বাবা তুমি কোথায়?

টুনটুনির আজ খুব মন খারাপ। বাবাকে বলে রেখেছিল, রোববার সে বাবার সঙ্গে স্কুলে যাবে। কিন্তু তার ঘুম ভাঙার আগে বাবা অফিসে চলে গিয়েছে।

জ্যোৎস্নালিপিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2018, 09:57 AM
Updated : 1 July 2018, 09:57 AM

টুনটুনি কিছুতেই স্কুলে যাবে না আজ। বাবা কেনো তাকে স্কুলে না দিয়ে অফিসে চলে গেল। এবার সে হাতপা ছড়িয়ে কাঁদতে বসে গেছে। মা কিছুতেই তার কান্না থামাতে পারে না। এতো করে মা বলে, বাবা আরেকদিন তোমায় স্কুলে নিয়ে যাবে। আজ তো বাবার অফিস আছে টুনিপাখি কাঁদে না মা।

টুনটুনি কাঁদে আর বলে, না, বাবা আজ নিয়ে যাবে, তুমি নিয়ে যাবে না। সব সময় তুমি নিয়ে যাও আজ তুমি যাবে না- অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ..। টুনিপাখি বাবা তো মাঝে মাঝে তোমায় স্কুলে নিয়ে যায়, বাবার তো খুব সকালে অফিস; তাই নিয়ে যেতে পারে না। টুনটুনি হাতপা ছোড়ে আর বলে, না, বাবা আমায় আদর করবে না! আমি বাবার সঙ্গে ঘুমাব না! খেলব না! হাপুসহুপুস করব না! কিচ্ছু করব না! বাবা আমায় ভালোবাসে না!

মা বলে, তুমি বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলো? না, আমি কথা বলব না। স্কুলেও যাব না। আমার পাঁচটা বাবা থাকবে। একটা বাবা থাকবে না। এই বলে কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতেই ঘুমিয়ে পড়ে সে। মা খুব যত্ন করে বিছানার শুইয়ে দেয় তাকে, যাতে ঘুম না ভেঙে যায়। মা’রও খুব মন খারাপ হয়।

টুনটুনির বাবা পেশায় চিকিৎসক। একদম সময় করে উঠতে পারে না। টুনটুনি ঘুমিয়ে থাকতেই সে অফিসে চলে যায়, তারপর ফিরতে ফিরতে অনেক রাত। টুনটুনি খুব করে চায় বাবার কাছাকাছি থাকতে, কিন্তু বাস্তবতার কারণে সেটা হয়ে ওঠে না। কী করা যায়, ভেবে পায় না টুনটুনির মা। টুনটুনি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। তার গাল বেয়ে শুকিয়ে যাওয়া জলের দাগ। মা হাত দিয়ে আদর করে দেয়। সে খেয়াল করে টুনটুনি ঘুমের মধ্যে হাসছে আর বাবা বাবা বলে তাকে জড়িয়ে ধরছে। মা-ও টুনটুনিকে জড়িয়ে থাকে। টুনটুনি বাবা বাবা বলে আরো জড়িয়ে ধরে মাকে।

এই তো বাবা তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলছে। বলছে, টুনটুনি মা ওঠো, সকাল হয়ে গেছে স্কুলে যাবে না? টুনটুনি বলে, আরেকটু ঘুমাব। বাবা মাথায় হাত রাখে। টুনটুনি ঘুম ভেঙে যায়; বলে, আজ তোমার অফিস টাটা নেই বাবা? বাবা বলে, আছে তো? আমি তো অফিস টাটা চলে গিয়েছি। টুনটুনির চোখে বিস্ময়! সে বলে, তাহলে আমার সঙ্গে স্কুলে যাবে কীভাবে? তুমি যে বলেছিলে তোমার পাঁচটা বাবা চাই, আমি পাঁচজন হয়ে গেছি। একজন তো অফিস টাটা গেছে। আর এই আমি তোমায় ব্রাশ করিয়ে দেব, তারপর স্কুল ড্রেস পরিয়ে স্কুলে নিয়ে যাব। ওঠো ওঠো ব্রাশ করো, স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে।

টুনটুনি তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে। বাবা তাকে ব্রাশ করিয়ে স্কুল ড্রেস পরিয়ে নিজে হাতে নাশতা খাইয়ে স্কুলে নিয়ে যায়। টিফিনেও সে দেখে, বাবা খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। টুনটুনি খুব খুশি  হয়ে বলে, বাবা তুমি টিফিনেও আছ! বাসায় যাওনি? গিয়েছি তো, আমি তো আরেকজন। তুমি যেমনটি চেয়েছিলে। তাই, তাহলে তো খুব মজা। এবার বেড়াতে যাওয়ার পালা। বাবা পাঞ্জাবি পরে রেডি হলো। বলে, চল টুনটুনি মা তোমায় বেড়াতে নিয়ে যাই। কোথায় কোথায় বেড়াবে বলো? টুনটুনি বলে, অনেক জায়গায়।

বাবার  হাত ধরে সে শিশুপার্কে বেড়াতে চলে যায়। এবার টুনটুনির ঘুমানোর পালা। ঘুমের কথা ভাবতেই বাবা বলে, এই তো আমি। টুনটুনি বলে, আজ  তোমার বইপড়া নেই বাবা। প্রতিদিন তো তুমি অনেক রাত জেগে বই পড়। আমাকে বলো- ‘টুনটুনি মা, বাবাকে বইপড়ার সময় বিরক্ত করে না। তুমি এখন ছোট্ট; বড়ো হয়ে যখন ডাক্তার হবে, তখন এসব বই তোমাকেও পড়তে হবে।’ আজ কেন কিছু বলছ না। আমি তো বই পড়ছি। আমি হলাম পাঁচজনের একজন। তুমি তো তোমার পাঁচজন বাবাকে চেয়েছিলে তাই না! যারা সব সময় তোমার কাছাকাছি থাকবে, আদর করবে। তুমি চাইলেই বাবাকে কাছে পেয়ে যাবে। বাবার জন্য আর কখনো তোমায় মন খারাপ করতে হবে না। তাই তো আমি পাঁচজন হয়ে গেছি।

টুনটুনি খুব খুশি হয়। তুমি প্রতিদিন এভাবেই থাকবে তো? থাকব, আমি তো সবসময় তোমার কাছেই থাকি। তোমার এই ছোট্ট বুকের মধ্যে। বাবা টুনটুনির ছোট্ট বুকে হাত রাখে। টুনটুনি আজ খুব খুশি। তার আর কোনো কষ্ট নেই। মা-বাবা দুজনই তার কাছে থাকবে। কত্তো মজা এখন তার।

মায়ের বুকের ওপর আরো নিবিড় করে ঘুমিয়ে পড়ে টুনটুনি। আর ঘুমের ঘোরে বলে, বাবা আরেকটু তোমার বুকের মধ্যে ঘুমাবো। মা হাসে। সে বোঝে টুনটুনিটা তাকেই বাবা মনে করে বুকের ওপর ঘুমাচ্ছে। সে তাকে আরেকটু ঘুমাতে দেয়।