চিঠি লেখার দিন

ফান হলিডে বা আন অফিসিয়াল হলিডে বলে একটা বিষয় বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। এই হলিডের লক্ষ্য হচ্ছে বিশেষ কোনো কারণকে মনে রাখা বা উৎযাপন করা। কখনও কখনও বিশেষ কোনো বিষয়ে সবাইকে সচেতন করাও এই ফান হলিডের উদ্দেশ্য। যেমন একটা খুব জরুরী ফান হলিডে হলো মা দিবস। তোমার জীবনে মা কত জরুরী এটা অনুধাবন করার জন্য আর মাকে সময় করে ধন্যবাদ জানানোর জন্য এই দিনের কোনো বিকল্প নাই।

রাসয়াত রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2016, 01:38 PM
Updated : 7 Dec 2016, 01:38 PM

এমনিতে এসব দিবস পালনের পিছনে বড় কোনো ইতিহাস বা কারণ থাকে। তবে কিছু দিবস এমনিই পালন করা হয়। কে যে এমন দিব তৈরি করেছিল অনেক দিন পরে সেটাও কেউ সেভাবে মনে রাখে না। তবে যে কারণে পালন করা হয় সেটা ঠিকঠাক ভাবে পালিত হলেই হয়।

চিঠি লেখার দিবস ঠিক তেমনি একটি দিন। কম্পিউটার আর স্মার্টফোনের যুগে এসে চিঠি লেখার বিষয়টা একদম উঠেই গেছে বলা চলে। প্রযুক্তির এতটাই উন্নয়ন হয়েছে যে বিশাল করে একটা চিঠি না লিখলেও চলে। যখন যা মনে আসছে টুক টুক করে প্রিয়জনকে ছোট একটা এস এম এস, চ্যাট, খুব বেশি হলে একটা ইমেইলের মধ্য দিয়ে পাঠিয়েই দেওয়া যায়।

তবে আগের যুগে বার্তা পাঠানো এত সমজ ছিল না। একটা বার্তা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে বিশাল সময় লাগতো। চাইলেই চট করে একটা বার্তা পাঠানোই যেত না। তখন মনের কথা জমে জমে একটা বিশাল পাহাড় হতো তাই চিঠিগুলোও হত পেল্লাই বড়।

পুরনো দিনের চিঠির সবচেয়ে মজার দিক কী ছিল জানো? সেখানে চিঠি মানে শুধু মনের কথাই ছিল না, এর থেকেও অনেক বেশি কিছু ছিল। যেমন, চিঠির কাগজ একটা বিশাল ব্যাপার ছিল। শুধু কাগজ দেখেই বোঝা যেত যিনি চিঠি লিখেছেন তার যত্ন আর ভালোবাসা কতটা গভীর। আবার ধরো, চিঠি লেখার কলম, হাতের লেখা ইত্যাদি দিয়েও চিঠির অনেক ব্যাপার-স্যাপার বোঝা যেত যা আজ আমাদের যুগের মেশিন নির্ভর মানুষ বুঝতেই পারব না। চিঠির আরেকটা দারুণ বিষয় ছিল এর গন্ধ। যিনি চিঠি লিখতেন তার স্পর্শ পেতে প্রাপক মানে যাকে চিঠি লেখা হচ্ছে কাগজ শুকেও দেখতেন। কেউ কেউ তো চিঠিতে আলাদা করে সুগন্ধি যোগও করতেন।

চিঠির ইতিহাস একদম লিখিত ভাষার ইতিহাসের সমান প্রাচীন। চিঠি লেখার ঐতিহাসিক গুরুত্ব কিন্তু অনেক। যখন থেকে ভাষা আবিষ্কার হয়েছে তখন থেকেই চিঠি লেখার প্রচলন আছে। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মাঝে মাঝেই পাথরে বা গুহার দেওয়ালে খোদাই করা প্রাচীন চিঠি আবিষ্কার করেন। রাজা বাদশারাও সংবাদ প্রেরণ করত এই চিঠির মাধ্যমেই। ইমেইলের কোন স্বকীয়তা নেই কিন্তু চিঠির একটা মানুষের নিজ হাতে লেখা বলে ঐতিহাসিক চিঠি দেখলে আমরা রোমাঞ্চিত হই।

একদম শুরু থেকেই মানুষ মনের কথা বলতে অথবা নিতান্তই কেজো বার্তা পাঠাতে চিঠির সাহায্য নিতো। এভাবে মানুষের দিন বেশ চলছিল। এই চিঠির আদার প্রদানের কাজ করতো ডাক পিয়নেরা। নিজের প্রিয়জনের মতো এই মানুষগুলোর বিষয়েও মানুষ একই টান অনুভব করত। শিল্প সাহিত্যেও এই পেশাটা বেশ গুরুত্ব পেত।

চিঠির এই সুদিনগুলো কমতে থাকে টেলিগ্রাফের আবির্ভাবের পরে। আস্তে আস্তে মানুষ দ্রুত এবং সুরক্ষিত বার্তার দিকে এগিয়ে যায়। এখন তো ইমেইলও পুরনো হওয়ার পথে। তবুও লিখিত চিঠির শেষ বংশধর হয়ে একজন পর্যন্ত ইমেইলই টিকে আছে।

তোমরা ভাবতে পারো এত সুন্দর তড়িৎ যোগাযোগের মাধ্যমে থাকতে চিঠি হাতে লাখের কী দরকার। মজার বিষয়টাই এখানে। হাতে লেখা চিঠির মজা কিছুতেই এই আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা সম্ভব না। যারা অনেক জ্ঞানীগুণী মানুষ তাদের অনেকের চিঠি নিয়ে বইও আছে। যেমন পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু তার কন্যা ইন্দিরাকে যে চিঠি লিখতেন তা সংকলিত করে একটা বই করা হয়েছে বইটির নাম বাবার চিঠি।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যেমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ চিঠির সংকলনে বই আছে মুক্তিযুদ্ধের চিঠি।

কিন্তু আমাদের জীবনে চিঠির কাজ কী এটাই তো তোমরা জানতে চাও। এটারও মজার একটা প্রয়োজন আছে। ধরো কাউকে তুমি কিছু বলতে চাও কিন্তু বলতে পারছো না সুন্দর করে একটা চিঠি লিখে জানিয়ে দিতে পারো। আবার ধরো কাউকে কিছু খুব করে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার কিন্তু সে কথা বলার সুযোগই দিচ্ছে না। কোনো চিন্তা নাই লিখে ফেলো একটা চিঠি।

চিঠি সম্পর্কে একটা মজার কথা কী তোমরা জানো? ১৯ শতকের আগে খাম খুবই দুর্মূল্য বস্তু ছিল। কারণ তখন পর্যন্ত খাম সব হাতে বানানো হতো। সে সময় মানুষ আর খাম কিনতে যেত না। চিঠি লিখে ভাঁজ করে সিল করে দিতো যেন অন্য কেউ খুলে পড়তে না পারে।