হাঁসের মতো দেখতে ছোট্ট একটা প্রাণী। হাঁসের মতো চঞ্চু আছে হাঁসের মতো চোখ হাঁসের মতো পাও আছে। তবে কোথায় যেন ভোঁদড়ের সঙ্গে ভীষণ মিল এই প্রাণীটার নাম প্লাটিপাস।
প্লাটিপাসদের দেখতে হলে যেতে হবে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে। তবে অস্ট্রেলিয়া থাকে বলে ভেবো না তারা সমুদ্রের পাড়ে বা সমুদ্রে থাকে। প্লাটিপাসদের বাড়ি নদী নালা খাল বিলে, যেখানে সাদু পানি পাওয়া যায়। তবে সাদু পানিটা যে উৎসেরই হোক না কেন, প্লাটিপাসদের বাড়ি পানিতেই, সেখানেই তারা থাকে সেখানেই খায়।
হাঁসের মতো দেখতে আর বাস পানিতে হলেও প্লাটিপাসরা মোটেই পাখি বা মাছ নয় কিন্তু। প্লাটিপাসরা স্তন্যপায়ী। তারা সন্তান প্রসব করে, এবং সন্তানদের দুধ খাওয়ায়।
তবে স্তন্যপায়ীদের মত তাদের দাঁত নেই, ঐ এক চঞ্চুই তাদের সব। সেই চঞ্চু দিয়ে পানির একদম তলা থেকে চামচের মতো শামুক, গুগলি, জেলিফিশ, লার্ভা, কৃমি সব তুলে নিয়ে আসে। সেগুলোর সঙ্গে তুলে আনে নুড়ি আর মাটিও। তারপর সেগুলো ইচ্ছেমতো চিবিয়ে চিবিয়ে খায়। যেহেতু প্লাটিপাসের দাঁত নেই, এই নুড়িগুলোই দাঁত বানিয়ে প্লাটিপাস শক্ত শক্ত খোলস চিবিয়ে ভেতরের মাংসল অংশ খেয়ে ফেলে। কত বুদ্ধি ওদের!
এত বুদ্ধি শুনে আবার ভেবো না প্লাটিপাসরা খুব বড় কিছু। প্লাটিপাসরা বেশ ছোট এদের শরীর আর মাথা নিয়ে ১৫ ইঞ্চি আর লেজ ৫ ইঞ্চি। মানে পুরোপুরি ২০ ইঞ্চি। ওদের শরীরটাও মুখের মতোই চ্যাপটা, চলে পানির মধ্যে দিয়ে ওরা খুব সহজেই চলাচল করতে পারে। প্লাটিপাসদের শরীর পুরু বাদামী লোম দিয়ে আবৃত থাকে। আর লোমগুলোও এমন কার্যকরী যে সেগুলো ভেদ করে পানি প্লাটিপাসের শরীরে ঢুকতেই পারে না। এতে প্লাটিপাস সারাদিন পানিতে থাকলেও ঠাণ্ডায় শরীর জমে যায় না। বেশ গরম থাকে।
প্লাটিপাসের সবচেয়ে দারুণ বিষয় হচ্ছে ওদের চঞ্চু। চ্যাপ্টা চঞ্চুর গাঁয়ে অনেকগুলো সংবেদন গ্রহনকারী স্নায়ু থাকে। ফলে পানির আশেপাশে যেখানেই শিকার থাকুক ঠিক ঠিক তারা বুঝে ফেলে।
প্লাটিপাসরা ১২-২০ বছর পর্যন্ত বাচে। তবে তাদের জীবনটা নিঃসঙ্গ অবস্থায়, খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে কেটে যায়।