কিন্তু তারা সুখি ছিলো না, কারণ তারা খুব একাকী ছিলো।
বুড়ি একদিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “আমাদের যদি একটা পোষা বেড়াল থাকতো, কত্ত ভালো হতো!”
“একটা বেড়াল!” বুড়ো জিজ্ঞেস করলো।
“হ্যাঁ, একটা মিষ্টি আর তুলতুলে বেড়াল।”
“আচ্ছা, আমি তোমাকে একটা সুন্দর বেড়াল এনে দেবো।”
তাই বলে বুড়ো দূর পাহড়ে গেলো। পাহাড়ের আড়ালে পাহাড়। বুড়ো হাঁটছে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিন আর শীতল উপত্যকা পেরিয়ে বুড়ো এসে পৌঁছালো এক বেড়াল পাহাড়ে।
পুরো পাহাড়জুড়ে বেড়াল আর বেড়াল। সাধা বেড়াল, লাল বেড়াল, হলুদ বেড়াল, কালো বেড়াল, বেগুনি বেড়াল। শুধু কী রঙ! আছে বাহারি আকারের বেড়াল- পিচ্চি বেড়াল, পেছল বেড়াল, পুফু বেড়াল, মোটা বেড়াল, চিকন বেড়াল ইত্যাদি।
বেড়াল এখানে, বেড়াল সেখানে
সব জায়গায় বেড়ালছানা আর বেড়ালছানা
শত শত বেড়াল
হাজার হাজার বেড়াল
লাখ লাখ, বিলিয়ন, ট্রিলিয়ন বেড়াল।
ওহ, বুড়ো আনন্দে চিৎকার করে ওঠলো- “এখান থেকে সবচেয়ে সুন্দর বেড়ালটা আমি বুড়ির জন্য নিয়ে যেতে পারবো।”
কিন্তু বুড়ো বেড়াল বাছাই করতে গিয়ে পড়লো বিপদে। কোনটা নেবে? একটা থেকে আরেকটা সুন্দর। এটা নরম তো ওইটা নাদুসনুদুস, এটা তুলতুলে তো ওইটা গাদুমগুদুম। কোনটা ফেলে কোনটা হাতে নেবে বুড়ো?
বুড়ো একবার সাদাটা হাতে নেয় তো আরেকবার কালোটা। আবার কালোটা ফেলে কোলে নেয় হলুদটা। আবার ধূসর বেড়াল কোলে নিয়ে দেখে ওহ এটাই তো সুন্দর দেখছি। এমন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলো বুড়ো।
কোন উপায় না দেখে বুড়ো পাহাড়ের সব বেড়াল নিয়েই চললো বাড়ির দিকে। মিউ মিউ করে বুড়োর পিঠে, কাঁধে, হাতে, জুতোর ফিতায় উঠে বসলো কয়েকটা বেড়ালছানা। একের ধাক্কায় আরেকটা পড়ে পড়ে যাচ্ছিলো, আবার দাঁড়িয়ে হাঁটতে থাকে। বুড়ো হাঁটছে। বুড়োর আগে, বুড়োর পিছে, ডানে-বামে বেড়ালছানা আর বেড়ালছানা।
বেড়াল এখানে, বেড়াল সেখানে
সব জায়গায় বেড়ালছানা আর বেড়ালছানা
শত শত বেড়াল
হাজার হাজার বেড়াল
লাখ লাখ, বিলিয়ন, ট্রিলিয়ন বেড়াল।
বুড়োকে দেখে বুড়ি চিৎকার করে বললো, “প্রিয়, এ তুমি কি করছো? আমি বলেছি একটা বেড়াল আনতে, আর তুমি পাহাড়টাই তুলে এনেছো!”
বুড়ি বলতে থাকলো, ‘এতো বেড়ালকে আমরা খাওয়াবো কী? রাখবোই বা কোথায়?”
বুড়ো খানিক চিন্তা করে সব বেড়ালকে কাছে ডাকলো। বললো, “আচ্ছা বাপু বলো তো, তোমাদের মধ্যে কে বেশি সুন্দর?”
“আমি!”
“আমি!”
“না আমি!”
“না, আমি সুন্দরী!”
“আমি!”
“না আমি! আমি! আমি!”
এভাবে শত শত হাজার হাজার বেড়ালছানা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া লেগে গেলো। কে বেশি সুন্দর? কে? কেউ কাউকে ছাড়ছে না। কালো বেড়ালছানা তো এক খামছি দিয়ে বসলো ধূসরটাকে। হলুদ বেড়াল রাগে গরগর করতে করতে ল্যাং মেরে ফেলে দিলো বেগুনি বেড়ালছানাকে। চোখের সামনে লেগে গেলো ধুন্দুমার মারামারি।
কিন্তু অনেক দূরে একটা ছোট্ট বেড়ালছানা ঘাসের তলে লুকিয়ে ছিলো। শুধু সে মারামারি করছিলো না।
বুড়ি তাকে গিয়ে কোলে তুলে নিলো। বললো, “কি সুন্দর বেড়ালছানা, কি সুন্দর!”
বেড়াল এখানে, বেড়াল সেখানে
সব জায়গায় বেড়ালছানা আর বেড়ালছানা
শত শত বেড়াল
হাজার হাজার বেড়াল
লাখ লাখ, বিলিয়ন, ট্রিলিয়ন বেড়াল।
“কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর লক্ষ্মী বেড়াল এটাই”, বুড়ো বললো।
অনুবাদকের কথা: ‘মিলিয়নস অব ক্যাটস’ শিরোনামে ওয়ান্ডা গেগের এ বইটি প্রকাশিত হয় ১৯২৮ সালে। এর অলঙ্করণ করেছেন লেখক নিজেই।