মহাবিশ্বের গোপন চাবি

‘জর্জেস সিক্রেট কি টু দ্য ইউনিভার্স’ নামে বইটি লিখেছেন পদার্থবিজ্ঞানী স্টিভেন হকিং ও তার মেয়ে লুসি হকিং।

মাজহার সরকারমাজহার সরকার
Published : 14 March 2018, 12:31 PM
Updated : 14 March 2018, 12:31 PM

বই: জর্জেস সিক্রেট কি টু দ্য ইউনিভার্স, লেখক: স্টিভেন হকিং ও লুসি হকিং, ধরণ: বিজ্ঞান কল্পকাহিনি, অলঙ্করণ: গ্যারি পারসন, পৃষ্ঠাসংখ্যা: ২৯৭, প্রকাশক: র‍্যানডম হাউজ যুক্তরাজ্য, প্রকাশকাল: ২০০৭। এ বইটির আরও পাঁচটি সিক্যুয়াল রয়েছে- ‘জর্জেস কসমিক ট্রেজার হান্ট’ (২০০৯), ‘জর্জ অ্যান্ড দ্য বিগ ব্যাং’ (২০১১),  ‘জর্জ অ্যান্ড দ্য আনব্রেকেবল কোড’ (২০১৪), ‘জর্জ অ্যান্ড দ্য ব্লু মুন’ (২০১৬) ও ‘জর্জ অ্যান্ড দ্য শিপ অফ টাইম’ (২০১৮)।

বইটির প্রধান চরিত্র জর্জ নামে এক কিশোর। তার বাবা-মা মনে করে প্রযুক্তি বিশ্বকে ধ্বংস করছে। তাই এর প্রতিবাদ করে। তারা তাদের গাড়ি, কম্পিউটার ও টেলিফোন বেচে দেয়। এমনকি তাদের বাসায় কোন বৈদ্যুতিক বাতিও নেই, রাতে বাসায় জ্বলে মোমবাতি!

ফ্রেডি নামে একটি শুকরছানা আছে জর্জের। জর্জ তাকে পছন্দ করলেও তার বাবা-মা পছন্দ করে না। জর্জের বাবা-মা চায় জর্জ বড় হয়ে কৃষক হোক, কিন্তু জর্জ যে জিনিসটা মনেপ্রাণে চায় সেটা হলো একটা কম্পিউটার।

একদিন ফ্রেডি গেলো হারিয়ে। কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জর্জ জানতো ফ্রেডি হয়তো পাশের বাড়ি বা আশপাশে কোথাও ঘুরতে গেছে। তবু জর্জ তাকে খুঁজতে গেলো বাড়ির পাশে জঙ্গলে যাকে বলা চলে ‘ছোট্ট আমাজন’। সেখানে গিয়ে জর্জ দেখা পেলো তার প্রতিবেশী বন্ধুদের- ইরিক, অ্যানি ও তাদের কম্পিউটার যার নাম ‘কসমস’। ‘কসমস’ সম্পর্কে জর্জ অনেক অল্প জানলেও এতোটুকু জানতো যে এ কম্পিউটার অনেক শক্তিশালী।

জর্জ জানলো যে কীভাবে বিজ্ঞানকে মানবতার কল্যাণে কাজে লাগানো হয়। জানলো কম্পিউটার ‘কসমস’ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী যন্ত্র যার অনুভূতি মানুষের মতোই এবং সে কথা বলতে পারে। জর্জ নক্ষত্রের জন্ম ও মৃত্যু নিয়ে তৈরি একটি চলচ্চিত্র দেখলো এবং জেনে নিলো সূর্য ও তার চারপাশে ঘূর্ণায়মান সব গ্রহ সম্পর্কে।

নেবুলা নামে একটি তারা মেঘের ধুলো ও গ্যাস থেকে সৃষ্টি হয়। তবে এগুলো হলো তারাদের সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা। একটা তারার বয়স যখন দশ হাজার বছরের বেশি হয়ে যায় তখন সে তার ভেতরে আরও শক্তি সঞ্চয় করে ও আকারে বড় হতে থাকে।

পরের দিন স্কুলে গিয়ে জর্জ কম্পিউটার ‘কসমস’-এর ছবি আঁকার চেষ্টা করলো। কিন্তু ছবিটা খুব ভালো হলো না, যদিও জর্জ তার কল্পনায় ঠিক ঠিক তার অবয়ব মনে করতে পারছিলো। তার আঁকা যখন শেষ হলো ক্লাসটিচার ডক্টর রেপার (যাকে তারা ডাকতো গ্রেপার বলে) এসে দেখলেন ছবিটা, জিজ্ঞেস করলেন এটা কী? জর্জ ছবিটা তাড়াতাড়ি লুকানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু ডক্টর রেপার ঠিকই দেখে ফেললো ও কেড়ে নিলো। জর্জের ভীষণ মন খারাপ হলো, কারণ সে ইরিককে কথা দিয়েছিলো যে কম্পিউটার ‘কসমস’ নিয়ে কাউকে কিছু বলবে না।

স্কুল ছুটির আগে জর্জ তার ছবিটা ডক্টর রেপারের ড্রয়ার থেকে চুরি করলো। কিন্তু ছুটির পর সে যখন বাড়ি ফিরছিলো দুষ্টু রিংগো ও তার দল তার পিছু নিলো। জর্জ দৌড়াতে শুরু করলো, কারণ রিংগো পথে কোন শিশু দেখলেই বিরক্ত করে। কিন্তু জর্জের পেছনে রিংগোর দলও তার বাড়ি পর্যন্ত এসে গেছে। জর্জ দরজা খুলতে গিয়ে দেখে পকেট থেকে চাবি পড়ে গেছে, এমনকি পকেটে রাখা অন্য জিনিসগুলোও নেই। জর্জের মনে হলো সে দৌড়াতে গিয়ে একবার মাটিতে হোঁচট খেয়েছিলো, তখনই হয়তো সব পড়ে গেছে।

এদিকে দুষ্টু রিংগো যখনই জর্জকে পেয়ে দেয়ালের মধ্যে ঠেস দিতে যাবে, এমনি একজন ক্ষুদে মহাকাশচারী এসে উপস্থিত হলেন। তিনি দুষ্টু রিংগো ও তার দলকে মারপিট করলেন, ভয় দেখালেন যে বাড়াবাড়ি করলে এলিয়েনদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এতে তারা ভয় পেলো এবং যত দ্রুত সম্ভব দৌড়ে পালিয়ে গেলো।

জর্জ উদ্ধারকারী মহাকাশচারীর পেছনে যেতে লাগলো। যখন তারা ইরিকের বাড়িতে ঢুকল, জর্জ বুঝতে পেরেছিল যে মহাকাশচারীটা হলো অ্যানি। জর্জের জন্য দিনটা ছিলো সত্যি খারাপ। কারণ সে ভুল করে কম্পিউটার ‘কসমস’ সম্পর্কে অনেক কিছু বলে ফেলেছে ডক্টর রেপারকে। আবার তাকে আক্রমণ করেছে দুষ্টু রিংগো ও তার দল। আর এই সবকিছু থেকে তাকে উদ্ধার করেছে স্পেস স্যুট পরা অ্যানি নামের ছোট্ট মেয়েটি।

জর্জ অ্যানিকে জিজ্ঞেস করলো, কেন সে স্পেস স্যুট পরে আছে এবং সে কীভাবে তার বাবার সঙ্গে মহাকাশযান চড়েছিলো। জর্জের এসব বিশ্বাস হতো না যে স্পেস স্যুট পরে মহাশূন্যে ঝাঁপ দেওয়া যায়। কিন্তু সে ধীরে এসব জানতে থাকে এবং পুরো সৃষ্টির রহস্যই যেন তার সামনে উন্মোচিত হতে থাকে।