বুধবার ঢাকার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী পাঁচ জাতির এই টুর্নামেন্টের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
সকালে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছেই শেখ হাসিনা পাঁচ দেশের প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের অধিনায়কদের সঙ্গে পরিচিত হন। ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইংল্যান্ড ও স্বাগতিক বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টে খেলছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবন্ধী জনগণ সমাজের সকল স্তরে অবদান রাখছে। ক্রিকেটও তার ব্যতিক্রম হতে পারে না।
“তারা কেন বাইরে পড়ে থাকবে? তাদের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসতে হবে। শারীরীক কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলেই যে তারা সমাজ থেকে, পরিবার থেকে দূরে থাকবে, সেটা হয় না।”
আর প্রতিবন্ধীরাও যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে একটি দেশের জন্য, জাতির জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারে, তার প্রমাণ বিশেষ অলিম্পিক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে আয়োজিত ক্রিকেট টুর্নামেন্টে তারা রেখেছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।
“বিশেষ অলিম্পিকে তারা ২১টা স্বর্ণসহ ৭০টি পদক নিয়ে এসেছে, যা কোনো সুস্থ খেলোয়াড়রা পারে নাই। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা ক্রিকেট খেলায় তাদের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছে।”
তিনি বলেন, “প্রতিবন্ধিতা তাদের বিকাশের বাধা হতে পারে না। তাদের মধ্যেও ট্যালেন্ট থাকে। তাদেরও মূলধারায় জায়গা করে দেওয়ার জন্য সরকার কাজ করছে।
“প্রতিবন্ধী হলেই তারা সমাজের, পরিবারের বোঝা না। আর আমরা সেই ব্যবস্থাটাই নিচ্ছি, যাতে তাদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা গুণাবলী বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া যায়।”
তিনি বলেন, “তাদের প্রতি অবহেলা করবেন না। তারাও তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারে, যদি সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া যায়। আমরা সেই সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আন্তর্জাতিকভাবে তারা আমাদের দেশের জন্য সম্মান নিয়ে আসতে পারবে, সেই বিশ্বাস আমার আছে।”
উন্মুক্ত মাঠে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৪০ মিনিট পর স্টেডিয়ামের প্রেস কনফারেন্স কক্ষে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী আবহাওয়ার প্রতিকূলতার জন্য নির্ধারিত পরিকল্পনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের ইচ্ছা ছিল খুব সুন্দর করে দৃষ্টিনন্দন করা। কিন্তু প্রকৃতির কাছে মানুষ অসহায়।”
প্রতিবন্ধীদের জন্য খেলাধুলার সুযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ক্রীড়া উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হল, এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না।”
প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “শারীরীক প্রতিবন্ধিতা কোনো রোগ নয়, এটা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। তোমরা এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছ। তোমরাই প্রমাণ করতে যাচ্ছ যে, স্বপ্নপূরণে প্রতিবন্ধিতা কোনো বাধা হতে পারে না।”
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক রেডক্রসের (আইসিআরস) হেড অফ ডেলিগেশন ক্রিস্টিন সিপোল্লা এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের সঙ্গে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “শারীরিক প্রতিবন্ধীরা আমাদের বোঝা নয়, তারা আমাদের সম্পদ হতে পারে।”
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার এবং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। অন্যদের মধ্যে যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, বিসিবির কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটাররাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আইসিআরসির সঙ্গে এই টুর্নামেন্ট আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) ও বিসিবি।
টুর্নামেন্ট ও বিসিবির শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ক্রিকেট দলের শুভেচ্ছা দূত হয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। টুর্নামেন্টের মিডিয়া পার্টনার দেশের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।