উল্কা দেখার দিন

আকাশ থেকে তারা খসে পরা বা তারার হাঁটার ঘটনাটা খুব স্বাভাবিক। মেঘমুক্ত রাতের আকাশে তাকালে লক্ষ তারার চিকমিকের মধ্যে হঠাৎ দেখা যাবে চট করে কিছু তারা একদিক থেকে আরেকদিকে চলে যাবে। কেউ বলে তারা খসে পরা কেউ বলে তারা চলাচল করা কেউ কেউ তো আমনও বিশ্বাস করে তারার এই চলাচল দেখার পরে চোখ বন্ধ করে যদি কিন্তু চাওয়া হয় সেই ইচ্ছাও পূরণ হয়।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2017, 08:09 AM
Updated : 30 June 2017, 08:09 AM

যেসব বস্তুকে আমরা আকাশের মধ্যে দ্রুত বেগে চলতে দেখি সেগুলো আদৌ তারা নয়। তারা যেগুলো আমরা প্রায় স্থির অবস্থায় আকাশে দেখতে পাই সেগুলো গ্রহ বা নক্ষত্র। গ্রহ বা নক্ষত্রের নির্দিষ্ট কক্ষপথ থাকে যেগুলো থেকে তারা সাধারণত তত একটা বিচ্যুত হয় না। আর যদি কোনোভাবে বিচ্যুত হতো সেটা তারা হাঁটার মতো ছোট বিষয় হতো না। এগুলো পৃথিবীর মতো কিছু গ্রহের ধ্বংসেরও কারণ হতো। আকাশে ছুটে চলা তারারা ছোট ছোট গ্রহাণু, ধুলিকণা, ছোট বড় শিলা-খণ্ড যেগুলো কোনো গ্রহ বা নক্ষত্র থেকে বিচ্যুত হয়েছে।

ছোট শিলার খণ্ডগুলো সহজ স্বাভাবিকভাবেই মহাশূন্যে ভাসতে থাকে। ভাসতে ভাসতে যখন সেটা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে তখন বাতাসে থাকা অক্সিজেন এবং গ্রহাণুর গতির জন্য এতে আগুন ধরে যায়। আগুন ধরে যাওয়ার পরে গ্রহাণুটি অনেক দ্রুত তার স্থান পরিবর্তন করতে থাকে। বেশিরভাগ সময় ভূপৃষ্ঠে আসার আগেই এটি পুড়ে যায় অনেক সময় বায়ুমণ্ডলের বাইরে চলে যায়। একে জ্যোতিষবিদ্যায় উল্কা বলা হয়। যদিও আমরা খালি চোখে শুধু রাতের বেলা উল্কা পাত দেখতে পাই তবে এটা আসলে দিন ভরই হতে থাকে। শুধু সূর্যের আলোর জন্য আলাদা করে চোখে পরে না।

আমরা দেখি বা না দেখি পৃথিবীতে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ মিলিয়ন উল্কাপাত হয় যেগুলোর ওজন সব মিলালে প্রায় ১০০ টন। তবে এই পরিমাণ উল্কাপাত আমরা সব দেখতে পাই না কারণ এটা পৃথিবীর নানান প্রান্তে হয়, কখনও রাতে কখনও দিনে হয়। কিছু এতই ছোট হয় যে চোখে দেখাই যায় না। তার উপরে উল্কা এত দ্রুত চলে যায়, দেখার সময়টা পাওয়ায় দায়! আর শহরবাসী মানুষ কতই আর আকাশ দেখার সুযোগ পায় যে উল্কাপাত দেখে ফেলবে!

উল্কা দেখার সুবিধার জন্য যারা আকাশের গ্রহ নক্ষত্রদের দেখেন তারা সবাই মিলে ঠিক করেন একটা দিন ঢিক করোতে হবে যেদিন সবাই মিলে রাতের আকাশে তাকিয়ে থাকবে আর অপেক্ষা করবে একটা উল্কার যাওয়া দেখার। ৩০ জুন আজকেই সেই দিন।

প্রতি বছরই এমন কিছু দিন পাওয়া যায় যেদিন অনেক উল্কা একসঙ্গেএক সময়ে উড়ে আসে, তখন উল্কার দেখা খুব আনন্দদায়ক হয়। মনে হয় যেন আকাশে উল্কার বৃষ্টি হচ্ছে। চমৎকার আতসবাজি দেখা যায় রাতের আকাশে।

এখন কীভাবে দিনটিকে উৎযাপন করা যায় এটাই তো প্রশ্ন? আজকের দিনটি উৎযাপন করোতে হলে অবশ্যই বেশ রাত জাগতে হবে। বালিশ কাঁথা নিয়ে সন্ধ্যার পরে যখন অন্ধকার নামবে তখন বাসার ছাঁদে বা খোলা ময়দানে চলে যাওয়া যায়। সঙ্গেকিছু খাওয়া দাওয়াও নিয়ে যাওয়া যায় যেন উল্কার অপেক্ষায় বসে থেকে ক্ষুধা লেগে গেলে খাওয়ার খুঁজতে আসার ফাকে উল্কা না চলে যায়!

রাতটি যদি বৃষ্টি মুখর না হয় আর আকাশ মেঘ শূন্য থাকে তবে অনেক রাত পর্যন্ত বসে থাকলে একটা না একটা উল্কার ভ্রমণ চোখে পড়বেই।

কোনো কারণে যদি আজ রাতে উল্কার দেখা নাও পাওয়া যায় তাও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। চাঁদ অনুজ্জ্বল থাকে এবং আকাশ মেঘমুক্ত থাকে এমন যে কোনোদিন মাদুর নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসে থাকলে উল্কা দেখাই যাবে।