ডোরিন ক্রোনিনের গল্প: হাম্বা-আ

রাখাল ব্রাউন একটি সমস্যায় পড়েছে। তার খামারের গরুগুলো কম্পিউটারে টাইপ করতে শিখে গেছে।

মাজহার সরকারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Nov 2017, 01:31 PM
Updated : 3 Nov 2017, 01:32 PM

সারাদিন ধরে ব্রাউন শোনে-

খুট, খট্ খট্, হাম্বা

খুট, খট্ খট্, হাম্বা

খুট, খট্ খট্, হাম্বা

প্রথমে সে বিশ্বাস করতে পারেনি। মূর্খ গরু করবে টাইপ? অসম্ভব। শব্দটা ভালো করে শুনতে কান খাড়া করলো ব্রাউন।

খুট, খট্ খট্, হাম্বা

খুট, খট্ খট্, হাম্বা

খুট, খট্ খট্, হাম্বা

তারপর ব্রাউন তার চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারে না। তার দরজার তল দিয়ে গরুর টাইপ করা চিঠি এলো-

প্রিয় রাখাল ব্রাউন,

     শীত এসে গেছে। খামারে রাতে খুব ঠাণ্ডা।

     পুরনো লেপ-কাঁথা আর চলবে না।

     ভালো কম্বল চাই।

                   বিনীত

                   গরু

রাখাল ব্রাউন এমনিতেই বিরক্ত হয়েছিলো গরুদের কম্পিউটার চালাতে দেখে। আচ্ছা, তা না হয় মানা গেলো। আজকাল মানুষ বলো আর পশুপাখি, কারোই তো কম্পিউটার ছাড়া চলে না। আরে এমনিতেই ওরা গরু, আবার যদি কম্পিউটার চালাতে না পারে তাহলে হয় বলো! গরুই থেকে যাবে আজীবন।

তাই বলে এখন কম্বল চাইবে! রেগে গেলো রাখাল ব্রাউন। পাল্টা চিঠি দিলো-

প্রিয় গরু,

     তোমাদের ভালোবাসি। কম্পিউটার শিখে তোমরা আধুনিক হও আমি চাই।

     কিন্তু কোন কম্বল দেওয়া যাবে না।

                                তোমাদের

                                 রাখাল

রাখালের চিঠি পেয়ে গরুর পাল ধর্মঘট ডেকে বসলো। খামারের দরজায় তারা একটা চিঠি ঝুলিয়ে দিলো-

দুঃখিত

আজ থেকে দুধ দেওয়া বন্ধ।

কি! দুধ দেওয়া বন্ধ! রাখাল ব্রাউন হাওমাও করে কাঁদতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেলো। ঘুমের মধ্যে সে আবার ওই শব্দটা শুনতে পেলো-

খুট, খট্ খট্, হাম্বা

খুট, খট্ খট্, হাম্বা

খুট, খট্ খট্, হাম্বা

পরদিন সকাবেলা ঘুম থেকে জেগে রাখাল তার দরজার তলে একটা চিঠি দেখতে পেলো-

প্রিয় কৃষক ব্রাউন,

            শীত বাড়ছে। মুরগিগুলো ঠাণ্ডায় কাঁপছে।

             ভালো কম্বল চাই।

                           বিনীত

                            গরু

কিন্তু এবার ব্রাউনের কোন উত্তর না পেয়ে রেগে গেলো খামারের সব গরু। আবার চিঠি ঝুলিয়ে দিলো দরজায়-

দুঃখিত

আজ থেকে ডিম পাড়া বন্ধ।

দুধ দেওয়া বন্ধ।

কি! ডিম পাড়াও বন্ধ! রাখাল ব্রাউন হাওমাও করে কাঁদতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেলো। ঘুমের মধ্যে সে আবার ওই শব্দটা শুনতে পেলো-

খুট, খট্ খট্, হাম্বা

খুট, খট্ খট্, হাম্বা

খুট, খট্ খট্, হাম্বা

ঘুম থেকে জেগেই ভাবতে লাগলো ব্রাউন। দুধ ও ডিম ছাড়া সে কীভাবে চলবে? দুধ ও ডিম না পেলে শহরের সব শিশুরা এসে তাকে আচ্ছামতো পেটাবে। আচ্ছা তোমরাই বলো, দুধ আর ডিম ছাড়া একদিনও চলে তোমাদের? তোমাদের কথা ভেবেই তো রাখাল চিঠি লিখতে বসে গেলো-

প্রিয় গরু ও মুরগি,

           কোন কম্বল আমি দিতে পারবো না।

           গরুর কাজ হলো দুধ দেওয়া, আর মুরগির কাজ ডিম পাড়া।

           আমি দুধ ও ডিম চাই।

                         তোমাদের

                         রাখাল

খামারের হাঁসগুলো ছিলো নিরপেক্ষ। গরুর দলেও নেই, মুরগির দলেও নেই।

এর মধ্যে গরুগুলো রাতে একটি জরুরি বৈঠক ডেকে বসলো, ‘হাস-মুরগি-গরু ঐক্য পরিষদ’। খামারের সব গরু, মুরগি ও হাঁস জড়ো হলো বৈঠকে। চারদিকে কক কক, প্যাঁক প্যাঁক আর হাম্বা হাম্বা শব্দ। কিন্তু গরুর হাম্বা হাম্বা কথা কেউ বুঝলো না।

এদিকে সারারাত রাখাল ব্রাউনের চোখে ঘুম নেই। সে উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছিলো।

পরদিন খুব ভোরে উঠে দরজায় টোকা শুনতে পেলো রাখাল। তার ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলতেই হাঁসের দল প্যাঁক-প্যাঁক করে ওঠলো, তাকে একটা চিঠি দিয়ে গেলো-

প্রিয় কৃষক ব্রাউন,

          তুমি বরং আমাদের কম্পিটারটা নিয়ে যাও।

          বিনিময়ে আমাদের শীতের কম্বল দাও।

                                       বিনীত

                                       হাঁস 

কৃষক ব্রাউন এ সিদ্ধান্তে খুশি হলো। সে একটি কম্বল খামারের দরজার পাশে রেখে দিলো, আর কম্পিউটারের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু কোন হাঁসই এলো না। অপেক্ষায় অপেক্ষায় ঘুমিয়ে গেলো সে, ঘুমের মধ্যে শুনতে পেলো-

খুট, খট্ খট্, প্যাঁক

খুট, খট্ খট্, প্যাঁক

খুট, খট্ খট্, প্যাঁক

পরদিন সকালে হাঁসদের কাছ থেকে আরেকটা চিঠি পেলো ব্রাউন-

প্রিয় কৃষক ব্রাউন,

           পুকুরে সাঁতার কাটতে একঘেয়েমি লাগে।

           আমাদের একটি ডাইভিং বোর্ড চাই।

                                      বিনীত

                                      হাঁস

অনুবাদকের কথা: যুক্তরাষ্ট্রের শিশুসাহিত্যিক ডোরিন ক্রোনিনের লেখা এ বইটির মূল নাম ‘ক্লিক, ক্ল্যাক, মো’। বইটির অলঙ্করণ করেছেন বেটসি লেউইন। ‘সিমন অ্যান্ড স্কাস্টার’ থেকে ২০০০ সালে প্রকাশিত হয় এ বইটি।