।

অলঙ্করণ: শেল সিলভারস্টেইন