মাতিলদা

আমরা ছোটবেলা  থেকে শিখি বাবা মায়ের কথা শুনতে হয়, তারা যেভাবে যা বলেন তা মেনে চলতে হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বাবা মা যদি ভুল হয় তখন কী করা যায়?

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2017, 04:41 AM
Updated : 3 April 2017, 04:41 AM

আমরা সবাই জানি বাবা মা কখনও ভুল হয় না। তবে কারু বাবা মা যে ভুল করবেন না এটা জোর দিয়ে বলাও যায় না। তখন এই অদ্ভুত ভয়ংকর পরিবেশে বাচ্চাটা কী করবে সেই গল্পটাই বলেছেন রোয়াল ডাল। ঠিক ধরেছো উপন্যাসিক রোয়াল ডালের কথাই বলছি যাকে বলা হয় গত শতকের শ্রেষ্ঠ গল্প কথক। কেউ জানে না কেউ ভাবে না এমন মানুষদের নিয়ে কথা বলাই তো রোয়াল ডালের বিশেষত্ব।

মেয়েটির নাম মাতিলদা। এই আজব নাম যারা রাখতে পারে তাদের পরিবারও কম আজব নয়। যেমন ধরো তোমাদের বাসায় একটা শিশু জন্ম নিলে কী হবে? সবাই হই হই করে শিশুটিকে বরণ করবে না? মাতিলদার বাবা,মা আর বড় ভাই এতই আজব যে হাসপাতাল থেকে মাতিলদাকে নিয়ে আর বাড়ি এসে আর ঘর পর্যন্ত তোলে না,গাড়িতেই ফেলে চলে যায়।

অদ্ভুত জীবনের মেয়েটিকে নিয়ে গল্প লিখেছিলেন রোয়াল ডাল সেই ১৯৮৮ সালে। সেই গল্পটিই নিয়েই ১৯৯৬ সালে ড্যানি ডিভাইটো একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন সেটার নামও দেন মাতিলদা।

মাতিলদা যাকে কি না বাবা হাসপাতাল থেকে এনে ঘরে না নিয়ে গাড়িতে ফেলে চলে যাওয়ার মতো ভুল করে ফেলেছিল তার জীবনে এমন ভুল বার বার হতে থাকে। বাসার মানুষেরা ওর অস্তিত্ব প্রায়ই ভুলে যায়। মাতিলদা এরকম একটা পরিস্থিতিতে নিজের মতো একটা জীবন খুঁজে নেয়। তাই চার বছর বয়সে যখন একটা বাচ্চা ভালো করে পড়তেও শিখে না তখনই মাতিলদা একটা লাইব্রেরি খুঁজে বের করে সেখানে পড়াশোনা করতে চলে যায়। সে নিজের মতো করে নিজের জগত তৈরি করে যেটা সমাজের হিসেবে একদম ঠিকঠাক তবে ওর পরিবারের হিসেবে পুরাই বেঠিক।

সহসাই মাতিলদা যে সব বিষয়ে আনন্দ পায় তা ওর বাড়ির মানুষদের বিরক্ত করা শুরু করে। মাতিলদার সঙ্গে ওর পরিবারের মানুষদের বলতে গেলে যুদ্ধই লেগে যায়। মাতিলদা স্কুলে যেতে চাইলে ওর বাবা ওকে ধরে পিটায়। সেই রাগে ও ওর বাবার চুলে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড দিয়ে সব চুল সাদা করে ফেলে, ওর বাবা তার গ্যারেজে অনৈতিক কাজ করতে উদ্যত হলে ও বাবার টুপিতে আঠা লাগিয়ে বিরক্ত করে। এভাবে যুদ্ধ যুদ্ধেই একদিন বাসার সবাই টেলিভিশন দেখছিল। মাতিলদা এক কোণায় বসে লাইব্রেরি থেকে আনা বই পড়ছিল। ওর বাবা বইটা ধরে ছিঁড়ে ফেলে আর সবার সঙ্গে টেলিভিশন দেখতে জোর করে। সেদিন যে কী হয় কেউ বলতে পারবে না, মাতিলদা রাগী চোখে টেলিভিশনটিকে দেখতে থাকে আর টেলিভিশনটি এমনি এমনিই ফেটে চৌচির হয়ে যায়।

এদিকে মাতিলদার সঙ্গে একজনের পরিচয় হয়। তিনি মাতিলদার মতোই ধীর স্থির পড়তে ভালোবাসে, বুদ্ধিমান এবং মায়াবী দেখতে একজন মহিলা। তার নাম হ্যারি। হ্যারি মাতিলদার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। তিনি চান মাতিলদা তার স্কুলে এসে ভর্তি হোক কিন্তু মাতিলদার পরিবারকে কে বোঝাবে? হ্যারি নিজেই আসেন এই অসম্ভব কাজটা করতে। তবে হ্যারি এবং মাতিলদা যত কঠিন ভেবেছিল বিষয়টা তত কঠিন হয় না। মাতিলদার পরিবার মাতিলদার উপর এতই বিরক্ত যে ওকে বের করে দিতে পারলেই ওরা বাচে। হ্যারির সঙ্গে শুরু হয় মাতিলদার নতুন জীবনের যাত্রা।

হ্যারির স্কুল ক্রাঞ্চেম হল একটা বাচ্চাদের স্কুল তবে বাচ্চাদের স্কুল বললে যেমন দারুণ সুন্দর একটা ব্যাপার চোখে আসে ক্রাঞ্চেম হলে এমন কিছু নাই। এখানে মিস ট্রাঞ্চবুল নামে একজন ভীষণ মোটা নিষ্ঠুর মহিলা প্রধান শিক্ষক। তিনি বাচ্চাদের ভীষণ অত্যাচার করেন। একটু চুন থেকে নুন খসলেই বাচ্চাদের ধরে বলের মতো ছুড়ে ফেলেন। এমন নিষ্ঠুর পরিবেশের স্বীকার হ্যারি নিজেও।

মাতিলদা তার পুরানো জীবনের যুদ্ধ এড়াতে এসে একটা নতুন যুদ্ধে পরে। এই যুদ্ধে কীভাবে মাতিলদা পার পাবে এটা জানতে হলে দেখতে হবে মাতিলদা। অসাধারণ গল্পের অসাধারণ এই সিনেমায় সবার অভিনয়ও খুব দারুণ। মাতিলদার তো বটেই রাগী পাজি ট্রাঞ্চবুলের অভিনয়ও তোমাকে মুগ্ধ করবে।