নাট বল্টু

কিডস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2018, 11:18 AM
Updated : 5 Jan 2018, 11:32 AM

বই : নাট বল্টু, লেখক : মুহম্মদ জাফর ইকবাল, প্রকাশনী :জ্ঞানকোষ প্রকাশনী, প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ, অলঙ্করণ : আবুল বারাক আলভী, মূল্য : ১৩২ টাকা

বল্টুর বয়স আট। সে গল্প শোনতে পছন্দ করে। তাকে বানিয়ে বানিয়ে গল্প শোনাতে শোনাতে এক সময় তার মায়ের গল্পের রসদ ফুরিয়ে যায়। তখন শুরু হয় বই থেকে গল্প বলা।

মা গল্প শোনালে বল্টু চোখ বড় বড় করে মুগ্ধ হয়ে শোনে। বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বল্টু একসময় পড়তে শিখে যায়। সে কোন অক্ষর চেনে না, কিন্তু পড়তে পারে। এর চেয়ে অদ্ভূত ব্যাপার আর কি হতে পারে!

গল্প শুনতে শুনতে বল্টু তার মা-বাবা রাজু ও রিতুকে নানা প্রশ্ন করে, হাতে কলমে পরীক্ষা করে। শুধু তাই নয়, খাঁটি বিজ্ঞানীদের মতো সে পড়াশোনাও করে।

বল্টুর সব সময়ের সঙ্গী হলো নান্টু। নান্টু কখনো রাগে না। তার মধ্যে রাগ-ক্রোধ-হিংসা কিচ্ছু নেই। ছয় বছরের ছোটখাটো এ মানুষটি পুরোপুরি একজন দার্শনিক। যদি ছোট বাচ্চাদের গালে দাড়ি গজানোর উপায় থাকতো তাহলে নান্টুকে দেখা যেতো মুখে লম্বা লম্বা সাদা দাড়িওয়ালা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো। নান্টুর দাড়ি নেই সত্যি; কিন্তু তার কথাবার্তা, চালচলন, ভাবভঙ্গি রবীন্দ্রনাথের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।

ক্ষুদে বিজ্ঞানী বল্টু আর ক্ষুদে দার্শনিক নান্টুকে নিয়েই এ উপন্যাসের বই ‘নাট বল্টু’। নানা বিস্ময়কর সব ঘটনা দিয়ে সাজানো হয়েছে এ উপন্যাস।

বল্টু মোটা মোটা বই পড়ে। বই পড়তে পড়তে ঘরের লাইট বন্ধ না করেই মুখের ওপর বই রেখে ঘুমিয়ে যায়। সারাদিন বাসায় সে অদ্ভূত সব কাণ্ড করে। একবার বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করতে গিয়ে সে ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলো, আরেকবার ফ্রিজের ভেতর ছেড়ে দিয়েছিলো ইঁদুরের বাচ্চা, সিডি প্লেয়ারটাতে একটা গান চলার আগেই টুকরা টুকরা করে ফেলেছিলো।

মাঝে মাঝে বল্টু পকেটে কোলা ব্যাঙ নিয়ে ঘুমায়। বল্টু হলো এমনই ছটফটে আর কৌতূহলি।

বল্টু সারাদিন যা নিয়ে ব্যস্ত থাকে রাতে ঘুমানোর পর সে তাই স্বপ্ন দেখে। একদিন সারাবেলা সে ব্যাঙ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। সেই রাতে সে স্বপ্ন দেখলো ব্যাঙবিষয়ক। দেখলো, কোলা ব্যাঙ নিয়ে সে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সঙ্গে কথা বলছে।

আইনস্টাইন বললো, ‘বল্টু, তোমার হাতে ওইটা কী?’

বল্টু উত্তর দিলো, ‘ওটা কোলা ব্যাঙ আংকেল।’

বল্টু ভেবেছিলো আইনস্টাইন তাকে প্রশ্ন করবেন কেন সে হাতে একটা ব্যাঙ ধরে আছে। কিন্তু তিনি তা না করে বললেন, ‘গুড। ভেরি গুড।’

বল্টু বললো, ‘মশারি আমার ভালো লাগে না। সেজন্য ঠিক করেছি ব্যাঙটাকে বিছানার ওপর ছেড়ে দেবো। রাতে মশা ধরে ধরে খাবে, আমার আর মশারি লাগবে না।’

বল্টুর কথা শুনে আইনস্টাইন খুব খুশি হয়ে মাথা নেড়ে বললেন, ‘ভেরি গুড আইডিয়া। ফার্স্ট ক্লাস।’

কিন্তু স্বপ্ন সব সময় এক জায়গায় থাকে না। সব উল্টাপাল্টা হয়ে যায়। আইনস্টাইনের জায়গায় বিশাল বিশাল সব যন্ত্র এসে উপস্থিত হয়। সেটা ঝিকঝিক শব্দ করে নড়তে থাকে। ব্যাঙটা পুরোপুরি মানুষের গলায় কথা বলতে থাকে। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাতে থাকে, আর আম্মু একটা দুধের গ্লাস নিয়ে তার পিছু পিছু ছুটতে থাকে।

বল্টুর মনে হাজারটা প্রশ্ন। টিকটিকি হাম্বা হাম্বা না করে কেন শুধু টিক টিক করেই ডাকে, টিকটিকি দেয়ালে কীভাবে ঝুলে থাকে, আমাদের পা এরকম হলো না কেন, তাহলে তো আমরাও দেয়ালে ঝুলে থাকতে পারতাম!