কানামাছি ভোঁ ভোঁ
মাকসুদা আজীজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 26 Jan 2017 02:20 PM BdST Updated: 26 Jan 2017 02:20 PM BdST
অনেকগুলা ছোটছোট ছেলে-মেয়ে যখন একসঙ্গে হয় তখন কী করতে সবচেয়ে মজা লাগে বল তো? আমার সবচেয়ে ভালো লাগে দৌড়াদৌড়ি করতে আর অকারণে লাফাতে। এইটা করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত খেলা হলো কানামাছি।
কানামাছি একটা লোকজ খেলা। এটি খেলতে কোনো সরঞ্জাম লাগে না। শুধু এক টুকরো কাপড় আর কিছুটা জায়গা হলেই হয়ে যায়। এমনকি মাঠ, ছাদ বা ঘরের মধ্যেও খেলতে কোনো সমস্যা হয় না। শুধু ‘কানা’ যে হবে তাকে একটু হাঁটাহাঁটি করার যায়গা করে দিতে পারলেই অনেক। ঘরে যদি খেলা হয় তবে আসবাব কম থাকা ভালো। নাহলে যে বেচারা ‘কানা’ হবে সে ‘ঠুসঠাস’ গুঁতো খেতে পারে।
কানামাছির ‘কানা’ মানে কিন্তু দিনকানা রাতকানা ধরণের কিছু নয়। দিব্যি চোখে দেখতে পাওয়া একজন মানুষ। কিন্তু খেলার শুরুতে যখন বটে নাওয়া হয়েছে, সেই পদ্ধতিতে সে ‘কানা’ নির্বাচিত হয়েছেন। বটে নেওয়ার বিষয়টাও খুব মজার। বটে নাওয়ার সাধারণ অর্থ হলো একজনকে বেছে নেওয়া। এই বাছাই প্রক্রিয়ার নাম ‘বটা’। বটতে হলে একটা ছড়া জানা চাই। ছড়াগুলোও খুব মজার। যেমন,
আকাশ থেকে নেমে এলো ছোট্ট একটি প্লেন,
সেই প্লেনে বসে ছিল লাল টুকটুক মেম।
মেমকে আমি জিজ্ঞেস করলাম what is your name?
মেম আমাকে উত্তর দিলো, my name is,
সুস মি তা সেন।
অথবা
অবু দশ কুড়ি নাড়ি-ভুরি
চিংড়ি মাছের চর চরি
কে কত আনা দেবে
বলে দাও না ভাই বো নে রা
এরকম অনেকগুলো বটার ছড়া আছে। এই ছড়া টেনে টেনে একজন বলে আর প্রতিটা শব্দে একজনের দিকে নির্দেশ করা হয়। যার দিকে নির্দেশ করা অবস্থায় ছড়াটা শেষ হয়ে যায় সে ‘উঠে’ যায়। মানে সে নিরাপদ। এখন বাকিদের মধ্যে আবার একই পদ্ধতিতে ছড়া আওড়ানো হয় আর একজন একজন ‘উঠে’ যায়। শেষ দুইজনের মধ্যে যখন একজন ‘উঠে’ যায় তখন যে বাকি থাকে তাকে হতে হয় ‘কানা’।
কানা যেন দেখতে না পায় তাই তার চোখ একটা রুমাল বা কাপড়ের টুকরা দিয়ে বাধা হয়। বন্ধন এমন হয় যাতে সে চোখেও দেখে না আবার চোখে ব্যথাও না পায়। মানে হলো খুব শক্তও না আবার হালকাও না। চোখ বাধার পরে একজন ‘কানা’র চোখের সামনে আঙ্গুল দিয়ে জিজ্ঞেস করে কতগুলো আঙ্গুল আছে। এভাবে বুঝতে হয় সে দেখতে পাচ্ছে নাকি অথবা কতটা দেখতে পাচ্ছে। ধরো তখন যদি কেউ দেখেও না দেখার ভাব করে সেটাও বুঝে ফেলা যায়। মিথ্যা বলে আর কতক্ষণ টিকে থাকা যায় বলো?
চোখ বেঁধে কানা বানিয়ে ফেলার পরে শুরু হয় আসলে খেলা। তখন কানাকে এলোমেলো ঘুরিয়ে দিয়ে বাকিরা চারিদিকে ছড়িয়ে পরে। কানার কাজ হলো অন্যদের খুঁজে বের করে স্পর্শ করা। এটা শুনতে যত সমস্যা মনে হচ্ছে আসলে এত সমস্যা হয় না। কারণ অন্য খেলোয়াড়রা কানার কাছ থেকে বাচতে এদিক ওদিক দৌড়ায় সেই আওয়াজে কানা ঠিকই টের পায় কে কোথায় আছে। আবার মজা করতে অন্য খেলোয়াড়রা একটু দূরে গিয়ে কানাকে ‘কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে খুশি তাকে ছোঁ’ ছড়া কেটে ডাকও দেয়। কানা সেদিক দৌড় দেয়। এইভাবে দৌড়াদৌড়ির মধ্যে কানা যদি কাউকে ছুঁয়ে দেয় তবে কানার কানা হওয়ার পালা শেষ। যাকে ছোঁয়া হয়েছে সে নতুন ‘কানা’ এখন তার চোখ বাধা হবে আর যতক্ষণ সে অন্য কাউকে না ছুঁতে পারবে একই পদ্ধতিতে খেলা চলতে থাকবে। যতক্ষণ খেলোয়াড়রা ক্লান্ত হয়ে খেলায় ক্ষান্ত না দিচ্ছে।
কানামাছি খেলায় অন্তত পক্ষে তিনজন খেলোয়াড় লাগে। একজন ‘কানা’ আর দুইজন সাধারণ খেলোয়াড়। তবে ১০-১২ জন বা তার বেশি খেলোয়াড় থাকলেও কোন সমস্যা হয় না।
কানামাছি যখন খেলা হয় তখন বাচ্চাদের হুল্লোড় খিলখিল শব্দে জায়গাটা মুখর হয়ে উঠে। দৌড়া দৌড়ি তো আছেই। এমন মজার খেলা না খেলে কীভাবে থাকা যায় বলো? তাহলে এরপর বন্ধুরা একসঙ্গে হলেই এই মজার খেলাটা খেলে ফেলা যায়। ছবিতে দেখো, বাচ্চাগুলো কানামাছি খেলতে পেরে কী খুশি!
সর্বাধিক পঠিত
- তোমার নামের অর্থ কী?
- পিঁপড়া ও ডায়নোসরের গল্প
- জালাল উদ্দিন রুমির ৩০টি অমিয় পংক্তি
- এ পি জে আবদুল কালামের ৩০টি অমিয় বাণী
- চারটি মজার গল্প
- পথশিশুদের নিয়ে অভিনব ‘পথের ইশকুল’
- অংক, সংখ্যা আর গণিতের খেলা
- উড়ুক্কু সাপ ও পিরামিড রহস্য: শেষ কিস্তি
- একটি ভূতের গল্প লেখার পরের ঘটনা
- বঙ্গবন্ধুর বাংলা জন্ম তারিখ কি আমরা জানি!