সাহসী জেসিকা

সোনালী চুলের মিষ্টি মেয়ে জেসিকাকে দেখে বোঝার উপায় নেই ওর সাহস কত বেশি। যে কেউ দেখলে ভাববে আর এত সুন্দর মেয়েটা বুঝি খুব আদরে যত্নে বেড়ে উঠা পুতুল। তবে জেসিকা মোটেই পুতুল পুতুল মেয়ে নয়। সে অদম্য সাহসী আর খুব বুদ্ধিমানও। এ জন্যই তো মাত্র ১৬ বছর বয়সে একা একাই একটা মাত্র নৌকা নিয়ে সে রওনা হয়েছিল সারা পৃথিবী ঘুরতে।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 August 2017, 10:40 AM
Updated : 21 August 2017, 10:40 AM

জেসিকার বাড়ি অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্ট নামে একটা জায়গায়। অস্ট্রেলিয়া তো জানোই একটা দ্বীপ মহাদেশ। সেখানে চারিদিকে শুধু সাগর আর সাগর। এদিকে গোল্ড কোস্ট নামের জায়গাটা একদম সমুদ্রের পাড়ে। সমুদ্রের শহর বলে এখানে অনেক অনেক সৈকত রয়েছে। তবে সে সবে জেসিকার কোনো প্রয়োজন ছিল না। কারণ জেসিকা ছোটবেলা থেকে পানিকে এত্ত ভয় পেত যে সাগরের কাছে যাওয়া দূরে থাকুক সামান্য সুইমিং পুল থেকেও সে দূরে দূরে থাকত।

একবার এক গরমের সকালে ওর বোন আর কাজিনদের সঙ্গে সুইমিং পুলের পাড়ে খেলছিলো। খেলতে খেলতে ওর এক কাজিন খেলা বের করলো যে সবাই হাত ধরাধরি করে পুলে সামনে দাঁড়াবে আর সবাই মিলে পানিতে ঝাঁপ দিবে।

যে পথে জেসিকা পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেছে

খেলার এমন ভয়ানক পরিণতি দেখে জেসিকা খুব ঘাবড়ে গেলো। খেলা ছেড়ে পালিয়ে যাবে কি না ভাবতে ভাবতেই সবাই মিলে লাইন করে ফেলল আর দুই দিক থেকে দুইজন খপ করে জেসিকার হাত ধরে ঝুপ করে পানিতে নেমে গেলো।

পানিতে নামার পরে প্রথমে জেসিকার মনে হলো, ও বুঝি মরেই যাচ্ছে, শ্বাস নিতে পারছে না, ভয়ে হাত পা অসার হয়ে আসছে। কোনোক্রমে মাথাটা তুলে দেখল সে বাদে অন্য সবাই পানিতে খুব মজা করে দাপাদাপি করছে। সহসাই জেসিকা বুঝতে পারলো পুলটা খুবই অগভীর এখানে ঢুবে যাওয়ার ভয় মোটেই নেই। বরং পানিতে দাপাদাপি করা বিষয়টা খুব মজার।

জেসিকার মা ঘরের ভিতর থেকে বোঝার চেষ্টা করছিলেন জেসিকা কোনো বিপদে পড়ল কি না। কিন্তু উনি দেখলেন জেসিকা একটুও ভয় না পেয়ে খুব সুন্দর করে বিষয়টা সামলে নিলো।

এরপর যে কী অদ্ভুত ঘটনা ঘটল, জেসিকা হঠাৎ ঠিক করল পানি যদি এতই দারুণ হয় তবে সে নাবিকই হবে, সারা জীবন পানিতে ভেসে বেড়াবে। তাই জেসিকা একটা স্কুলে ভর্তি হলো যেখানে নৌকা চালানো শেখানো হয়। নৌকা চালানো শিখার পরে জেসিকা ঠিক করলো এইবার সাগরে নামা যাক। তবে জেসিকার পরিকল্পনা যেমন তেমন ছিল না। জেসিকা ঠিক করেছিল তার নিজের একটা নৌকা নিয়ে সে একাই সমুদ্র পাড়ি দিবে।

জেসিকার গোলাপি নৌকা

যেমন ভাবা তেমনি কাজ। জেসিকা একটা নৌকা জোগাড় করল, বেশ বড়সড়। সেই নৌকাটা গোলাপি রঙ করল আর নৌকাটার একটা নামও দিল, এলা'স পিঙ্ক লেডি। এরপর এই নৌকায় ১৫০ বোতল দুধ, অনেক অনেক পানিসহ সিডনির উপকূলে থেকে যাত্রা শুরু করল। জেসিকা যখন এভাবে একাই সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার জন্য ১৮ অক্টোবর ২০০৯ সালে বাড়ি বের হয় তখন ওর বয়স মাত্র ১৬ বছর।

এভাবেই একা একা জেসিকা সমুদ্র পথে এগুতে লাগলো। ওর সামনে নানান রকম পরিস্থিতি আসলো। গভীর সমুদ্রে জেসিকা নানান সামুদ্রিক জীবের সন্ধান পেল। এমনকি পথে ভয়াবহ ঝড়েরও মোকাবেলা জেসিকা করলো। একবার তো সমুদ্রের পানি এতই উত্তাল হয়ে গিয়েছিল যে একে একটা ঢেউ শততলা দালানের সমন উঁচু হয়ে জেসিকার নৌকার উপরে আছড়ে পড়তে শুরু করলো। কোনো কোনো ঢেউ জেসিকাকে নিয়েই শত ফুট উপরে উঠে গেলো। এরকম ভয়ানক ঝড় মোকাবেলা করে অবশেষে জেসিকা সাত মাস পরে ১৫ মে ২০১০ এ আবার সিডনি বন্দরে ফিরে এলো। জেসিকার বয়স ১৭ হতে তখন মাত্র ৩ দিন বাকি। হাজার হাজার মানুষ ছুটে এলো ক্ষুদে এই নাবিককে দেখতে। কী অদ্ভুতভাবে ১৭ বছরের একটা ছোট্ট মেয়ে একা একা সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার সাহস করেছে তা জানতে চায় সবাই।

জেসিকা ওর নৌকা থেকে নেমে দেখল ওকে বরণ করার জন্য মানুষ একটা গোলাপি কার্পেট পেতে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০১১ সালে জেসিকা ইয়াং অস্ট্রেলিয়ান অফ দ্যা ইয়ার খেতাব পায়। পরের বছর জেসিকাকে মেডেল অফ দ্যা অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়া খেতাবে ভূষিত করা হয়। কী দারুণ তাই না!

জেসিকার গোলাপি নৌকাটা ব্রিসবেনের কুইন্সল্যান্ড মেরিটাইম মিউজিয়ামে রাখা আছে। সেখানে গেলে আমরাও সেই দারুণ নৌকাটায় ঘুরে ফিরে দেখতে পাবো। তবে যদি যাওয়ার সুযোগ না হয় তাহলেও সমস্যা নেই। ইন্টারনেটে সার্চ করলেই জেসিকার যাত্রা, সমুদ্রের ভ্রমণ, নৌকার ভিতরের জীবন ইত্যাদির ছবি ও ভিডিও পেয়েই যাবে।