বুক রিভিউ: কিং সলোমন’স মাইনস

কিং সলোমন’স মাইনস বইটি সম্পর্কে জানার আগে বইটির প্রকাশের আগের কিছু ঘটনা জানা দরকার। এই বইটি ইংরেজি ভাষায় রচিত প্রথম ভ্রমণ উপন্যাস যেটা, আফ্রিকা মহাদেশ নিয়ে লেখা হয়েছিলো।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2015, 05:52 AM
Updated : 5 Oct 2016, 07:18 PM

বইয়ের নাম – কিং সলোমন’স মাইনস (সলোমনের গুপ্তধন)

লেখক – স্যার হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড

অনুবাদ – রকিব হাসান

প্রকাশক - সেবা প্রকাশনী

আমি বলছি ১৮৮৫ সালের কথা। আফ্রিকা তখন রহস্যের জালে ঢাকা একটি মহাদেশ। এই বনভূমি, নদী আর মরুভূমির মহাদেশ সম্পর্কে ইউরোপিয়ানদের জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। সেসময় মিশরীয় সভ্যতা সম্পর্কেও ইউরোপিয়ানরা জানতো না। তাই বইটির প্রকাশনা সংস্থা ধারণা করেন বইটি পাঠকদের আকর্ষণ করতে পারবে। তারপরেও পাঠকদের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য পত্রিকায়, বিলবোর্ডে অনেক প্রচারণা চালানো হয়, তাই বইটি বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়।

কিন্তু এটা স্বীকার না করে পারাই যাবে না যে কিং সলোমন’স মাইনস একটা কালজয়ী উপন্যাস এবং বিশ্বসাহিত্যের একটি অমূল্য রত্ন। পরবর্তীতে এই বইটিই মানুষের মধ্যে আফ্রিকার অজানা রহস্য অনুসন্ধান করার আগ্রহ তৈরি করে। বইটি পড়ার পরে ইউরোপ থেকে অনেকেই আফ্রিকার অভিযানে রওনা হয়। সেসব অভিযানের ফলেই আধুনিক মানুষের সামনে বের হয়ে আসে হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন সভ্যতা আর বৈচিত্র্যে ভরা একটি অনন্য রাজ্য। এই বইটি সাহিত্য জগতে ‘হারানো পৃথিবী’ বা ‘লস্ট ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি নতুন ‘জনরা’ সৃষ্টি করে।

কিং সলোমন’স মাইনস বইয়ের লেখক হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড ১৯ বছর বয়সে আফ্রিকা মহাদেশ চষে বেড়িয়েছিলেন। উনি আফ্রিকার তৎকালীন দুইটি বিখ্যাত যুদ্ধ অ্যাংলো ও জুলু সম্প্রদায়ের মধ্যের যুদ্ধ এবং প্রথম বয়ের যুদ্ধের সময় আফ্রিকা মহাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভ্রমণ করেছেন। আফ্রিকার ধ্বংসপ্রাপ্ত সভ্যতা আর সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদ তাকে খুব মুগ্ধ করে। সেসময় একজন বিখ্যাত ব্রিটিশ শিকারি ছিলেন, নাম ফ্রেডরিক সেলাস। সেলাসের জীবনের সত্যি গল্পগুলো হ্যাগার্ডকে প্রভাবিত করতো। সেইসব গল্পের উপর ভিত্তি করেই হ্যাগার্ড সেলাসের মতো একজন কাল্পনিক চরিত্র তৈরি করেন, নাম দেন এলেন কোয়াটামেইন।

কোয়াটামেইনকে মূল চরিত্র রেখে কিং সলোমন’স মাইনস বইটি লেখা। তিনজন এডভেঞ্চার প্রেমীর একটি দলের গুপ্তধন খুঁজার কাহিনী। গ্রুপের প্রধান এলেন কোয়াটামেইন, হাতি শিকার করে দাঁত বিক্রি করা হচ্ছে তার পেশা। এ কাজ করে তার দিনকাল ভালই চলছিলো। কিন্তু কারও জীবন একভাবেই চলতে থাকলে তো আর তাকে নিয়ে গল্প হবে না, তাই একদিন কোয়াটামেইনের সঙ্গে দেখা হয় স্যার হেনরি কার্টিস এবং ক্যাপ্টেন গুড নামে দুজন লোকের। স্যার কার্টিসের এক ভাই এই কিং সলেমনের গুপ্তধন খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছেন। এই অজানা মহাদেশে হারিয়ে যাওয়া ভাইকে খুঁজতে তারা এসেছে। যেহেতু কোয়াটামেইন এই বন জঙ্গল মোটামুটি ভালো চিনে তাই তারা কোয়াটামেইনের সাহায্য চান। 

কিং সলেমোনের গুপ্তধন সে এলাকার একটা জনপ্রিয় মিথ। এর কথা কোয়াটারমেইন আগেই জানতো। মজার কথা হচ্ছে, তার কাছে এই গুপ্তধনের কাছে পৌঁছানো জন্য একটি অদ্ভুত মানচিত্রও ছিল। তিনি কখনও সেই মানচিত্রটিকে তেমন গুরুত্বের সঙ্গে দেখেনি। যাই হোক। প্রথমে গাঁইগুঁই করলেও, কিছু শর্তে একসময় এই গুপ্তধন খুঁজতে জেতে রাজি হয়ে যান। কিছু দাস নিয়ে কয়েকদিন পরেই তিনজন রওনা হয় অভিযানে। এই দাসদের একজন হলেন আমবোপা যিনি বইয়ের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র। প্রচুর বাধা বিপত্তি পেরিয়ে মৃত্যুকে পেছনে ফেলে দলটি এগিয়ে চলে রাজা সলোমনের গুপ্তধনের উদ্দেশ্যে। যাত্রার পদে পদে রয়েছে যুদ্ধ-বিগ্রহ। আরও রয়েছে টানটান উত্তেজনা।

অসাধারণ এই বইটি তোমাদের সামনে খুলে দিবে অফ্রিকার অদ্ভুত সব উপাখ্যান। প্রকাশের প্রায় দেড়শ বছর পরে এসেও এই উত্তেজনা একটুও মলিন হয়নি। বরং তখনকার ইউরোপ বাসীদের মতো তোমদের মনও আফ্রিকায় ভ্রমণের জন্য আকুপাকু শুরু করতে পারে।