‘ভূত’ এই নামটি শুনলেই দিনে দুপুরেই কেমন গা ছমছম করে তাই না বল? এর উপর যদি আবার একটা আস্ত ভূতের গল্প শুনি বা পড়ি তাহলে তো কথাই নেই। তবে ভয়ে দাঁত যতই কপাটি লাগুক না কেন, ভূতের গল্পের আকর্ষণ কিন্তু এড়ানো সহজ না। আর সেটা যদি হয় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতরে সিরিজের ভূত তাহলে তো কথাই নেই। কারণ এরা যে শুধু ভূত না। এরা ভীষণ অদ্ভুতও। তাই তো এদের গল্প পড়ার লোভ মোটেই এড়ানো যায় না।
শীর্ষেন্দুর অন্য সব ভূতের মতো ছায়াময়ের ভূতটিও খুব অদ্ভুত। সে মোটেই হাউ মাউ খাও বলে ভয় দেখায় না, বরং সে অত্যন্ত সৎ, উপকারী, বুদ্ধিমান ভূত। খুবই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আগলে রাখে শিমুলগড় গ্রামটিকে। এভাবে গ্রামকে ছায়া দেওয়ার জন্য তার নাম ‘ছায়াময়’। তোমরা তো জানোই শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্প মানেই রহস্য, রোমাঞ্চের ভরপুর যাত্রা যা চুম্বকের মতো আটকে রাখে শেষ পাতা পর্যন্ত, ছায়াময় গল্পটিও তার ব্যতিক্রম নয়।
তবে ছায়াময় কিন্তু শুরু থেকেই ভূত নন। ভূত হওয়ার আগে তার একটি মনুষ্য জীবনও ছিল।
ছায়াময় ছিলেন রায়দিঘির রাজা মহেন্দ্র প্রতাপের সভাসদ, চন্দ্রকুমার। তখন থেকেই তিনি বেশ নীতিবান। মূল্যবান সব মোহরের মোহে জ্ঞানশূন্য রাজা চন্দ্রকুমারকে হত্যা করতে গিয়ে নিজেই ঘায়েল হন। হিসেব অনুযায়ী কী হওয়ার কথা বল? ভূত হয়ে মহেন্দ্র প্রতাপের চৌদ্দ গুষ্টির ঘাড় মটকানোর কথা না বল? কিন্তু ছায়াময় তেমন ভূতই নন। তিনি খুবই সৎ এবং ন্যায় পরায়ণ ভূত। তাই তো আদর্শবান ও বুদ্ধিমান চন্দ্রকুমার নিজের মৃত্যুর পরেও ছায়াময় হয়ে নানান কৌশলে রাজার গুপ্তধনের সন্ধান দেন এর প্রকৃত উত্তরাধিকারী বিলেতে বেড়ে উঠা ইন্দ্রজিৎ প্রতাপকে।
আর্থিক লালসায় নয় বরং ঐতিহাসিক এই সব মোহর যেন সংরক্ষিত থাকে সেই আশায় রাজবাড়িতে এসে ইন্দ্র শুরু করে উদ্ধার অভিযান, তবে গুপ্তধন উদ্ধার করেও একের পর এক বিপদে পরে তা রক্ষা করতে পারে না। তাকে চোরের অপবাদ দিয়ে মোহরগুলো ছিনিয়ে নেয় শিমুলগড় গ্রামের হাড় কৃপণ, নীতি হীন বন্দক কারবারি গগন সাঁপুই।
কিন্তু ছায়াময় তো মোহরগুলোকে এইভাবে বেহাত হতে দিতে পারেন না, তাই গগনের কাছ থেকে মোহর উদ্ধারের জন্য ইন্দ্রকে করতে থাকেন নানান সহযোগিতা।
এদিকে গগনও মোহরগুলোকে কব্জা করে রাখতে করতে থাকে একের পর এক কাণ্ড, এইসব ঘটনার প্রবাহে গাঁয়ের মোড়ল মাতব্বর, ভণ্ড কাপালিক, পাগলাটে জ্যোতিষী, ভাড়াটে খুনি, বোকা লাঠিয়ালসহ অনেকগুলো চরিত্র জুড়তে থাকে। এরা প্রত্যেকেই এই গল্পে এনে দেয় নতুন নতুন মোড়।
একদিকে একের পর এক বিপদ, চোরের অপবাদ, জীবনের ঝুঁকি, তার উপর গগনের মতো ভয়ংকর লোক। এখন ঐতিহাসিক এইসব মোহরগুলো সঠিক মূল্যায়ন আদৌ হতে পারবে কি-না তা জানতে হলে আমাদের ঢুকতে হবে ছায়াময়ের মায়ার জগতে। কথা দিচ্ছি একবার সেই জগত খুলে বসলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত উঠে যেতে মনই চাইবে না।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়-এর অন্য সব গল্পের মতো এই গল্পটিও সব বয়সের মানুষের পছন্দের। গল্পটি এতই জনপ্রিয় যে, এই গল্পটিকে ২০১২ সালে সিনেমার রূপ দেওয়া হয়েছিল। যেখানে ছায়াময়ের ভূমিকায় ছিলেন আমাদের সবার প্রিয় ফেলুদা অর্থাৎ সব্যসাচী চক্রবর্তী।