চলছে বইমেলা, বন্ধুরা কই গেলা!

চলছে অমর একুশে বইমেলা। এসময় কি আর ঘরে বসে থাকা যায়! গল্প ছড়া আর নানা কাহিনী নিয়ে কতো কতো বই অপেক্ষা করছে, আর আছে সিসিমপুরের হালুম-ইকরি-টুকটুকি।

মাজহার সরকারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2018, 06:21 AM
Updated : 18 Feb 2018, 06:33 AM

বাবা-মার হাত ধরে, কোলে বা পিঠে চড়ে মেলা প্রাঙ্গণ চষে বেড়ানোর এইতো সময়। স্টল থেকে স্টলে ছুটাছুটি করে হাতে তুলে নিতে হবে পছন্দের বই।

এবারের মেলায় শিশুদের জন্য এসেছে প্রচুর ভালো ভালো বই। এর মধ্য থেকে মেলায় আসা কিছু বইয়ের খবর-

বড় হবে ঝিলমিল

লেখক: মুহম্মদ জাফর ইকবাল, প্রকাশনী: অনুপম প্রকাশনী, ক্যাটাগরি: কমিকস ও ছবির গল্প, প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ: সাদাতউদ্দীন আহমেদ এমিল, মূল্য: ১১০ টাকা

ঝিলমিল কখন বড় হবে সে আর অপেক্ষা করতে পারছে না। বড় হয়ে সে কী হবে সেটা নিয়ে তার অবশ্য কোনো সমস্যা নেই। ঝিলমিল ঠিক করেছে বড় হয়ে সে একসঙ্গে সবকিছু হয়ে যাবে।

কিন্তু একসঙ্গে কী সবকিছু হওয়া যায়? ঝিলমিলকে নিয়েই লেখা হয়েছে এ বইটি।

ত্রাতিনা

লেখক: মুহম্মদ জাফর ইকবাল, প্রকাশনী: সময় প্রকাশন, ক্যাটাগরি: সায়েন্স ফিকশন, মূল্য: ২৬০ টাকা

ত্রাতিনা চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলো, ‘আমি কোথায়?’ তার কণ্ঠস্বর দূরে মিলিয়ে গেল। তারপর প্রতিধ্বনিত হয়ে আবার ফিরে এল। আমি কোথায়...আমি কোথায়...আমি কোথায়...। খুব ধীরে ধীরে প্রতিধ্বনিগুলো মিলিয়ে যেতে থাকে। তারপর একসময় আবার সেই নৈশব্দের শূন্যতায় ডুবে যায়।

ত্রাতিনা আবার চিৎকার করলো, ‘আমি কোথায়?’ তার চিৎকার বহু দূর থেকে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে, প্রতিধ্বনিত শব্দগুলো ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকে। শব্দগুলো মিলিয়ে যেতে যেতে আবার নতুন করে অনুরণিত হয়। ত্রাতিনার মনে হয় সে বুঝি কারও কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়েছে। স্পষ্ট বোঝা যায় না, কিন্তু কোন এক ধরনের কণ্ঠস্বর। মনে হয় কেউ কিছু একটা বলছে।

জয় বাংলার ছড়া জয় মুজিবের ছড়া

লেখক: লুৎফর রহমান রিটন, প্রকাশনী: অনার্য প্রকাশ, ক্যাটাগরি: ছড়া, প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ: হাশেম খান ও সোহাগ পারভেজ, মূল্য: ১৫০ টাকা

বইটি সম্পর্কে লেখক লুৎফর রহমান রিটন বলেন, “একটা সময় ছিলো যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামটা উচ্চারণ করাও ছিলো রীতিমতো দুঃসাহসের ব্যাপার। পাঠ্যপুস্তক থেকে মুছে ফেলা হয়েছিলো বাংলাদেশের স্থপতির নাম। রেডিও-টেলিভিশন-সংবাদপত্র থেকেও নির্বাসিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেই গ্রহণকালের দমবন্ধ গুমট পরিবেশে কবি-লেখক-শিল্পীরাই ছিলেন দুঃসময়ের অর্গল ভাঙার লড়াকু সৈনিক। বর্তমান প্রজন্ম কোনোদিন উপলব্ধিই করতে পারবে না কী এক ক্রান্তিকাল আমরা অতিক্রম করেছিলাম।”

তিনি বলেন, “মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু বুক শেলফে সাজিয়ে রাখার কোনো শো পিস নন। পাঠ করতে হয় তাঁকে। বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করতে হয় চিন্তায়-চেতনায়-মননে ও মেধায়।”

নদীর নাম ঝিলমিল

লেখক: আমীরুল ইসলাম, প্রকাশনী: প্রতিভা প্রকাশ, ক্যাটাগরি: শিশু-কিশোর গল্প, প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ: ধ্রুব এষ, মূল্য: ২০০ টাকা

ছোট্ট একটা পাহাড়ি নদী। পাহাড়ের বুক চিরে কুলকুল করে বয়ে যায়। পাহাড়ের নাম কী? পাহাড়ের নাম টুকটুক। পাহাড়ের ওপরে আকাশ। আকাশের নাম নীলনীল। আর পাহাড়ি নদীটির নাম ঝিলমিল। ঝিলমিল নদীর তীরে প্রতিদিন আসে একটা মেয়ে। মেয়েটির নাম ঝিমলি।

ঝিমলি থাকে ওই নদীর তীরে। বিশাল একটা বটগাছের তলায়। বটগাছের পাতা খসে ছায়া আসে। বটগাছের পাশে আছে বিশাল এক ঘন বেলগাছ। আর একটু দূরে আছে চকচকে সবুজ পাতায় ছাওয়া দীর্ঘ এক নিমগাছ। নিমগাছের ডাল যেন নীল-নীল আকাশ ছুঁয়েছে।

বোকা বানরের গল্প

লেখক: মোজাম্মেল হক নিয়োগী, প্রকাশনী: কালান্তর, ক্যাটাগরি: গল্প, প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ: মামুন হোসাইন, মূল্য: ১০০ টাকা

এ বইয়ে রয়েছে দুটি গল্প। একটি গল্পে আছে এক হাতি বনের পথে শুয়ে ঘুমুচ্ছে। কিন্তু বানরেরা মনে করেছে হাতিটি মারা গেছে। তারা মরা হাতিকে পথ থেকে সরানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বুঝতে পারে হাতিটি মৃত নয়, ঘুমন্ত। হাতির তাড়া খেয়ে ওরা পালিয়ে যায়।

দ্বিতীয় গল্পে একটি সাঁকোকে বানরেরা মনে করে নদীর ওপর বাঁধ। তারা বাঁধ কাটতে গিয়ে নদীতে ঝুপ ঝুপ করে পড়ে। শীতের রাতে নাজেহাল হয়ে নিজেদের বোকামির জন্য হাসতে থাকে।

ছালাদিনের মোবাইল দৈত্য

লেখক: মোজাম্মেল হক নিয়োগী, প্রকাশনী: কালান্তর, ক্যাটাগরি: গল্প, প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ: মামুন হোসাইন, মূল্য: ১০০ টাকা

তিনটি গল্পের সংকলিত এ বইটি মূলত শিক্ষামূলক। একটি গল্পে চেরাগের দৈত্য সৎ মানুষ না হলে হাতের তালুর ঘষায় চেরাগ থেকে বের হয় না। অনেকেই চেরাগের দৈত্য বের করতে চাইলে দৈত্য তাদেরে অসৎ মনে করে। শেষে একটি শিশু দৈত্যকে বের করে আনে বটে, তবে তার চাওয়া কেবল পুতুল আর চকলেট!

শেষের গল্পটিতে রয়েছে মানুষের জীবনের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় তিনটি জিনিস দৈত্যের কাছে চায় এক শিশু। তারপর সে পায় জ্ঞান-বুদ্ধি, শক্তি ও সততা। কিন্তু পাওয়ার কৌশল হিসেবে দৈত্য বলে- স্বপ্ন দেখুন। তারপর দৈত্য অদৃশ্য হয়ে যায়।

আমিও ফড়িং তুমিও ফড়িং

লেখক: মাসুম আওয়াল, প্রকাশনী: পার্ল পাবলিকেশন, ক্যাটাগরি: ছড়া, প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ: চারু পিন্টু ও আশফাকুল আশেকীন, মূল্য: ১০০ টাকা

মজার ছড়া দিয়ে ভরা মিষ্টি ছড়ার এ বই। ছড়াগলো পড়ে ছোটরা ছন্দের তালে দুলতে দুলতে যেমন আনন্দ পাবে, অন্যদিকে সমান মজা পাবে বড়রাও।

ছড়াকার মাসুম আওয়াল বইটির পরিচয় দিয়েছেন ছড়ায় ছড়ায়। ‘এ বইটা হাতে নিয়ে হারিয়ে যেতে পারো তুমি, নতুন ছড়ার সুরে, তোমার জন্য লিখেছি সব, কুড়কুড়ে মুড়মুড়ে। এই বইটায় তোমার দেখা, বৃষ্টি আছে ফড়িং আছে, পুতুল আছে হাতি আছে, সিংহ আছে, আছে শখের ঘুড়ি, এই বইটায় কবি আছে ছবি আছে, পাখি আছে, খুশির মাখামাখি আছে, আছে পিচ্চি বুড়ি। এই বইটায় গ্রামকে পাবে শহর পাবে, মাকে পাবে, পাবে প্রিয় দেশ, পড়েই দেখ ছড়াগুলো, ছড়িয়ে দিবে মনের ভেতর, ভালোবাসার রেশ।’

‘আমিও ফড়িং তুমিও ফড়িং’ মাসুম আওয়ালের তৃতীয় ছড়ার বই। তার লেখা অন্য দুটি বই হলো, ‘ছুটছে মজার ছড়ার গাড়ি’ ও ‘ভূততাড়ুয়া’।

রঙধনু সাত রঙ

লেখক: সুমন মাহমুদ, প্রকাশনী: জেব্রাক্রসিং, ক্যাটাগরি: ছড়া, প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ: বনলতা সরকার, মূল্য: ১০০ টাকা

বাইশটি ছড়া নিয়ে এ বইটি শিশুদের নির্মল ভালো লাগার আবেশ তৈরি করে দেবে। ছন্দের সুনিপুণ দোলা এ ছড়াগ্রন্থটিকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। শিশুদের পাশাপাশি বড়দেরও ভালো লাগা তৈরি করবে।

ছড়াকার সুমন মাহমুদ বলেন, “যারা সুকুমার রায়ের পর আর ভালো ছড়া লেখা হচ্ছে না বলে মনে করেন, তারা এ বইটি একবার পড়ে দেখতে পারেন। তারা সেই ভুল বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে নিজেই মুগ্ধতার প্রকাশ ঘটাবেন বলে আশা করা যায়।”