যকের ধন

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2017, 09:43 AM
Updated : 4 Sept 2017, 09:43 AM

বই: যকের ধন

লেখক: হেমেন্দ্রকুমার রায়

প্রকাশক: দিব্যপ্রকাশ

পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১১৬

মূল্য: ১৮৫ টাকা

আচ্ছা তোমরা কি জানো যক কাকে বলে? যককে অনেকে যখ বা যক্ষও বলে। এই যক, যখ

বা যক্ষকে চিনতে হলে আমাদের একটু পৌরাণিক গল্পও জানতে হবে। প্রাচীন ভারতে

যার খুব ধনী মানুষ ছিল আর তাদের ধন রাখার জায়গা ছিল না তারা তাদের ধন

মাটির নিচে লুকিয়ে রাখতেন। সে যুগে খুব চোর ডাকাতের উপদ্রব ছিল। গলা কেটে

হলেও ধন সম্পদ তারা নিয়েই যেত। এরকম পরিস্থিতিতে ধন রক্ষার জন্য তারা

সেটিকে মাটির নিচে পুতে রাখতেন। তবে একদম বাড়ির কাছে কোথাও না। একটু

দূরে, যেখানে জন মানবের আনাগোনা কম।

পতিত শূন্য ভূমিতে এইসব ধন সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করত যারা তাদের বলা

হতো যক, যখন বা যক্ষ। তবে এ যকেরা মানুষ নয়। তারা প্রেতাত্মা। সেও এক

ভীতিকর গল্প। ধন-সম্পদের রক্ষার জন্য একটা ছোট বালক বয়সী ছেলেকে ধন

সম্পদের সঙ্গে মাটি চাপা দেওয়া হত। সেই মাটির নিচে শিশুটি এক সময় মারা

যেত। প্রাচীন এই ধনী লোকেরা বিশ্বাস করতেন এই বালকগুলোই যক হয়ে তাদের

ধনকে রক্ষা করে।

হেমেন্দ্রকুমার রায় যকদের নিয়ে প্রচলিত সেই পৌরাণিক গল্প সঙ্গে মানুষের

যকের ধনের প্রতি অপরিসীম আগ্রহকে উপজীব্য করে লেখা গল্পের নাম “যকের ধন”

যকের ধন বাংলা সাহিত্যের প্রথম কিশোর ক্লাসিক। এর আগে বাংলা সাহিত্যে

কম-বেশি ক্লাসিক, এডভেঞ্চার, থ্রিলার ঘরানার বই লেখা হয়েছিল তবে কিশোরদের

উপযোগী গল্প এটিই প্রথম।

হেমেন্দ্রকুমার রায় যে সময়ের মানুষ ছিলেন সে সময় বাংলার পুরুষেরা ছিল

জমিদার প্রথার উত্তরসূরি। মোটামুটি মধ্যবিত্ত পরিবারেও ছেলেদের এমনভাবে

আরাম আয়েসে বড় করা হতো যেন তারা সবাই জমিদার। তাদের কোনো দায় নেই,

দায়িত্ব নেই কর্তব্যও নেই। হেমেন্দ্রকুমার সহসাই অনুধাবন করেন এইভাবে বড়

হওয়া ছেলেরা নিজের, পরিবারের এবং সমাজের জন্য কোনো ভালো ফল বয়ে আনতে

পারবে না। উপরন্তু এই নাড়ুগোপালরা পুরো সমাজ ব্যবস্থাতেই একটা বিষফোড়া

হয়ে উঠবে। এই বোধ থেকে তিনি বেশি বেশি এডভেঞ্চার থ্রিলার লেখা শুরু করেন

বিশেষ করে কিশোরদের জন্য কারণ বড় হয়ে তাদেরই তো গঠন করতে হবে সমাজকে।

ঝুঁকি নিতে হবে, সাহস দেখাতে হবে, তারাই যদি শক্তিশালী না হয় তাহলে

সবকিছু মুখ থুবড়ে পরতে কতক্ষণ? হেমেন্দ্রকুমারের বিমল সিরিজ এই চিন্তারই

বহিঃপ্রকাশ। যকের ধন বইটি বিমল সিরিজের অন্তর্গত।

এই বইয়ের গল্প খুব টানটান উত্তেজনার। গল্পের মূল চরিত্র বিমলের বন্ধু

কুমারের জীবনে হঠাৎ করে কিছু ঘটনা ঘটা শুরু হয়। এমনিতে কুমারের জীবন আর

দশটা ছেলের মতোই সহজ স্বাভাবিক ছিল। একদিন স্বাভাবিক নিয়মেই কুমারের

ঠাকুরদা মারা গেলেন। ঠাকুরদার অন্য সব জিনিসের সঙ্গে তার সিন্দুকে অদ্ভুত

কিছু জিনিস পাওয়া গেল। এই যেমন একটা মড়ার খুলি, সে খুলির মধ্যেও অংক করা,

হাবিজাবি লেখা একটা ছোট নোটবই।

কুমারের মাও ছেলেকে ননীর পুতুল করেই বড় করছিলেন। আহা তার আদরের বাছা এসব

দিয়ে কী করবে? তাই তিনি কুমারকে নির্দেশ দেন সব ফেলে দিতে। কুমার সব

বাড়ির কাছে ঝপে ফেলে দিলেও ঠাকুরদার স্মৃতি হিসবে নোটবইটা রেখে দেয়।

একদিন কী কথার প্রসঙ্গে ঠাকুরদার এক বন্ধু করালী মুখুজ্জের সঙ্গে

ঠাকুরদার সিন্দুকে পাওয়া খুলির গল্প করে ফেলে কুমার। কী কাণ্ড সেদিন রতেই

ওদের বাড়িতে চোর আসে। সব জিনিস লণ্ডভণ্ড করে রেখে যায়। সকালে একটা জিনিসও

খোয়া না যাওয়ায় কুমারের আর বুঝতে বাকি থাকে না এই চোর আসলে টাকা পয়সা

চুরি করতে আসেনি, সে এসেছিল কিছু খুঁজতে। এমন কিছু যা টাকা পয়সার চেয়েও

মূল্যবান। ব্যাস! কুমার দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে বুঝেই ফেলে ঠাকুরদার খুলির

উপরে হিজিবিজি অংক নিছক খেয়াল নয়। এর মধ্যে আছে বিরাট কোনো রহস্য।

কুমার ঠাকুরদার এই রহস্যের জট খুলতে চায়। কিছুটা খুলেও ফেলে। সে বুঝতে

পারে কোথাও এক জায়গায় ঠাকুরদা লুকিয়ে রেখেছেন বিপুল সম্পদ, যকের ধন।

কিন্তু সেই ধন উদ্ধার করতে যেতে হবে অনেক দূরে পথ। এদিকে কুমারের বয়স

মোটে ১৭। আদরে আদরে বড় হওয়া কুমার কীভাবে এতদূরের পথ একা যাওয়ার সাহস

জুটাবে? এইসব কথাই সে খুলে বলে তার বন্ধু বিমলকে। কুমারের বন্ধু বিমল

অবশ্য খুবই বুদ্ধিমান এবং সাহসী ছেলে। সেই উৎসাহী হয়ে রওনা হয় কুমারের

সঙ্গে যকের ধন উদ্ধার করতে।

দুই কিশোর রওনা হয় আসামের দুর্গম এক পাহাড়ে। সেখানে আছে এক বৌদ্ধমন্দির।

ওদের সঙ্গে শুধু কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। এই নিয়ে ওদের লড়তে হবে কঠোর

প্রকৃতির সঙ্গে, শহুরে আরামের বাইরে তপ্ত আকাশ, বন্ধুর পথ, জঙ্গুলে

কঠোরতা। তার উপরে রয়েছে ধন পাহারায় একটি অতৃপ্ত প্রেতাত্মা। এতটা সয়ে

কীভাবে ছেলে দুটো টিকে থাকবে তার টানটান উত্তেজনার গল্পই যকের ধন।

যকের ধন গল্পটা সে সময় এতই জনপ্রিয়তা পায় যে হেমেন্দ্রকুমার “আবার যকের

ধন" নামে আরেকটি বই প্রকাশ করেন। সম্প্রতি এই গল্পটি নিয়ে পরিচালক

সায়ন্তন ঘোষাল একটি সিনেমাও বানিয়েছেন। যদিও সিনেমায় গল্পের বেশ

আধুনিকীকরণ করা হয়েছে তবুও সিনেমাটি গল্পের মতোই বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ

করেছে।