মেঘ কতো প্রকার ও কী কী

প্রাচীন ভারতীয় কবি কালিদাস মেঘ নিয়ে লিখেছেন ‘মেঘদূত’ কাব্য। সেখানে তিনি মেঘকে ডেকেছেন বিভিন্ন নামে। বাংলা ভাষায়ও মেঘের রয়েছে বিভিন্ন নাম- জীমূত, ঘন, বারিবাহ, নীরদ, জলধর, কাদম্বিনী, সংবর্তক, জলদ, বারিদ, পয়োদ, অভ্র, পর্জন্য, পয়োমূক ও বারিবাহন ইত্যাদি।

দেবলীনা ঘোষবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2018, 11:28 AM
Updated : 1 June 2018, 11:41 AM

আবার গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষরা মেঘকে অনেক নামে ডাকেন। পল্লীকবি জসীম উদ্দীন তার নকশী কাঁথার মাঠে (১৯২৯) বর্ণনা করেছেন নানা রকম মেঘের কথা- কালিয়া মেঘ, প্রভাতী মেঘ, কাজল মেঘ, ধূলট মেঘ, তুলট মেঘ, আড়িয়া মেঘ, হাড়িয়া মেঘ, সিঁদুর মেঘ, কানা মেঘ, কালো মেঘ, কুড়িয়া মেঘ, ফুলতোলা মেঘ, আরও কতো যে নাম!

গ্রামবাংলার অনেক বয়স্ক মানুষ মেঘ চেনেন, বুঝতে পারেন মেঘের ভাষা। অনেক প্রবীণ তাই মেঘ দেখেই আবহাওয়ার আভাস পেয়ে যান। মেঘ বলতে পৃথিবীর বা অন্য কোনো গ্রহের আবহাওয়ামণ্ডলে ভাসমান জলকণার সমষ্টি বোঝানো হয়। সাধারণত পানি পৃথিবীতে কোথাও স্থির অবস্থায় থাকেনা, বিভিন্ন মাধ্যমে আবর্তিত হয় এবং অবস্থার পরিবর্তন করে।

বিভিন্ন প্রকার মেঘ:

১. অলক মেঘ: এ মেঘ দেখতে বরফ স্ফটিকের পাখনার মতো। মেঘের উপরে অনেক উঁচুতে এরা গঠিত হয়। এদের কিছু কিছু পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে দশ মাইলের মতো উচ্চতায় তৈরি হয়ে থাকে।

২. আনুভূমিক মেঘ: এ ধরণের মেঘ সাধারণত মাটি থেকে মাত্র কয়েকশ ফুট উপরে তৈরি হয়। এরা হালকা-পাতলা কুয়াশার মতো। ভোরবেলা কিংবা সন্ধ্যায় যখন বাতাস স্থির থাকে, তখন এ ধরনের মেঘ দেখা যায়।

৩. পুঞ্জ মেঘ: এ মেঘ হলো পুঞ্জিভূত মেঘ। এ ধরনের মেঘকে ‘ছায়া মেঘ’ বলা হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে এদের আকাশে দেখা যায়। পৃথিবী থেকে মাত্র এক মাইল উপরে থাকে এবং মাটিতে দ্রুত ধাবমান ছায়া ফেলে।

মধ্য বিকেলে সূর্য যখন সর্বাধিক উষ্ণ থাকে, তখন এরা আকার ও সংখ্যায় বেড়ে যায় এবং এদের শীর্ষদেশ কয়েক মাইল পর্যন্ত উঁচুতে উঠে যায়। সন্ধ্যাবেলা এরা আনুভূমিক মেঘের স্তরে মিশে অদৃশ্য হয়ে যায়।

৪. জলধ মেঘ: এগুলো হচ্ছে ঘন ধূসর বর্ণের বর্ষণ মেঘ। এদের গঠন-প্রকৃতি আকারবিহীন। বর্ষণ মেঘের নিচের দিকে অর্ধাংশ থাকে জলকণায় ভারি, কখনও কখনও বৃষ্টির ফোঁটায় পরিণত হয়ে নিচে পতিত হয়। বিভিন্ন ধরনের মেঘকে আবার সংযুক্ত আকারেও দেখা যায়।

৫. উচ্চপুঞ্জ মেঘ: এ মেঘ গোলাকার, মহাতরঙ্গময়, সাদা কিংবা ধূসরাভ। এগুলো ছোট ছোট মেঘপুঞ্জের ঘনসন্নিবিষ্ট রূপ। আট থেকে বিশ হাজার ফুট উচ্চতায় এদের দেখা যায়।

৬ উচ্চ আনুভুমিক মেঘ: এ মেঘ দেখতে পুরু, ধূসর নীলাভ পাতের ন্যায় মাটি থেকে সাড়ে ছয় হাজার থেকে বিশ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থান করে।

৭. ঘন অনুভূমিক মেঘ: বিশ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত বরফ স্ফটিকে গঠিত এক প্রকার পাতলা সাদা পাতের মতো এ মেঘ।

৮. অলকাপুঞ্জ মেঘ: এ মেঘ হচ্ছে ঘন মেঘমালার ভেতর গঠিত এক টুকরা মেঘ, দেখতে সাগর তীরের বালুকারাশির ঢেউয়ের মতো। বিশ হাজার ফুট উচ্চতায় এ মেঘ গঠিত হয়।

৯. পুঞ্জ বর্ষণ মেঘ: এ মেঘকে ‘বজ্রমস্তক’ বলা হয়। এরা অনেকটা দেখতে ফুলকপির মতো। এ ধরনের মেঘ বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে উপর পর্যন্ত দেখা যায়।

১০. আনুভূমিক পুঞ্জ: এ মেঘ হচ্ছে সেই সব বিন্দু বিন্দু মেঘ যা পৃথিবী পৃষ্ঠের কাছাকাছি থেকে শুরু করে সাড়ে ছয় হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তার হয়ে থাকে।

তথ্যসূত্র:

১. নকশী কাঁথার মাঠ, পল্লীকবি জসীম উদ্দীন

২. বৃষ্টি ও বজ্র, মুহাম্মদ ইব্রাহীম, বাংলা একাডেমি

৩. উচ্চ মাধ্যমিক কিশোর ভূগোল, বৃন্দাবনচন্দ্র রায়, বাণী সংসদ- কলকাতা

৪. ক্লাউড টাইপস, কমন ক্লাউড ক্ল্যাসিফিকেশন, ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়