কুড়িল রেলক্রসিং: বিকল্প না করে বন্ধ হচ্ছে পথচারী পারাপার

রাজধানীর কুড়িল রেলক্রসিং পারাপারে যানবাহনের জন্য ফ্লাইওভার করা হলেও পথচারী পারাপারে রাখা হয়নি কোনো ব্যবস্থা; অফিসগামী ছাড়াও রাজধানীর বাইরে আসা-যাওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ট্রেন চলাচলের ফাঁকে এ রেললাইন পার হলেও এবার বন্ধ হচ্ছে সে সুযোগ।

ওবায়দুর মাসুমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2016, 03:39 PM
Updated : 25 August 2016, 03:39 PM

কুড়িল চৌরাস্তা থেকে বিমানবন্দর সড়কে আসতে হলে পার হতে হয় ঢাকা-টঙ্গী রেললাইন। পথচারী পারাপারের কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না করেই সেখানে দেয়াল তৈরি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

তারা বলছে, নিরাপত্তার কারণে রেলপথের দুপাশে দেয়াল তোলা হয়েছে। পথচারীদের যাতায়াত তাদের দেখার বিষয় নয়।

আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র বলছেন, ওই স্থানে ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের প্রয়োজন রয়েছে বলে তার জানা নেই।

অথচ বিমানবন্দর সড়কের কুড়িল বিশ্বরোড বাসস্ট্যান্ড এসেই কুড়িল, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও নর্দ্দা এলাকার মানুষকে বনানী, মহাখালী, ফার্মগেট, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর ও শাহবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের বাস ধরতে হয়।

এছাড়া গাজীপুর, টাঙ্গাইল, বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন গন্তব্য থেকে আসা কুড়িল ও আশপাশের এলাকার যাত্রীদের এ বাসস্ট্যান্ডে নামতে হয়। বিমানবন্দর সড়কে চলাচলকারী বেশিরভাগ পরিবহনের বাস এখানে যাত্রী তোলে, নামায়।

কুড়িল রেলক্রসিং এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রেলপথ ঘিরে বিমানবন্দর সড়কের অংশে লম্বা দেয়াল তোলা হয়েছে। এখন পাশের একটি সরু জায়গা দিয়ে পার হচ্ছে পথচারীরা।

কুড়িল প্রগতি সরণির অংশেও দেয়াল তুলে ফেলা হয়েছে। তবে এখানে দেয়ালের মাঝখানের একটি অংশে এখনও ইট বসানো হয়নি। দেয়ালের ওই ফাঁক গলেই শতশত পথচারী পার হচ্ছেন। এটিও খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানালেন দেয়াল নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা।

কুড়িল এলাকার বাসিন্দা মীর মো. মোকাব্বের হোসেন বলেন, লোকজনের পারাপারের এ পথ বন্ধ করা ঠিক হবে না। প্রয়োজনের তাগিদে পথচারীরাই দেয়াল ভেঙে ফেলবে।

“কুড়িল ফ্লাইওভারে পথচারীদের হাঁটার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও কেউ ফ্লাইওভার হয়ে পার হতে চাইলে তাকে নামতে হবে শ্যাওড়া অথবা খিলক্ষেত বাসস্ট্যান্ডে।”

কুড়াতলী এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল হাওলাদারের অফিস বনানী ডিওএইচএসে। তাকে প্রতিদিন এ পথে যাতায়াত করতে হয়। কুড়িল রেলক্রসিংয়ে দেয়াল তুলে দিলে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

“এই দেয়াল তুললে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে ছাড়া আর কোনো উপকার হবে না। আমরা রাস্তা পার হব কোন দিক দিয়ে, সেটা কেউ চিন্তা করেছে?”

সিরাজুলের মতো যাদের বনানী, কাকলি, মহাখালী বা ফার্মগেট থেকে এসে বিমানবন্দর সড়কের উত্তরা-গাজীপুরমুখী পাশে নামতে হয়- সড়কটি পার হওয়ার সুবিধায় তাদের জন্য বছরখানেক আগে একটি ‘দৃষ্টিনন্দন’ ফুটওভার ব্রিজ করেছে কর্তৃপক্ষ।

তবে এই ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে সড়ক পেরিয়ে এসে আগের মতো ঝুঁকি নিয়েই পার হতে হয় রেললাইন, এবার যে পথটি দেয়াল তুলে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

রেললাইনের দুপাশে দেয়াল তুলে দিলে বিমানবন্দর সড়কের ওপরে নির্মিত ফুটওভারব্রিজটি কোনো কাজে আসবে না বলে মন্তব্য করে এটি নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ব্যাংক কর্মকর্তা এনাম আহমেদ।

“বনানী থেকে এসে বিশ্বরোড নামার পর এই ফুটওভারব্রিজ পার হয়ে সড়কের অপরপ্রান্তে যেতে হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে রেলক্রসিং পার হতে না পারলে যাব কিভাবে? রেললাইনের ওপর দিয়ে পারাপারের ব্যবস্থা না করে ওই ফুটওভারব্রিজটা করলো কোন যুক্তিতে?”

এদিকে নিরাপত্তার কারণেই রেলপথের দুইপাশে দেয়াল তোলা হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন।

তিনি বলেন, পথচারীদের কারণে রেললাইনের ওপর প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এজন্য রেলের নিরাপত্তার কারণে দুপাশে দেয়াল তুলে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

পথচারী পারাপারের বিষয় দেখা রেলওয়ের কাজ নয় মন্তব্য করে রেলওয়ে মহাপরিচালক বলেন, “কুড়িল ফ্লাইওভার হওয়ার পর ওই সিগন্যাল দিয়ে আর কোনো যানবাহন চলাচল করে না। ওই সিগন্যাল আমরা পার্মানেন্টলি বন্ধ করে দিয়েছি। সেখানকার গেটম্যানকেও অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”

লোকজনের চলাচল থাকায় কুড়িল বিশ্বরোড রেলক্রসিং এলাকায় ছিনতাই, রাহাজানির মতো অপরাধ কম দাবি করে দেয়াল তুলে যাতায়াত বন্ধ করা হলে এখানে অপরাধ বেড়ে যাবে বলে মনে করেন কেউ কেউ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার এক চা দোকানি বলেন, “অহন তো রেললাইনে বছরে দু-একজন মরে ট্রেনে কাটা পইড়া। লোকজন না থাকলে এইহানে প্রত্যেক সাপ্তায় লাশ পড়ব। ছিনতাইকারীগো অনেক লাভ হইবো।”

কুড়িল ফ্লাইওভার প্রকল্পে রেলপথের ওপর ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের কোনো বিষয় ছিল না বলে জানান কুড়িল ফ্লাইওভার প্রকল্পের পরিচালক আবদুল আউয়াল।

সরকারি সব সংস্থা চাইলে এখানে একটি ফুটওভারব্রিজ বানানো যেতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “জায়গাটা রেলওয়ে এবং সড়ক ও জনপথের। তাদের সঙ্গে সমন্বয় ছাড়া ওখানে কিছু করা সম্ভব নয়। এ বিষয়টি আমরা সামনের সমন্বয় সভায় উত্থাপন করব।

“…সেখানে একটি ফ্লাইওভার হলে ভালো হয়। কিন্তু কনসার্ন সংস্থাগুলোকে তো সেভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সিটি করপোরেশনকেও জোরালোভাবে বলতে হবে যে ‘আমাদের নাগরিকরা এদিক দিয়ে যাতায়াত করে, তাদের পারাপারের সুযোগ দিতে হবে’।”

এদিকে কুড়িল বাসস্ট্যান্ডের রেলক্রসিংয়ে কোনো ফুটওভারব্রিজ করার পরিকল্পনা চিন্তা আপাতত নেই বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক।

“এই মুহূর্তে কুড়িলে ফুটওভারব্রিজ করার কোনো চিন্তাভাবনা নেই। আমাদের কাছে এ বিষয়ে কেউ কোনো ‘ডিমান্ড’ও দেয় নাই।”