মোয়ানা

মেয়েটির নাম মোয়ানা। বাড়ি মোটুনুই। মোটুনুই একটি দ্বীপ, প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে। অসম্ভব সুন্দর এই দ্বীপে সব আছে, ফলফলারি, খাদ্য, শস্য, মাছ। সব কিছু মিলিয়ে দারুণ প্রাচুর্যের একটা দ্বীপ মোটুনুই। সেই দীপের মানুষদের রাজা হলেন মোয়ানার বাবা, টুই, লোকে তাকে ডাকে চিফ টুই। দ্বীপে আরও আছে মোয়ানার মা, মোয়ানার গল্পবাজ দাদী তালা, মোয়ানার শুকর কুয়া আর চোখে উল্টাপাল্ট দেখা মোরগ হেইহেই।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2017, 10:07 AM
Updated : 19 June 2017, 10:07 AM

মোয়ানাদের দ্বীপের লোকেরা খুবই আনন্দ করে কাটায়। এক কালে নাকি তারা যাযাবর ছিল, এখন এই দ্বীপের চারিদিকের বাইরে পা দেয় না। তবে মোয়ানার গল্পবাজ দাদী বলেন ওরা আগে যাযাবর ছিল, নৌকার বহর নিয়ে দ্বীপ থেকে দ্বীপে ঘুরে বেড়াত, সেসব শুনে ছোট্ট মোয়ানারও সাগরে যেতে ইচ্ছে হয়। নৌকা চালাতে, তারাদের দেখে পথ চলতে কত আনন্দ হবে এটা ভেবেই মোয়ানা পুলকিত হয়ে উঠে, কিন্তু মোয়ানার বাবা টুই মেয়েকে পানির ধারে কাছেই ঘেষতে দেয় না। যখনই মোয়ানা সাগর পাড়ে যায়, বাবা ওকে খপ করে ধরে নিয়ে আসেন।

মোয়ানার দাদী তালার ভাণ্ডারে গল্পের কোনো শেষ নেই। কত আগডুম বাগডুম গল্প যে করে। যেমন মাউয়ি’র গল্প। মাউয়ি একজন উপদেবতা, লক্ষ বছর আগে এই চতুর উচ্চাভিলাষী উপদেবতা দিফিতি’র হৃদয় চুরি করেছিল। দিফিতি দ্বীপগুলোর দেবী। দিফিতির সেই পান্নার মতো সবুজ পাথরের হৃদয়টা কার কাছে আছে তা কেউ জানে না। তবে দিফিতির হৃদয় চুরি হওয়ার পরে থেকে দ্বীপগুলো সব পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে—দাদীর এই গল্পে বাচ্চারা সবাই ভয়ে অস্থির হয়ে গেলেও মোয়ানা নির্বিকার। সে খুবই আগ্রহ নিয়ে গল্প শোনে আর সমুদ্র পারে গিয়ে সমুদ্রটাকে বোঝার চেষ্টা করে।

সেদিনই সৈকতে একটা কচ্ছপ ছানা আটকে পরে, মোয়ানা কাকেদের সঙ্গে যুদ্ধ করে কচ্ছপছানাকে উদ্ধার করে সাগরে পাঠায়। সাগর সেদিন অদ্ভুত আচরণ করে। যেন সাগর সাগর নয় সাগর অনুভূতি সম্পন্ন একজন মানুষ, পানি সড়ে গিয়ে মোয়ানাকে জায়গা করে দেয়, ওর চুল নেড়ে দেয়, ওকে ছোট একটা সবুজ পাথর উপহার দেয়। আর যখন ওর বাবা মোয়ানা মোয়ানা বলে ডাকতে ডাকতে আসে তখন সবকিছু আগের মতো করে ওকে আবার দ্বীপে ফিরিয়ে দেয়।

ছোট্ট মোয়ানা সাগরের সঙ্গে সেই স্মৃতি পায় ভুলেই যেতে থাকে। এদিকে ওর বাবা-মা এবং গায়ের অন্য সবাই মিলে ওকে পরবর্তী গ্রাম প্রধান বানানোর প্রস্তুতি নিতে থাকে। এর মধ্যে একদিন গ্রামের সব নারিকেল গাছে পানি শুকিয়ে যেতে থাকে, সমুদ্র থেকেও জেলেরা ফিরে আসে খালি হাতে। চারিদিক যেন শুকিয়ে গিয়েছে। ঠিক মোয়ানার দাদীর গল্পের মতো।

মোয়ানা ঠিক করে করে ও গভীর সমুদ্রে গিয়ে দেখবে মাছেরা আসলে যাচ্ছে কোথায়? তবে প্রথমদিন সমুদ্রে নেমেই ও টের পায় ও নৌকা চালাতে পারে না, সমুদ্রের সঙ্গে তাল রাখতে পারে না। একদম নাকানি-চুবানি খেয়ে ফিরে আসে দ্বীপে।

এদিকে মোয়ানার দাদী ওকে গোপন একটা গুহার সন্ধান দেয় যেখানে ওদের যাযাবর জীবনের সব নৌকা রাখা আছে। মৃত্যু সজ্জায় দাদীই ওকে মনে করিয়ে দেয় সাগর ওকে মনোনয়ন করেছে দিফিতির সবুজ হৃদয়কে প্রতিস্থাপন করতে। মোয়ানাকেই এখন সমুদ্রে যেতে হবে, উপদেবতা মাউয়িকে খুঁজে বের করতে হবে আর দিফিতিকে তার হৃদয় ফেরত দিতে হবে।

নৌকা না বাইতে পারা মোয়ানা রাতের আধারে একা একা দ্বীপ থেকে পালিয়ে যায় মাউয়িকে খুঁজতে, ভরসা শুধু সমুদ্র। এদিকে মাউয়ি একটা রাগী, খেয়ালী, দুষ্টু, উপদেবতা তার উপরে ওর শক্তি যে বিরাট মাছের বড়শির মতো গদাটায় রয়েছে সেটাও হাত ছাড়া হয়ে গিয়েছে। দিফিতি পর্যন্ত পৌছাতে হলে যুদ্ধ করোতে হবে ভয়ংকর এক আগ্নেয়গিরির দৈত্যের সঙ্গে। এত কিছু পার করে কীভাবে মোয়ানা তার দ্বীপের মানুষদের রক্ষা করবে তাই নিয়ে জমজমাট অ্যানিমেশন মুভি মোয়ানা।

মোয়ানা ২০১৬ সালে মুক্তি পায়, ওয়াল্ট ডিজনি অ্যানিমেশন স্টুডিওর তৈরি এই সিনেমা সারা বিশ্বব্যাপী ৬৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যবসা করে। শুধু তাই না ৮৯তম অ্যাকাডেমিক অ্যাওয়ার্ড’এ সর্বশ্রেষ্ঠ অ্যানিমেটেড ফিচার মুভির খেতাবও জিতে নেয় এই সিনেমাটি।