বেড়ালবৃত্তান্ত

তিন বছরের বসুধা তার বাবা-মায়ের এক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গেছে। গিয়ে তো সে অবাক! দেখে বেশ কয়েকটি নাদুসনুদুস বেড়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে বাড়িময়, একদম নিজের বাড়ির মতো স্বচ্ছন্দে।

মাহফুজা শীলুবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2017, 11:15 AM
Updated : 15 Dec 2017, 11:15 AM

বসুধার বেড়াল খুব পছন্দ। কিন্তু বসুধার মা বেড়ালকে ভয় পায়। বাড়ির মধ্যে কোনো বেড়াল আসুক চায় না। কিন্তু এ বাড়ির সবাই খুব বেড়ালভক্ত। বেড়ালের নামও দিয়েছে তারা- মেঘমালা, সুতনুকা, স্নোবল আর নীলকমল। এ চারটি বেড়াল এ বাড়ির স্থায়ী বাসিন্দা।

তাদের শরীরস্বাস্থ্যও খুব তরতাজা। শরীরে যত্নের ছাপ স্পষ্ট। ওদের বাড়ির অন্য ঘরগুলো সুন্দর করে সাজানো গোছানো। ঘরে ঘরে খাট রয়েছে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার ওরা মেঝেতে ঘুমায়। পাশে বেড়ালদের জন্যও রয়েছে চমৎকার বিছানা।

বসুধা যখন আরেকদিন বেড়াতে গেছে, তখন দেখেছে চারটি বেড়াল ছাড়াও ওই বাসায় আরও অনেকগুলো বেড়ালের আনাগোনা। তারা প্রায় প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল-বিকেল খেতে আসে। এরকম অতিথি বেড়ালের সংখ্যা সতের। মাঝে মাঝে এ সংখ্যা বাড়ে আবার কমে। বসুধা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। বাসায় ফিরে বায়না ধরে তারও এরকম চাই।

অনেকের প্রিয় এ প্রাণীটিকে আমরা কতটা চিনি এবং জানি তা বোঝার জন্যই এ লেখা। আর তোমাদের জানাই, কুকুরের মতো বেড়াল কিন্তু প্রভুভক্ত নয়, বাড়িভক্ত। যে বাড়িতে সে থাকে, সেই বাড়ি সে কিছুতেই ছাড়তে চায় না। বাড়ির লোকজন বেড়ালের উপর বিরক্ত হয়ে বস্তাবন্দি করে অন্য পাড়ায় ফেলে দিয়ে এলেও বেড়াল ঠিকঠিক বাড়ি চিনে চলে আসতে পারে। একবার বেড়াল আদর পেলে সে বাড়ি সহজে ছাড়তে চায় না।

বেড়াল কবে থেকে মানুষের বন্ধু হলো তা স্পষ্ট করে জানা যায় না। ঐতিহাসিকদের ধারণা, খ্রিস্টের জন্মের প্রায় তিন হাজার বছর আগে মিসরিয়দের কাছে বেড়াল প্রথম পোষ মেনেছিল। এটি একটি শ্বাপদ বর্গের স্তন্যপায়ী প্রাণী। বেড়াল মানুষকে সঙ্গ দেয়, বন্ধুর মতো সঙ্গে সঙ্গে থাকে। বিভিন্ন রকম কীটপতঙ্গ ও ইঁদুরজাতীয় প্রাণী থেকে ঘরকে রক্ষা করে।

বেড়াল গলা দিয়ে একশ’ রকমেরও বেশি শব্দ করতে পারে। মানুষ একে অন্যকে হাত ধরে সম্ভাষণ জানায়, কিন্তু বেড়াল জানায় নাকে নাক ঘষে। বেড়াল ঘণ্টায় তিরিশ মাইল পর্যন্ত দৌড়াতে পারে। বেড়াল মিষ্টিজাতীয় খাদ্যের স্বাদ বুঝতে পারে না।

কমপক্ষে দশ হাজার বছর ধরে বেড়াল পালিত প্রাণী হিসেবে মানুষের সঙ্গে রয়েছে। এরা খুব সহজেই মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে যায়। এজন্যই পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় গৃহপালিত প্রাণী হচ্ছে বেড়াল।

বেড়াল চলে খুব ক্ষিপ্র গতিতে এবং দারুণ লাফাতে পারে। অনেক উঁচু থেকে লাফিয়ে পড়লেও বেড়ালের শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। কারণ লাফ দেওয়ার সময় এরা লেজের সাহায্যে ভারসাম্য বজায় রাখে। বেড়ালের শরীরে হাড়ের সংখ্যা দুইশ’ এর বেশি। তার নখের জন্য তো বিড়াল রীতিমতো বিখ্যাত। নখ দিয়ে সে শিকার করে। নখের সাহায্যে বেড়াল তার নিজের এলাকাও চিহ্নিত করে। বেড়ালের সামনের পায়ের পাতা থেকে এক ধরনের তরল পদার্থ বের হয়। এলাকা চিহ্নিত করতে বেড়াল বিভিন্ন স্থানে নখের আঁচড় কেটে এ তরলের গন্ধ ছড়িয়ে দেয়।

মাছ, মাংস ও দুধ খেতে খুব ভালোবাসে বেড়াল। এদের খাবারের জন্য তাই মানুষকে বাড়তি চিন্তা করতে হয় না।  বেড়াল গড়ে ১২ থেকে ১৫ বছর বাঁচে। শরীর পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে বেড়াল খুব মনোযোগী। এজন্য দিনের অনেকটা সময় সে জিভ দিয়ে নিজের গা চাটে। গৃহপালিত বেড়াল খেলতে পছন্দ করে। খেলায় বেশ পারদর্শীও হয়। বেড়ালের চোখের মণি হয় অনেক বড়। আর একারণে ওরা একসঙ্গে অনেক কিছু দেখতে পায়। তবে দিনের বেলা বেড়াল ভালো দেখতে পায় না। দিনের চাইতে রাতের বেলাতে বেড়াল ভালো দেখে।

বেড়াল অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে অনেক বেশি ঘুমায়। তার ঘুমের পরিমাণ দিনে ষোল ঘণ্টা। বেড়ালের পায়ের নিচে নরম মাংসপিণ্ড থাকায় এরা নিঃশব্দে চলাফেরা করতে পারে। কখনো চুপিচুপি এসে তোমার পোষা বেড়ালটি বিছানায় তোমার পাশে এসে শুয়ে পড়বে এবং ঘুমিয়েও পড়বে-টেরই পাবে না! আরও মজার ব্যাপার হলো, শুয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়াল ঘুমিয়ে পড়তে পারে। ঘুমানোর জন্য ওদের কোনো চেষ্টাই করতে হয় না।

অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া সব মহাদেশেই বেড়াল দেখা যায়। বেড়ালের মনে রাখার ক্ষমতা বেশ ভালো। আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু করতে পারে। বেড়াল তার বাচ্চাকে খুব আদর করে। সন্তানকে জড়িয়ে তাদের বসে থাকতেও দেখা যায়। হিন্দু পুরাণে বেড়াল হলো দেবী ষষ্ঠীর বাহন।

বেড়াল মানুষের বন্ধু হলেও একটি প্রাণীর কিন্তু ভীষণ শত্রু, সেটি হলো ইঁদুর। ঘর বা শস্যখেত  থেকে ইঁদুর তাড়াতে বেড়ালের মতো বন্ধু আর পাবে না।

বেড়ালের পশমের বাণিজ্যিক মূল্য রয়েছে। এ পশম দিয়ে কোট, হাতের গ্লাভস, জুতো, কম্বল ও খেলনা বানানো হয়। তবে কোনো প্রাণীর পশম দিয়েই মানুষের ব্যবহারের জন্য কোনো জিনিস বানানো ঠিক নয়। কারণ এতে অনেক প্রাণীর প্রাণ যায়। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপে বেড়ালের পশম ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।