পুঁজিবাজার তুলতে চাই ভালো কোম্পানি: রিজভী

পুঁজিবাজারে গতি আনতে মানুষের হাতে থাকা অলস অর্থ বিনিয়োগের উপর জোর দিচ্ছেন ডিএসইর সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী।

নিজস্ব প্রতিবেদকফারহান ফেরদৌস, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2017, 01:12 PM
Updated : 19 Nov 2017, 01:20 PM

আর বিনিয়োগে মানুষকে আগ্রহী করতে ‘ভালো কোম্পানিগুলোকে’ পুঁজিবাজারে আনতে সরকার ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসির আরও সক্রিয়তা প্রত‌্যাশা করছেন তিনি।

পুঁজিবাজারের বর্তমান হালে বিনিয়োগকারীদের হতাশার প্রেক্ষাপটে সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শাকিল রিজভী বলেন, “খারাপ কোম্পানির আধিক্য হলে পুঁজিবাজারে একটু উল্টাপাল্টা হলেই ধস নামে।

“ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনতে হবে। ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারের খুঁটি হিসেবে কাজ করে। ভালো কোম্পানি আনতে পারলে পুঁজিবাজারের শক্তি অনেক বেড়ে যাবে। তাহলে কোনো অবস্থাতেই বাজারে বড় ধরনের পতন হবে না। ১০টা ভালো কোম্পানি বাজারে এলে দেখেন বাজার কীভাবে বাড়ে।”

ভালো কোম্পানি কোনগুলো?

“ভালো কোম্পানি হল, যেসব কোম্পানির গুড ম্যানেজমেন্ট আছে, পেইড আপ ক্যাপিটাল ভালো, ভালো লভ্যাংশ দিতে পারে, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি,” উত্তর আসে ডিএসইর সাবেক সভাপতির কাছ থেকে।

“মানুষের হাতে ২০ হাজার কোটি টাকার মতো অলস অর্থ আছে,” হিসাব দিয়ে তিনি বলেন, “ভালো কোম্পানি এলে এ টাকা পুঁজিবাজারে ঢুকবে।”

রাষ্ট্রায়ত্ত ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে সরকারের উদ‌্যোগ প্রত‌্যাশা করেন শাকিল রিজভী।  

“একটা নিয়ম আছে, ইন্স‌্যুরেন্স কোম্পানি ৩ বছর হলে লিস্টেড হতে হবে, তাহলে জীবন বীমা, সাধারণ বীমা কেন এখনও পুঁজিবাজারে আসে না? এসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে এলে সরকার কিছু টাকা পেত, আবার কোম্পানির কার্যক্রম মানুষ জানতে পারত। মানুষের হাতে কোম্পানির হিসাবটা আসত।”

আরও বহুজাতিক কোম্পানিকে বাজারে আনার ক্ষেত্রেও সরকারের দ্বারস্ত তিনি।

“বাইরে (অন‌্য দেশে) কোনো মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংক কি আনলিস্টেড থাকতে পারে, বাংলাদেশে আনলিস্টেড হয়ে আছে কেন? স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এবং সিটি এনআই ব্যাংক- এগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে হবে।”

ভালো কোম্পানির শেয়ারে ধস না নামায় তা বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা রাখায় বড় ভূমিকা রাখে বলে মনে করেন শাকিল রিজভী।  

শাকিল রিজভী (ফাইল ছবি)

“এত কিছুর পরেও ১০ টাকার বাটা কিন্তু ৫০ টাকা হয় নাই। বাটার ১০ টাকার শেয়ার ১১০০ টাকা, লিন্ডার ১০ টাকার শেয়ার ১৪০০ টাকা।

বহুজাতিক যে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত, সেগুলোকে উদাহরণ হিসেবেও তুলে ধরেন তিনি।

“দেখেন ৮০ বা ৯০ এর দশকে যে সব বহুজাতিক কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকা ভুক্ত হয়েছিল, সেগুলোই কিন্তু এখন পুঁজিবাজারে খুঁটি হিসেবে কাজ করছে। যারা ’৮৭ সালে ১০ টাকা করে এই শেয়ার পেয়েছে, তারা তো অনেক গুণ লাভে।”

ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে এবং রাখতে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিকিউরিটিজ অ‌্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের আরও মনোযোগী হতে আহ্বান জানান ডিএসইর সাবেক সভাপতি।  

“ভালো কোম্পানি আনতে হলে তাকে কিছু বেনিফিট দিতে হবে। কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। এজিএমের একটা সুষ্ঠু পরিবেশ দিতে হবে।”

কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায়, যেখানে লভ‌্যাংশ অনুমোদিত হয়, সেখানে বিনিয়োগকারীদের হাতে কোম্পানির প্রতিনিধিদের হেনস্তা হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

শাকিল রিজভী বলেন, “অনেক সময় দেখা যায়, এজিএম পার্টির লোকজন মা-বাবা তুলে গালি দিচ্ছে। এসব হলে কোনো ভালো কোম্পানি আসতে চাইবে না। ভালো কোম্পানি কিন্তু খারাপ কথা সহ্য করবে না। ভালো কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার আশ্বস্ত করতে হবে যে আপনারা হ‌্যারাসড হবেন না।”

কোম্পানির এজিএম সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের পরিবেশ তৈরিতে বিএসইসির তৎপর হওয়ার উপর জোর দেন তিনি।  

পুঁজিবাজার সংক্রান্ত আইনগুলো সহজ করার পরামর্শও দেন ডিএসইর সাবেক সভাপতি।

“পুঁজিবাজার তালিকাভুক্তির এবং পরের আইনগুলোকে একটু সহজ করতে হবে, বেশি ওভার রেগুলেশন করলে তো আর হবে না। একই বিষয়ে চারবার প্রশ্ন করার দরকার কী? কমপ্লিকেটেড আইন দিয়ে ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা যাবে না।”

‘ডুয়েল লিস্টিং’ থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষেও মত দেন তিনি।

“যে কোম্পানির যে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হওয়ার ইচ্ছা, সে সেখানে তালিকাভুক্ত হবে। একটি কোম্পানি দুই স্থানে কেন খরচ দেবে?”

বাংলাদেশে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) দুটি পুঁজিবাজার রয়েছে, প্রতিটি কোম্পানির এই দুটিতে তালিকাভুক্ত হওয়া বাধ্যতামূলক।