হাতের লেখার দিন

মানুষের লেখার ইতিহাসের শুরুতেই ছিল হাত দিয়ে লেখা। মানুষ গাছের বাকল বলো, পাতা বলো, মাটি বা পাথর বলো এর উপরে হাতের সাহায্যে কোনো কিছু দিয়ে লিখত। প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে লেখালেখি করার জন্য মানুষের হাতের বদলে এখন ব্যবহৃত হয় কিবোর্ড। যেটা টিপ দিয়ে দিয়ে আমরা লেখালেখি করি। সেটাকে আর লেখা বলা চলে না সেটি হলো টাইপিং।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2017, 12:59 PM
Updated : 23 Jan 2017, 12:59 PM

কি বোর্ডে লেখালেখি করা যে খারাপ এমন নয়। তবে হাতে লেখার মধ্যে একটা আন্তরিক বিষয় আছে। যেমন আমাদের মনে অনেক কিছু চলতে পারে, আমরা তাড়াহুড়োয় থাকতে পারি, অনেক যত্ন ও ভালোবাসা নিয়ে কিছু লিখতে পারি। এমন খুঁটিনাটি বিষয় কখনও কিবোর্ডে টাইপ করে বোঝানো সম্ভব নয়। এ ছাড়াও হাতের লেখায় একটা নিজস্ব দক্ষতার বিষয়। তা ছাড়া আজকে যেসব কম্পিউটার ফন্ট আমরা দেখি সেগুলো আসে কারও না কারও হাতের লেখা থেকে। তাই যতই প্রযুক্তি আসুক হাতের লেখার গুরুত্ব সহসা শেষ হবে না।

এখন বলি হাতের লেখা দিবস বিষয়টা কোথা থেকে এলো। এটা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় দিবস। এই দিবস শুরুর আগে চলো হাতের লেখার ইতিহাসটা জেনে আসি—

খৃষ্টের জন্মেরও পাঁচশ বছর মতো আগেই রোমানরা হাতে লেখার প্রচলন করে। সে সময় যারা লিখতে পারতো তাদের বিরাট কদর ছিল। আর যাদের হাতের লেখা ভালো তাদের তো কথাই নেই। সব জরুরি লেখা লেখানো হতো তাদের দিয়ে। তাদের পেনম্যান বা লেখব বলা হতো।

এর মধ্যে রোমানদের পতন হলো কিন্তু এই পেনম্যান সভ্যতা টিকে থাকলো। অন্যরা সবাই এরকম পেনম্যানদের কাজ গ্রহণ করলো আর এটা হয়ে গেলো একটা পেশা। এভাবে আস্তে আস্তে সমগ্র ইউরোপেই এ পেশার কদর বাড়তে থাকলো। তখন তো আর ছাপাখানা ছিল না তাই হাতে লিখেই বই, দলিল জরুরী কাগজ তৈরি করতে হতো। এমনকি ১৭০০ সালে তো হাতের লেখা সুন্দর করার স্কুল পর্যন্ত হয়ে গেল। কিন্তু দিনগুলো এমন আর রইলো কই? এরপর টাইপ রাইটার আসলো, প্রিন্টিং প্রেস আসলো, কম্পিউটার আসলো। এভাবে ধীরে ধীরে হাতের লেখার প্রচলন উঠে যেতে থাকলো।

এখন হাতের লেখার চল উঠে গেলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি কাদের? যারা হাতে লেখালেখির সরঞ্জাম তৈরি করে বা বিক্রি করে, আর কাদের? তো আমেরিকার লেখালেখির সরঞ্জাম তৈরি করে এমন লোকদের নিয়ে গঠিত সংগঠন নাম, ‘ রাইটিং ইস্ট্রুমেন্ট ম্যানুফেকচারিং এসোসিয়েশন’ (WIMA) ভেবে দেখলো এভাবে হবে না। ওর করলো কি, একটা দিন ঠিক করল যেদিন সবাই হাতের লেখা নিয়ে ভাববে হাতের লেখার গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা করবে এবং হাতে লেখালেখিও করবে। দিনটি ঠিক করা হলো ২৩ জানুয়ারি। সেদিন আবার জন হ্যানককের জন্মদিন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুক্তির সনদে সাক্ষর করেছিলেন। এই সাক্ষরের ফলে আমেরিকায় ব্রিটিশদের উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়। এটিকে আমেরিকার মুক্তিযুদ্ধও বলতে পারো। এই যুদ্ধ ১৭৭৫ সালে হওয়ার যুদ্ধ শুরু হয় এবং প্রায় ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত চলে। জন হ্যানককের দীর্ঘ এবং সুন্দর সাক্ষরের জন্য এই দেশ প্রেমিক একটা নতুন পরিচয় পান। এ কথাটি মনে রেখে WIMA র কর্তা ব্যক্তিরা জন হ্যানককের জন্মদিনকেই জাতীয় হাতের লেখা দিবস ঘোষণা করেন।

তবে হাতের লেখার বিষয়টি এত সাধারণ বা সহজ না। অথবা হাতের লেখা যে লেখার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেই কাজে আসে তাও নয়। অনেক সময় হাতের লেখা খারাপ বা দুর্বোধ্য হলে সেটা জীবন নাশের কারণও হয়। যেমন ডাক্তারের লেখা প্রেসক্রিপশন বুঝতে না পারার কারণে ভ্রান্তি হরহামেশাই হয়। আবার ভুল নির্দেশ চলে গেলে অনেক অঘটন ঘটতে পারে।

তাই দিবস যে দেশেরই হোক আমরা নিজ নিজ হাতের লেখা উন্নত করার চেষ্টা করতেই পারি। যখন হাতের লেখা পরিচ্ছন্ন হবে তখন দেখবে পরীক্ষার খাতায় এমনিও নাম্বার বেশি আসবে। আর সবাই ভালোবাসবে এটা তো উপরি পাওনা আছেই।