গায়ে ‘সিটিং সার্ভিস’ লেখা থাকলেও অধিকাংশ বাসেই আসনের অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে দাঁড় করিয়ে বা রডে ঝুলিয়ে। নিয়ম থাকলেও যাত্রীদের টিকেট দেওয়া হচ্ছে না; আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। এসব বাসে চড়ে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন নিরুপায় যাত্রীরা।
যাত্রীরা টিকেট চাইলে বাস চালকদের সহকারীর বাজে আচরণের মুখোমুখি হতে হয় অনেক সময়। তর্ক কখনো হাতাহাতিতেও গড়ায়।
যাত্রীরা যেন ভাড়ার ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা পান, সেজন্য বাসে ভাড়ার তালিকা রাখার নিয়ম এবং এই নিয়ম অমান্য করলে জরিমানার বিধানও রয়েছে। বিষয়গুলো যাদের দেখভাল করার কথা, তারা শুধু নিয়ম করেই দায় সেরেছেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সাব কমিটি ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও রাজধানীর প্রায় সব রুটেই সিটিং বাসে নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলছে ইচ্ছেমত ভাড়া আদায়।
রাজধানীর কুড়িল, নতুনবাজার ও উত্তরা থেকে যেসব বাস কালশী, মিরপুর-১০, ২, ১ নম্বর হয়ে আনসারক্যাম্প যায়, সেগুলোর সর্বনিম্ন ভাড়া ২৫ টাকা। এই রুটের ‘জাবালে-নূর’, ‘আকিক’, ‘প্রজাপতি’ বাসে যাত্রীদের টিকেট দেওয়া হয় না।
বসুন্ধরার বাসিন্দা মুনির রহমান জানালেন, ‘জাবালে-নূর’ ও ‘আকিক’ বাসগুলো বিশ্বরোড থেকে কালশী, কিংবা নতুন বাজার থেকে শেওড়া গেলেও ২৫ টাকা নেয়। বসুন্ধরা থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত ২০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়, যা লোকাল বাসে ১০/১২ টাকা।
“সবচেয়ে বড় কথা, এরা কোনো টিকেট দেয় না। টিকেট দেওয়া হয় না বলে বারবার ভাড়া চাইতে আসে, অনেক সময় এ নিয়ে তর্কাতর্কিও হয়।”
কোনো কোনো বাসে টিকেট দেওয়া হলেও তাতে যাত্রীর গন্তব্য আর টিকেটে লেখা গন্তব্যের মিল থাকে না।
‘রইছ পরিবহনের’ বাসে এই প্রতিবেদক কল্যাণপুর থেকে মহাখালির টিকেট চাইলে ধরিয়ে দেওয়া হয় সাভার থেকে পঙ্গু হাসপাতাল লেখা টিকেট।
জানতে চাইলে হেলপারের জবাব, “যে টিকেট আছে তাই দিছি। মালিক এইগুলাই দিছে। এই টিকেটেই কাজ চলব।”
অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ বাস-ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক তালুকদার সোহেল।
তবে এই সমস্যার আশু কোনো সমাধান দেখছেন না এই পরিবহন নেতা।
সনাতন টিকেটিং ব্যবস্থায় অনিয়ম ঠেকানো কঠিন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বিশ্বের বড় বড় শহরে অনেক আগেই এসব সমস্যার সমাধান হয়েছে। সারা পৃথিবীর কোথাও আরবান ট্রান্সপোর্ট এ রকম এক-দুইজন বিচ্ছিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে গড়ে ওঠেনি। যতদিন সরকার এটা অনুধাবন না করবে, সমাধান আসবে না।”
‘সিটিং সার্ভিসের’ নামে নৈরাজ্যের বিষয়ে কথা হয় বিআরটিএর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) বিজয় ভূষণ পালের সঙ্গে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মোবাইল কোর্টকে নির্দেশনা দেওয়া আছে, ভাড়ার চার্ট না রাখলে বা ভাড়ায় অনিয়ম দেখলে জরিমানা করবে।
“বাস মালিক সমিতির সঙ্গেও আমরা এটা নিয়ে মিটিং করেছি। উনারা বলেছেন বাস্তবায়ন করবেন। যদিও এখনও পুরোপুরি হয় নাই।”