উপরে ফ্লাইওভার, নিচে ভোগান্তি

ওপরে ঝকঝকে ফ্লাইওভার, নীচের রাস্তা ভাঙা, এবড়ো-থেবড়ো আর ছোট-বড় অসংখ্য গর্তে ভরপুর; সামান্য বৃষ্টি হলেই যানবাহনে ধীরগতি, লাগছে জট।

ওবায়দুর মাসুম নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2016, 03:01 AM
Updated : 7 June 2016, 03:01 AM

রাজধানীতে ঢোকা ও বের হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ যাত্রাবাড়ি চৌরাস্তা এলাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নীচের এই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়ই।

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক হয়ে দেশের পূর্বাঞ্চল এবং ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক হয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতকারী যানবাহনের বেশিরভাগ ফ্লাইওভারের নীচের সড়কটি ব্যবহার করে। এছাড়া রাজধানী কাছের কয়েকটি জেলার যানবাহনও যাত্রাবাড়ির এই চৌরাস্তা হয়ে যাতায়াত করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, চৌরাস্তা থেকে মেট্রো সিএনজি স্টেশন হয়ে দোলাইরপার এবং চৌরাস্তা থেকে টোলপ্লাজা হয়ে কুতুবখালী পর্যন্ত সড়কে ফ্লাইওভারের নীচে ও বাইরের দুই পাশের সড়কে রয়েছে অসংখ্য গর্ত।

এসব গর্তের কোথাও কোথাও পানি জমে ছোটখাটো পুকুরের আকার ধারণ করেছে। গর্ত এড়াতে একেবেঁকে চলার চেষ্টা করছে সব ধরনের যানবাহন, আর এর জন্যে কমছে গতি।

চট্টগ্রাম মহাসড়কের দীর্ঘ এলাকাজুড়ে পানি জমে থাকায় আড়াল হয়ে আছে অনেক আগের সৃষ্ট গভীর সব খানা-খন্দ, ফলে বিপাকে পড়বে জেনেও ঝুঁকি নিয়েই পথ পাড়ি দিচ্ছে এ গাড়িগুলো।

কোনো ডোবা বা পুকুর নয়, এটি চট্টগ্রাম মহাসড়ক! আর এ পথেই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে গাড়ি।

সোমবার সকাল ১০টায় যাত্রাবাড়ি মৎস্য আড়তের সামনে সড়কের গর্তে আটকে যায় একটি পেঁয়াজবাহী পিকআপ ভ্যান। প্রায় ঘণ্টাখানেক চেষ্টার পর ভ্যানটিকে সরানো সম্ভব হয়।

একই সময়ে ওই স্থানের গর্তে আটকে যায় তিনটি অটোরিকশা এবং একটি ট্রাক।

আটকে পড়া অটোরিকশা তিনটির একটিতে রাজধানীর এক হাসপাতাল থেকে অসুস্থ্য বাবাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ফিরছিলেন শিশির নামে এক যুবক। হাঁটু পানিতে নেমে অটোরিকশাটি ঠেলে ওপরে ওঠান তিনি।

কোনো ডোবা বা পুকুর নয়, এটি চট্টগ্রাম মহাসড়ক!

খানা-খন্দে ভরপুর জলাবদ্ধ এটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক!

ক্ষোভ প্রকাশ করে শিশির বলেন, “আমার বাবার ট্যাক্সের টাকায় এসব রাস্তাঘাট মেরামত করার কথা। কিন্তু এই সড়ক দেখে প্রশ্ন জাগে, আমরা যে ট্যাক্সের টাকা দেই- সেগুলো কোথায়?”

তুরাগ পরিবহনের চালক মো. হানিফের মন্তব্য, “ভাই, এই রাস্তা দেখলেই চক্ষে পানি আহে।”

চালকের সহকারী জুয়েল জানান, ভাঙা সড়কের কারণে প্রায়ই গাড়ির যন্ত্রাংশ ভেঙে যায়। টায়ার ফেটে যায়।

ঢাকা-মাওয়া রুটের গুনগুন পরিবহনের চালক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, “মাওয়া থেকে এ পর্যন্ত আসতে তেমন কোনো কষ্ট হয় না। কিন্তু এই অংশটুকু পার হতে জান বাইর হইয়া যায়।”

কোনো ডোবা বা পুকুর নয়, এটি চট্টগ্রাম মহাসড়ক! আর এ পথেই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে গাড়ি।

জলাবদ্ধ এই সড়কটি রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থেকে চট্টগ্রামমুখী। এলাকাবাসী বলছেন, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে একই অবস্থা এই মহাসড়কটির।

দোলাইরপাড়ের এফআর ট্রেডিংয়ের বিক্রয়কর্মী শোভন জানালেন প্রতিদিন একাধিক দুর্ঘটনা ঘটার কথা।

“আপনি ঘণ্টা-দুয়েক দাঁড়ান। দেখবেন একটা না একটা গাড়ি পড়বেই।”

সড়কের পাশের দোকানিরাও বলছেন, বৃষ্টি হলে ভাঙা রাস্তায় পানি জমেই অবস্থা বেশি খারাপ হয়। তখন গর্ত দেখা যায় না বলে একটা একটা করে যানবাহন পার হয়, এতে লম্বা যানজট তৈরি হয়।

খানা-খন্দে ভরপুর জলাবদ্ধ এটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক!

চট্টগ্রাম মহাসড়কের দীর্ঘ এলাকাজুড়ে পানি জমে থাকায় আড়াল হয়ে আছে অনেক আগের সৃষ্ট গভীর সব খানা-খন্দ, ফলে বিপাকে পড়বে জেনেও ঝুঁকি নিয়েই পথ পাড়ি দিচ্ছে এ গাড়িগুলো।

যাত্রাবাড়ির নূরিয়া মেডিকেল সেন্টারের কর্মী সাইদুল ইসলামের অভিযোগ, সড়কটি মেরামতের পর প্রথম তিন-চার মাস ভালো ছিল। এরপরই তা ভাঙতে থাকে। এখন অবস্থা খুব খারাপ।

“দেখেন, উপরের ফ্লাইওভার কেমন চকচইক্কা, আর নিচের সড়কের কী খারাপ অবস্থা।”

ফ্লাইওভারের নীচে যানজট ও দুর্ঘটনার জন্য বেহাল সড়ককে দায়ী করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগও।

ডিএমপির জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “প্রতিদিন একটা না একটা গাড়ি গর্তে পড়ে যায়, এগুলো সরাতে অনেক সময় লাগে।”

কোনো ডোবা বা পুকুর নয়, এটি চট্টগ্রাম মহাসড়ক!

খানা-খন্দে আটকে গেছে পিক-আপ ভ্যান, সঙ্গে অটোরিকশাও।

সড়কটির দুরবস্থার কথা স্বীকার করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বোরহান উদ্দিন।

“এই সড়কের মূল সমস্যা জলাবদ্ধতা। দুই বছর আগে সড়কটি মেরামত করা হয়েছিল। পানি জমে থাকায় মেরামতের পরেও ভেঙে যায়।”

সড়কের এ অংশ মেরামতে ‘যাত্রাবাড়ি ত্রিমুখী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’ হাতে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে এই প্রকৌশলী জানান, “প্রকল্পে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও থাকছে, দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে কাজ শুরু করতে আরো দুই মাস সময় লাগবে।”

তবে যান চলাচল ঠিক রাখতে গর্তগুলো দ্রুতই মেরামত করে দেওয়া হবে বলে জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশলী বোরহান।