মহাকাশে কাঁদতে নেই

মহাকাশে অর্থাৎ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে এবং পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বেশ দূরে সব বিষয় অনেক বেশি গোলমেলে। সেখানে মানুষ মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। স্বাভাবিকভাবে বাতাসে শ্বাস নিতে পারে না এরকম অনেক অনেক বিষয় যা মানুষকে নিজ জীবন থেকে অনেকটা সরিয়ে দেয়।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2017, 06:33 PM
Updated : 19 August 2017, 06:33 PM

কিন্তু কথা হচ্ছে তারপরেও মানুষ কেন মহাকাশে যায় বা সেখানে থাকে। সহজ স্বাভাবিক মানুষের মহাকাশে যাওয়ার বা থাকার কোনো দরকার নেই। তবে পৃথিবীতে কিছু অসাধারণ মানুষ আছেন তারা মহাকাশ বিষয়ক গবেষণা করেন। মহাকাশের পরিবর্তন অথবা নিতান্ত কোনো নিয়ম পৃথিবীর মানুষদের জীবন যেন সহজ থেকে জটিল আর স্বাভাবিক থেকে অস্বাভাবিক না করে ফেলে তাই তাদের এই প্রচেষ্টা। আর অজানা মহাকাশকে জানার বিপুল আগ্রহ তো আছেই।

মহাকাশ গবেষক যাদের আমরা মহাকাশচারী বলে চিনি তারা বিভিন্ন কারণে মহাকাশ পাড়ি দেন। চাঁদ ও মঙ্গলে তারা পা রাখার চেষ্টা করেছেন। এ ছাড়াও কৃত্রিম উপগ্রহে বসে তারা দীর্ঘদিন সেখানে বাস করেন ও গবেষণা করেন। তবে সে জায়গায় তাদের জীবন মোটেই পৃথিবীতে থাকা আমাদের জীবনের মতো হয় না। তারা সারাদিন শূন্যে ভাসতে থাকে। এমন কি ঘুমানও ভেসে ভেসে।

মহাকাশচারীদের জীবনের এই ভিন্নতার মূল কারণ হচ্ছে, পৃথিবী অভিকর্ষজ ত্বরণ মহাকাশে নেই ফলে কোনো কিছুই মাটির সঙ্গে লেখে থাকে না বা কোনো বস্তুকে মুক্তভাব ছেড়ে দিলে তা মাটিতে এসে পরে না। এগুলো শূন্যে ভাসতে থাকে। আর এই শূন্যে ভাসার জন্য যে কতপ্রকারের বিড়ম্বনার মধ্যে মহাকাশচারীদের পরতে হয় তার কোনো সীমা নেই। যেমন আমরা যে স্বাভাবিক কলম ব্যবহার করি তা মহাকাশে কাজ করে না। কারণ কালি নিজে থেকে নিচের দিকে আসতে পারে না। তাই আমাদের কলম দিয়ে মহাকাশে কিছুই লেখা যাবে না। মহাকাশের কাজ করার জন্য বিজ্ঞানীদের কোটি কোটি টাকা খরচ করে গবেষণার মাধ্যমে নতুন কলম আবিষ্কার করতে হয়েছে।

কৃত্রিম উপগ্রহগুলিতে এমন সব গবেষণা হরহামেশাই হচ্ছে। আর গবেষণা করতে করতে অনেক সময় যা হয়, গবেষকরা ক্লান্ত হয়ে যান, কখনও কখনও বার বার লক্ষ্যে পৌছাতে ব্যর্থ হন। আবার পৃথিবী থেকে এত দূরে বসে আত্মীয়-পরিজনের কথাও মনে পরে মন খারাপ হয়। এত সব কারণে একজন মানুষের চোখে তো পানি আসতেই পারে।

চোখে যতই পানি আসুক মহাকাশে কান্নাকাটি করা কিন্তু বেশ বিড়ম্বনার বিষয়। কেউ যদি ভুলে কেঁদেও ফেলে সে পরে আফসোস করে এই ভয়ানক কাজটা সে কেন করলো? কারণ আমরা কাঁদলে পানি যেমন চোখ বেয়ে নিচে নেমে আসে, মহাকাশে তেমন হয় না। কারণ মহাকাশে অভিকর্ষজ ত্বরণ নেই। তাই যে কোনো বস্তু নিচের দিকে নামতে পারে না। তাহলে সেই পানিগুলো কই যায়? সেই পানিগুলো একটা ফোঁটা হয়ে চোখের সঙ্গেই লেগে থাকে। যে যত বেশি চোখের পানি ফেলে তার চোখের উপরে এই ফোঁটা তত বড় হবে। বড় হতে হতে এই ফোঁটা আস্ত একটা বলের আকৃতির হয়ে যায়। 

এখন তাহলে এই অশ্রুর বিড়ম্বনা থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যায়? খুব সহজ, একটা টিস্যু পেপার বা কাপড় যার শোষণ করার ক্ষমতা আছে তা দিয়ে শুষে ফেলতে হবে।

এই উড়ে যাওয়ার বিড়ম্বনার জন্য মহাকাশে কেউ থুথু ফেলা বা কুলি করার মতো কাজও করে না। মুখে পানি নিয়ে সেটা টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলে। কারণ একবার যদি এটা মুখ থেকে ছুটে যায় তবে উড়ে গিয়ে কার গায়ে যে পরবে তার কোনো হদিশই নেই।