এক মাস পানির নিচে খিলক্ষেতের প্রধান সড়ক

রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার প্রধান সড়কটি গত এক মাস ধরে পানিতে তলিয়ে থাকায় যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

ওবায়দুর মাসুমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2017, 03:56 AM
Updated : 11 July 2017, 04:03 AM

পানি নিষ্কাশনের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা ঈদের আগে মানববন্ধন করেছেন, তাতে সমস্যার সমাধান হয়নি।

সোমবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, খিলক্ষেত বাজারের মান্নান প্লাজার সামনে থেকে বটতলা বাজার পর্যন্ত সড়কে পানি জমে আছে। হেঁটে চলাচলের উপায় নেই;রিকশা বা অটোরিকশাই যাতায়াতের ভরসা।

তবে ডুবে থাকা সড়কে এসব বাহনও প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ে বলে জানান মাজহারুল ইসলাম নামের এক রিকশাচালক।

পরনের হাফপ্যান্ট দেখিয়ে তিনি বলেন, লুঙ্গি পরে রিকশা চালানোর সুযোগ নেই। প্রায়ই রিকশা উল্টে যায়।

“আমিও দুইদিন উল্ডাইয়া পইরা গেছি। লুঙ্গি থাকলে সমস্যা, লুঙ্গি ধরুম না রিশকা ধরুম। হেরলাইগা হাপ্পেন পইরা গাড়ি চালাই।”

মাজহারুল ইসলামের রিকশায় করে ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আবুর টেক সড়ক, বটতলা বাংলা লিংক গলি, কুর্মিটোলা স্কুলের গলিতে এখনও পানি জমে আছে।

এছাড়া হাজী বাড়ি রোড, নয়ানগর গলি, খিলক্ষেত মধ্যপাড়া সড়ক এবং তালেরটেক সড়কে বৃষ্টি হলেই পানি জমে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খিলক্ষেত এলাকার বিভিন্ন সড়কের পানি দুটি বড় নালা হয়ে খিলক্ষেত বাজার এবং পূর্ব নামাপাড়ার খালে পড়ে। কিন্তু সেই খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি যেতে পারছে না।

এছাড়া এলাকার নিচু জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেখানেও পানি যেতে পারে না। ফলে বৃষ্টি হলে খিলক্ষেত এলাকার পানি নামতে না পেরে সড়ক ও বাসাবাড়িতে জমে থাকছে।

খিলক্ষেত নামাপাড়ার বাসিন্দা মো. জালাল উদ্দিনের অভিযোগ, প্রধান সড়কে পানি জমে থাকলেও নিষ্কাশনে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সিটি করপোরেশন।

“খিলক্ষেতে মানুষ থাকে না। আমাদের যদি মানুষ মনে করত তাইলে সড়কের এই অবস্থা থাকে না। হেঁটে আসার কোনো উপায় নাই। ২০ টাকার রিকশাভাড়া ৭০-৮০ টাকা দেওয়া লাগে। তাও আসতে চায় না।”

হাজীবাড়ী সড়কের বাসিন্দা তুষার বেপারী বলেন, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডুবে থাকা সড়কে ভাসমান পয়োবর্জ্যের কারণে। দুর্গন্ধে চলাফেরা করাই কঠিন।

“একমাস হয় এই অবস্থা। এমন দুর্গন্ধ… এই পানিতে হাঁটাচলা করলে পায়ে চুলকানি হয়ে যায়।”

পানি ওঠার কারণে সড়কের পাশের দোকান বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীদের অনেকে। দোকানের সামনে দেয়াল তুলে কেউ কেউ পানি প্রবেশ ঠেকাতে পারলেও পানি ভেঙে ক্রেতারা আসছেন না।

খিলক্ষেত বাজারের প্রসাধন সামগ্রীর দোকান সাজঘরের মালিক মো. সালাহ উদ্দিন জানান, গত এক মাসে তিনবার তার দোকানে পানি উঠেছে।

“ঈদের আগে আমাদের কিছুটা ব্যবসা হয়। কিন্তু ঈদের আগে পরে পুরোটা সময় রাস্তা পানির নিচে। দোকান খুলে বসে থাকি। ক্রেতা আসে না।”

সড়কে পানি জমে থাকায় কারখানায় গাড়ি আসতে পারে না বলে জানান খিলক্ষেত বোটঘাট এলাকার গাড়ি মেরামত কারখানার মালিক জুলহাস উদ্দিন।

“আমার গ্যারেজে গুলশান, বনানী এলাকার গাড়িও ঠিক করার জন্য আসত। কিন্তু পানির জন্য গত একমাস গাড়িই আসে না। ব্যবসা লাটে ওঠার অবস্থা।”

জনগণের ভোগান্তির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ডা. জিন্নাত আলী বলেন, আশপাশের জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পানি সরতে পারছে না, জলাবদ্ধতা হচ্ছে।

“পুরো এলাকার চারিদিকে বালু ভরাট করে শহর হচ্ছে। পানি যাওয়ার জলাশয়গুলো ভরাট করায় পানি যেতে পারছে না। তবে ১০০ ফুট খালটা করা হয়ে গেলে এ সমস্যা থাকবে না।”

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এনামুল কবির বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রসেওয়ের নির্মাণকাজের জন্য বিমানবন্দর সড়কের পাশের জলাশয়গুলোয় ভরাট করা হয়েছে। পূর্ব নামাপাড়ায় পানি আরেকটি নির্গমন নালাও বন্ধ হয়ে গেছে।

“খিলক্ষেতের পানি আমাদের দুটি ড্রেনেজ লাইন দিয়ে সেসব জলাধারে জমা হত। কিন্তু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের জন্য সেগুলো ভরাট করে ফেলা হয়েছে। সেখানে নালার মুখও বালু দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সে কারণে পানি সরতে পারছে না।”

পানি নিষ্কাশনের জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা গত দুদিন ধরে ওই এলাকায় কাজ করছি। নালার মুখ থেকে বালু সরিয়ে দিয়েছি। পানি যাওয়ায় শুরু করেছে। নেভি অ্যাংকরেজ স্কুলের সামনে খাল কেটে দিয়েছি। পানি সরে যাবে আশা করছি।”