মাকড়ি

হিন্দি মাকড়ি অর্থ মাকড়শা। এই গল্পে মাকড়ি একজন ডাইনীর নাম। পুরো গল্প আবর্তিত হয় এই ডাইনীকে ঘিরে তবে এই গল্পের নায়িকা ভীষণ দুষ্টু আর মজার মেয়ে চুন্নি। চুন্নিরা দুই যমজ বোন চুন্নি আর মুন্নি। থাকে ভারতের একটি গ্রামে দাদী ও বাবার সঙ্গে। ওদের মা নেই।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2017, 10:33 AM
Updated : 2 August 2017, 10:33 AM

চুন্নির বোন মুন্নি একটা দারুণ লক্ষ্মী মেয়ে। কাজে কর্মে তো বটেই। লেখাপড়ায়, আচার ব্যাবহারে। একদম গুড গার্ল বলতে যা বুঝায় ঠিক তাই। বাবা আর দাদীর তাই মুন্নিকে নিয়ে আহ্লাদের অন্ত নেই। মুন্নি তাদের চোখের মণি। কলিজার ধন।

মুন্নি যেমন লক্ষ্মী চুন্নি তেমই দস্যু। না ঘরের কাজে কোনো মন, না লেখাপড়ায় কোনো উন্নতি। সারাদিন শুধু দুষ্টুমি আর টইটই। গ্রাম শুদ্ধ মানুষকে বিরক্ত করে বেড়ায়। সারাদিনই ওর নামে হয় স্কুল থেকে নয়তো পাড়া প্রতিবেশীর কাছ থেকে নালিশ আসছে। এত নালিশ চুন্নি মুন্নির বাবা তো বিরক্তই। সঙ্গে মুন্নিও খুব বিরক্ত। কেননা, চুন্নি সব অপকর্ম ঢাকা দিতে মুন্নিকে ব্যবহার করে। আবার মাঝে মাঝে নিজের বাড়ির কাজ বা ঘরের কাজটিও মুন্নিকে দিয়ে করিয়ে নেয়। মুন্নি বেচারা এতই ভদ্র যে সে সব সময় নাও করতে পারে না। আর করলেই বা কী মুন্নির না শোনার লোকই চুন্নি না।

চুন্নি মাঝে মধ্যেই মুন্নি সেজে বাবার থেকে দুইবার টাকা আদায় করে, দাদীর থেকে ভালোটা নিয়ে নেয়। সবাই জানে চুন্নি একটা দস্যি আর কেউ ওর সঙ্গে এঁটেও উঠতে পারে না।

চুন্নিকে সবচেয়ে বেশী যে অপছন্দ করে সে হলো কালু। কালু ওদের গ্রামে কসাই। মুরগি ছাগল ইত্যাদির মাংস বিক্রেতা। চুন্নি প্রায়ই কালুর মুরগি ছেড়ে পালিয়ে যায়। যায় তখন বেচারা কাল্লু মুরগি ধরবে না চুন্নিকে তার দিশা পায় না। তবে ধরতে পারলে সে চুন্নির টুঁটি চেপে ধরবে এমন রাগ নিয়ে সে সারাদিন চলে।

চুন্নির এক বন্ধু আছে নাম মুঘল-এ-আজম। যেমন বিশাল তার নাম তেমনি দেখতে সে বিশাল। শুধু বেচারা মানুষটা খুব সোজা-সরল। মুন্নি মুঘল-এ-আজমকে সারাক্ষণ এক হাতের উপরে নাচায় তবে সেও মুন্নিকে কিছু বলতে পারে না। একে তো সে মানুষটাই নরম সরম। তার উপর মুন্নি ওকে ক্লাসে স্যারের থেকে বাড়িতে বাবার থেকে সারাক্ষণ রক্ষা করে। এমন বন্ধুকে কেউ চাইলেও কী কিছু বলতে পারে?

মুঘল-এ-আজমের একটা কুকুর আছে। নাম আলাদিন। চুন্নি আর কাল্লুর শত্রুতায় পরে বেচারা আলাদিন ভয়ানক এক ডাইনীর বাড়ি চলে যায়। শুরু হয় গল্পের।

চুন্নিদের গ্রামে চুন্নির উৎপাতের চেয়েও বড় উৎপাত হচ্ছে ডাইনী মাকড়ি। মাকড়ি মানে আগেই বলেছি মাকড়শা। এই ডাইনীর নাম মাকড়শা কারণ তার জাল দিয়ে সে মানুষকে আটকে ফেলে। গ্রামের এক প্রান্তে এক পোড়া রাজবাড়িতে তার বসবাস। লোকে বলে এ ডাইনীর খপ্পরে একবার পরলে মানুষ হয় পশু হয়ে যায় নয়তো একদমই ফিরে আসে না। সবাই এই ভয়ানক ডাইনীকে এড়িয়ে চলে কিন্তু শুধু চুন্নিরই ডাইনীর বিষয়ে খুব আগ্রহ।

চুন্নি আর মুন্নির বড় পার্থক্য হচ্ছে মুন্নির নাকের নিচে একটা বড় তিল আছে। আর মুন্নি খুব ধীরে আস্তে কথা বলে। মাঝে মধ্যে তোতলায়ও চুন্নি এত দুষ্টু যে সে প্রায়ই নাকের নিচে একটা টিপ পরে মুন্নি সেজে ফেলে। তখন অন্য লোক বাদ ওদের বাবাও ওদের আলাদা করতে পারে না।

একদিন আবার কাল্লু ও চুন্নির বিবাদে মুন্নি ঝামেলায় পরে যায়। কাল্লু মুন্নিকে চুন্নি ভেবে ওর পিছনে বিরাট চাকু নিয়ে ধাওয়া করে। প্রাণ বাঁচাতে মুন্নি দৌড়ে দৌড়ে ডাইনীর বাড়ি পৌঁছে যায়।

এদিকে কাল্লুকে ধোঁকা দিয়ে মুন্নির পিছনে পাঠিয়ে চুন্নি খুব মজায় ঘুড়ি উড়াচ্ছিল। মুঘল-এ-আজম আজম এসে ওকে খবর দেয় মুন্নিকে কাল্লু ডাইনীর বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।

এই ভয়ানক ঘটনায় চুন্নির মুখে আকাশ ভেঙ্গে পরে। সে সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরে ওর বোনকে রক্ষা করার জন্য। কিন্তু একে তো চুন্নির অবস্থানই খারাপ কেউ ওকে বিশ্বাস করে না আর করলেই বা কে যাবে নিজের প্রাণ খোয়াতে তাই সবাই চুন্নিকে মানা করে দেয়। চুন্নি একাই সাহস করে ডাইনীর বাড়ি যায়।

ডাইনীর বাড়ি বিশাল ভয়ংকর জায়গা ডাইনীর দেখা যদি না মিলেও তবুও বাড়ির দেখাই সবার পিলে চমকে উঠবে। কিন্তু চুন্নির সঙ্গে ডাইনীরও দেখা হয়। চুন্নিকে ডাইনী বলে মুন্নিকে সে মুরগি বানিয়ে দিয়েছে। এখন যদি চুন্নি ডাইনীকে একশটা মুরগি এনে খাওয়াতে পারে তবেই শুধু মুন্নিকে আবার মুরগি থেকে মানুষ বানাবে অন্যথায় না।

শুরু হয় চুন্নির বোনকে বাঁচানোর অভিযান। এদিকে বাবার হাত থেকে বাঁচার জন্য নিজেই একবার চুন্নি আরেকবার মুন্নি সেজে ঘুরে বেড়ায়।

ছোট্ট দায়িত্ব জ্ঞানহীন চুন্নি কি পারবে এত বড় কাজের দায়িত্ব নিতে? ওর পক্ষে কি সম্ভব হবে মুন্নিকে বাঁচানো। জানতে হলে দেখতে হবে মাকড়ি সিনেমাটি। এখানে যত না ভয়ের বিষয় আছে তারচেয়ে অনেক মজার বিষয় আছে, সঙ্গে আছে এডভেঞ্চার আর জমজমাট গল্প।

বিশাল ভারদোয়াজের পরিচালনায় এই সিনেমাটি ২০০২ সালে মুক্তি পায়। এর আইএমডিবি রেটিং ৭ দশমিক ৫। ছোটদের জন্য এত মজার সিনেমা খুব বেশি একটা তৈরি হয়নি।