'আমি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি ১৮ বছর না হলে আমাদের মন্দিরে কোনো বিয়ে সংঘটিত হবে না।'
Published : 08 Aug 2024, 10:55 PM
বাল্যবিয়ে পড়ানোর জন্য অনুরোধ এলেও তা প্রত্যাখান করেন বলে জানান সাতক্ষীরা সদর সার্বজনীন মন্দিরের পুরোহিত দিপঙ্কর ভট্টাচার্য। হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় তিনি বলেন, বাল্যবিয়ে বন্ধে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। অভিভাবকরা সচেনতন না হলে কোনো ভাবেই বাল্যবিয়ে বন্ধ করা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
হ্যালো: একজন মেয়েকে কিশোরী বয়সে বিয়ে দেওয়া হলে তার কোন ধরনের ক্ষতি হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
দিপঙ্কর ভট্টাচার্য: যদি একটি মেয়েকে কম বয়সে বিয়ে দেওয়া হয় তাহলে নানা ধরনের ঝামেলা হতে পারে। সন্তান জন্মদানের সময় সন্তান ও মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞান বার বার বলছে যে, অল্প বয়সে কোনো মেয়েকে বিয়ে দেওয়া যাবে না।
বাংলাদেশের আইনও বলছে মেয়েদের ১৮ ও ছেলেদের ২১ বছর বয়স হওয়ার আগে বিয়ে দেওয়া যাবে না। এর আগে বিয়ে হলে একটা মেয়ের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হতে পারে। তার উপর পারিবারিক চাপ নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে তার অনেক ঝামেলা হয়। বাল্যবিয়ে দেওয়া হলে একটি মেয়ের জীবনে মৃত্যুর মতো প্রভাব পড়তে পারে বলে আমি মনে করি।
হ্যালো: আইন অনুযায়ী শিশু বিয়ের নিবন্ধন হয় না, তাই অনেকে অভিযোগ করেন পুরোহিতরা বাল্যবিয়েতে সহায়তা করে। এ অভিযোগ কতটুকু সত্য?
দিপঙ্কর ভট্টাচার্য: কথাটা অনেকটাই সত্য। তবে আমি যেদিন থেকে এই মন্দিরে পৌরহিত্য করছি, আমার কাছে অনেকগুলো প্রস্তাব এসেছে যে, মেয়ের বয়স একটু কম ১৩-১৪ বছর, মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে। আমি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি ১৮ বছর না হলে আমাদের মন্দিরে কোনো বিয়ে সংঘটিত হবে না। এছাড়া মন্দিরের সভাপতি ও সেক্রেটারি আমাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন মন্দিরে যেন কোনো বাল্যবিয়ে না হয়। আমি পড়াশোনা করি, আমি নিজেও জানি যে বাল্যবিয়ের ফলে নানা ঝামেলা হতে পারে। এই জন্য শুধুমাত্র যারা সঠিক কাগজপত্র দেয় আমরা শুধু তাদের বিবাহ দেই। আমরা অল্পবয়সের কোনো মেয়েকে বিবাহ দেই না।
হ্যালো: একজন পুরোহিত হিসেবে মানুষকে কিভাবে সচেতন করেন?
দিপঙ্কর ভট্টাচার্য: পুরোহিত মানে পরের যে হিত কামনা করে। আমরা প্রতিটা বিষয় মানুষকে বলি যে তোমরা এভাবে চল, এভাবে চললে ভালো হবে এবং তাদেরকে বিভিন্ন উপদেশমূলক কথা বলে থাকি। এখন বাল্যবিয়ে অনেকটা কমে গিয়েছে। এছাড়া সরকারও মেয়েদের অনেক সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। চাকরিসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা অনেক সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। এই কারনে মেয়েরা এখন শিক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে যা দেশকে সমৃদ্ধ করবে এবং দেশকে একটি উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।
হ্যালো: বাল্যবিয়ে বন্ধে কি করা উচিত বলে মনে করেন?
দিপঙ্কর ভট্টাচার্য: বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হলে আমাদের সচেতন হতে হবে। সচেতন হতে হবে মেয়ের অভিভাবকদের। যদি আমরা নিজেরা সচেতন না হই তবে বাল্যবিয়ে বন্ধ করা সম্ভব নয়।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৪। জেলা: সাতক্ষীরা।