মিরপুরের পথে দুর্ভোগযাত্রা

অফিসযাত্রীদের ভিড় ঠেলেও আগে মিরপুর-১১ থেকে সাড়ে সাত কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ঘণ্টাখানেকের মধ‌্যে কলেজে পৌঁছাতে পারতেন হলিক্রসের ছাত্রী সাদিয়া আফরোজ; এখন সময় লাগে কয়েক গুণ বেশি।

কাজী নাফিয়া রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2017, 05:54 AM
Updated : 17 Jan 2017, 05:54 AM

মেট্রোরেলের নির্মাণযজ্ঞ সামনে রেখে সেবা সংস্থাগুলোর সংযোগ লাইন সরানোর কাজ শুরুর পর সাদিয়াকে এখন বাসা থেকে বের হতে হয় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা হাতে নিয়ে।  

“বিশেষ করে তালতলা পর্যন্ত জ্যামটা খুব বেশি থাকে। রাস্তা পার হতে গেলে বেশি সমস্যা হয়, ধুলায় প্রায়ই কিছু দেখা যায় না। এভাবে দুর্ঘটনারও হতে পারে। কিন্তু কিছুই করার নেই, এ পথ দিয়েই আমাকে কলেজ যেতে হবে।”

মিরপুর-১২ থেকে শেওড়াপাড়া-তালতলা পার হয়ে নিয়মিত যাদের গন্তব‌্যে পৌঁছাতে হয়, তাদের প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা মোটামুটি এক। নাকে হাত চেপে কিংবা মুখে মাস্ক পরে, কুঁচকানো কপালে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে উন্নয়নের ভোগান্তি সইছেন তারা।

রাস্তার একপাশে মাঝ বরাবর কেটে বিভিন্ন সেবা সংস্থার লাইন সরানোর কাজ চলছে। চলাচলের পথ সংকীর্ণ হয়ে আসায় তীব্র যানজট এখন প্রায় সারা দিনের বাস্তবতা।

এদিকে খুঁড়ে রাখা মাটি আর বালি স্তূপ করে রাখা হয়েছে সড়কের দুই পাশে। বাতাস দিলেই দেখা দিচ্ছে ধুলোর ঝড়। শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় ফুটপাতজুড়ে নির্মাণ সামগ্রী আর যন্ত্রপাতি রাখায় পথচারীদের নিরাপদে হাঁটারও উপায় নেই।

আর ফুটপাত দখল করে দোকান, ময়লা-আবর্জনা, অবৈধ পার্কিং, রাস্তাজুড়ে খানা-খন্দ, আর খুঁড়ে রাখা ঢিবির যন্ত্রণা তো পুরনো সমস‌্যা।  

এসব সমস্যার কথা জানলেও কর্তৃপক্ষের তা নিয়ে ‘গা নেই’ বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। আর গাড়ির যাত্রী থেকে শুরু করে পথচারীরা দুষছেন কর্তৃপক্ষের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ কর্মকাণ্ডকে।

ব্যাংক কর্মকর্তা সাজ্জাদ সায়েমকে রোকেয়া সরণী দিয়েই নিয়মিত অফিসে যেতে হয়। সংযোগ লাইন প্রতিস্থাপন শুরুর পর থেকে আগে বেরিয়েও প্রায় প্রতিদিনই অফিসে পৌঁছাতে তার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

তার মতে, প্রতিস্থাপন চলার সময় ফুটপাতগুলো খোলা রাখলে মানুষের ভোগান্তি কিছুটা কমত। আর রাস্তায় গাড়ি রাখা বন্ধ করলে যানজটও কমানো যেত।

শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা একরাম হোসেন ‘বিরক্ত’ অগোছালো কাজ নিয়ে।

“মেট্রোরেলের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু কাজগুলো আরেকটু গুছিয়ে করা দরকার ছিল। এলোমেলোভাবে কাজ করায় আমাদের দুর্ভোগ বেড়েছে।”

তিনি বলেন, প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা একটু মনোযোগী হলে ধুলোবালির সমস্যা এতো প্রকট হতে পারত না।

প্রতিস্থাপন কাজে থাকা শ্রমিক হাফিজুর রহমান বলেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাজ একসঙ্গে চলায় গত কয়েক মাস ধরে মানুষের সমস্যা হচ্ছে। এ কাজ শেষ হতে আরও কয়েক মাস লাগবে।

ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (মেট্রোরেল) প্রকল্প পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বলছেন, ‘অনভিজ্ঞতা’ আর একসঙ্গে ‘সব কাজ’ শেষ করার চেষ্টাতেই জনদুর্ভোগ খানিকটা বেড়েছিল, তবে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ তারা নিয়েছেন।

তিনি জানান, প্রস্তাবিত মেট্রোরেলের পথে মাটির নিচ দিয়ে ঢাকা ওয়াসা, ডেসা, ডেসকো, পিজিসিবি, তিতাস, বিটিসিএল, গ্রামীণফোন ও ফাইবার অ্যাট হোমের লাইন গেছে। গত বছরের জুনে আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে রাস্তা খুঁড়ে সব সংস্থার লাইন সরিয়ে এক জায়গায় আনার সিদ্ধান্ত হয়।

এজন্য পাওয়ার গ্রিড কোম্পানিকে রাস্তা খুঁড়তে বলা হয়; অন্য সংস্থাগুলোকেও একই জায়গা দিয়ে তাদের লাইন নিতে বলা হয়।

ওই সিদ্ধান্তের পর গত বছরের ১ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন বসানোর জন্য শুরু হয় খোড়াখুড়ি।

“যেসব সেবা সংস্থার পাইপ বা তার ওই এলাকায় রয়েছে, সেগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি; এখন সেগুলো সরানোর কাজ চলছে। এ ধরনের কাজ এর আগে হয়নি, তাই প্রথমে কিছু সমস্যা হয়েছে। এখন আর হবে না।

মিরপুর থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত সেবা সংস্থাগুলোর সংযোগ লাইন পুনস্থাপন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ কাজ চলবে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত।

“একবার রাস্তা কাটার মাধ্যমে সব কাজ শেষ করতে চাইছি আমরা। বার বার যেন রাস্তা কাটতে না হয়। আর বিভিন্ন সেবা সংস্থা কাজ করায় একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে সমাধানের জন‌্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি,” বলেন প্রকল্প পরিচালক।