গতিহীন উন্নয়নে দুর্গতিতে বাড্ডার থানা রোডবাসী

বৃষ্টির পানি যাতে সহজেই রাস্তা থেকে খালে চলে যায়, সেজন্য পুরনোটি তুলে নতুন করে আরও প্রশস্ত নল বসানো হচ্ছে ঢাকার উত্তর বাড্ডার থানা রোডে।

ওবায়দুর মাসুমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2016, 03:24 AM
Updated : 21 June 2016, 03:24 AM

স্থায়ী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে খোঁড়াখুঁড়ির এই দুর্ভোগ মেনে নিয়েছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু উন্নয়নের সেই আপাত দুর্ভোগে বর্ষায় নাকাল হতে হচ্ছে তাদের।

এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এই উন্নয়ন কাজ শুরুর আড়াই মাস পর চলে এসেছে বর্ষাকাল, অচল রাস্তা আর সচল হয়নি। খুঁড়ে রাখা গর্তের পাশ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে এখন চলাচল করতে হচ্ছে। আর বিকল্প সড়ক ধরতে গিয়ে পড়তে হচ্ছে যানজটে।

বাড্ডার প্রগতি সরণি থেকে উত্তর বাড্ডার হাজীপাড়া, আলীরমোড়, মিশ্রীটোলায় যাওয়ার অন্যতম প্রধান রাস্তা থানা রোড। মূল সড়ক থেকে উত্তর বাড্ডা বাজারে সাঁতারকুল সড়কের শুরুর অংশে চওড়া কম এবং অপরিকল্পিত বাঁক থাকার কারণে সাঁতারকুল ও বেরাইদের হাজার হাজার মানুষ থানা রোড ব্যবহার করে।

এই রাস্তা বন্ধ থাকায় উত্তর বাড্ডা বাজার এলাকায় যানজট প্রকট হয়ে উঠেছে বলে জানান আশপাশের দোকানি ও বাসিন্দারা।

জলাবদ্ধতা দূর করতে পুরনোটি তুলে নতুন প্রশস্ত নল বসানোর কাজ আড়াই মাস ধরে চলায় বর্ষায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঢাকার উত্তর বাড্ডার থানা রোডের বাসিন্দাদের। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

জলাবদ্ধতা দূর করতে পুরনোটি তুলে নতুন প্রশস্ত নল বসানোর কাজ আড়াই মাস ধরে চলায় বর্ষায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঢাকার উত্তর বাড্ডার থানা রোডের বাসিন্দাদের। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

“থানা রোড চালু থাকলে সোজা আলীর মোড়ে চইলা যাইতাম। চাইরদিকের গাড়িতে এমন প্যাঁচ লাগে, ধরেন গিয়া সাঁতারকুল রোডের মুখেই আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা বইসা থাকতে হয়, ” শনিবার দুপুরে উত্তর বাড্ডা বাজারের মাদ্রাসার সামনে যানজটে দাঁড়িয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন রিকশাচালক মাখন মিয়া।

থানা রোডে গিয়ে দেখা যায়, প্রগতি সরণি থেকে মিশ্রীটোলা পর্যন্ত অংশে পানি নিষ্কাশন নল বসানো হয়েছে। তবে ম্যানহোলগুলোতে কোনো ঢাকনা বসানো হয়নি। নল বসানো স্থানে মাটি ভরাট পর্যন্ত ঠিকভাবে করা হয়নি। এলাকাবাসীকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে।

উত্তর বাড্ডার মা কম্পিউটারের কর্ণধার মো. আমান উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোজার দুই মাস আগে থেকে রাস্তাটি খোঁড়া হয়। নল বসানো শুরু হয়েছে অল্প কয়েকদিন আগে।

“পাইপ বসাইয়া চইলা গেছে। রাস্তা পাকা করার কোনো খবর নাই।”

বেহাল রাস্তা দেখিয়ে উত্তর বাড্ডা মসজিদ গলির বাসিন্দা সুলতান আহমেদ বলেন, এখানে এখন মাঝে মাঝেই দুর্ঘটনা ঘটছে।

“বৃষ্টি হইলে পিছলা রাস্তায় হাঁটতে খুব কষ্ট হয়। সাইড দিয়া কোনোরকমে মোটর সাইকেল চলে। কয়েকদিন আগে এমন একজন মোটর সাইকেল নিয়া গর্তে পড়ছে। লোকটার মাথা ফাইটা গেল।”

রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে।

মিশ্রীপাড়া এলাকার প্রেসিডেন্ট ডোর এন্ড ফার্নিচারের মালিক শেখ মামুন বলেন, “এইখানে কোনো কাস্টমার আসে না। আমাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা।”

এই সড়কটি সিটি করপোরেশন নয়, বাড্ডা ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত।

ইউপি কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ‘উত্তর বাড্ডা হাসেন উদ্দিন রোড থেকে নজরুল সাহেবের বাড়ি হয়ে আলীর মোড় পর্যন্ত রাস্তায় ৩ ফুট ডায়াপাইপ নির্মাণকাজ’ শীর্ষক সংস্কার প্রকল্প শুরু হয়েছে চলতি বছরের ১ এপ্রিল। ৯১ লাখ টাকার এই কাজ শেষ হওয়ার কথা ১ অগাস্ট।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স অর্নি এন্ড সামি এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার আজিম আহমেদ বৃষ্টির কারণে কাজ করতে সমস্যার কথা জানিয়ে মানুষের অভিযোগকে ‘অহেতুক’ বলে উড়িয়ে দেন।

“মানুষজনের কাজই অভিযোগ করা। এ প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন তিনি। 

বর্ষার আগে না পারলেও যে অংশে নল বসানো হয়েছে থানা রোডের সেই অংশ ঈদের আগে যান চলাচল উপযোগী করার আশা দেখাচ্ছেন বাড্ডা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমও।

“ঠিকাদারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাকে বলেছি, পাইপের ম্যানহোলগুলোর ওপর স্ল্যাব বসিয়ে রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী করে দিতে। আমাকে তারা কথা দিয়েছে ঈদের আগে তা করে দিবে।”