"জেলখানা আরও বাড়ান সাহেব, আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হব।"
Published : 21 Feb 2025, 03:54 PM
ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর দেশভাগের সঙ্গে সঙ্গে ভাষা নিয়ে যে বিতর্ক সামনে এসেছিল বায়ান্নর আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তার সমাপ্তি হয়নি। এরপরও শহীদ দিবস পালনে এসেছে বাধা, চলেছে ধরপাকড়। এমনই এক প্রেক্ষাপটে রচিত হয় জহির রায়হানের উপন্যাস- আরেক ফাল্গুন।
উপন্যাসের শুরুটা হয় সিপাহি বিদ্রোহের স্মৃতি বিজরিত ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের কয়েক বছর পরের কথা। তখনও বাতাসে লাশের গন্ধ, শহীদ মিনার ভেঙে ফেলার চাপা উত্তেজনা শিক্ষার্থীদের মাঝে।
২১শে ফেব্রুয়ারির তিন দিন আগে খালি পায়ে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায় একটি ছেলেকে। তার নাম মুনিম, গল্পের প্রধান চরিত্র। যে একজন ছাত্রনেতা।
মুনিম ছাড়াও এই উপন্যাসে সালমা, রানু, বেনু, নীলা, আসাদ, রসুলের মত প্রতিবাদী অনেক চরিত্র ছিল। এছাড়াও ছিল বজলে এবং মাহমুদের মত ঘৃণিত চরিত্র।
শহীদ দিবস উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা তিন দিন খালি পায়ে হেঁটে, রোজা রেখে, কালো ব্যাজ পরে শোক পালন করছিল। কিন্তু তাতেও বাধা পাকিস্তানিদের। শহীদদের স্মরণে মিছিল, মিটিং, শোকসভা বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে। কালো ব্যাজ পরা যাবে না, তাই শিক্ষার্থীদের কাউকে কাউকে কালো শাড়ি পরতেও দেখা যায়।
উপন্যাস রচনার সময়কাল ভাষা আন্দোলনের কয়েক বছর পর হলেও, এর পরতে পরতে রয়েছে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি, শহীদ আবুল বরকতের সহযোদ্ধা রসুলের স্মৃতিচারণ ইত্যাদি অনেক কিছুই আছে এই উপন্যাসে। ছোট ছোট অনেক ঘটনা, অনেক চরিত্র সবকিছুই উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহকে সমৃদ্ধ করেছে।
২১শে ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে ছাত্রনেতাদের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। সেই আশঙ্কা আগে থেকেই করেছিল মুনিমরা। তাই সেই রাতে তারা বাড়িতে থাকেনি। ২১শে ফেব্রুয়ারি ভোরে পতাকা উত্তোলন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল হোস্টেল, মুসলিম হল, চামেলি হাউস, ইডেন হোস্টেল, ফজলুল হক হলের শিক্ষার্থীরা শহীদদের স্মরণে কালো পতাকা উড়ায়, কালো ব্যাজ ধারণ করে প্রতিবাদী গান গাইতে থাকে।
ক্যাম্পাসেও হানা দেয় পুলিশ। ছাত্রদের বাধা খুব বেশি সময় আটকে রাখতে পারেনি পুলিশদের। একে একে গ্রেফতার হতে থাকে রসুল, মুনিমসহ অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী। গ্রেফতার হয় সালমা, নীলা, রানুরাও। তাদের নিয়ে যাওয়া হয় যে গাড়িতে করে, সেখান থেকেও ভেসে আসে 'শহীদের স্মৃতি ভুলব না, বরকতের খুন ভুলব না’ গান।
শেষ দৃশ্যে একজন একজন করে নাম ডেকে জেলখানায় ঢোকানোর সময় হাঁপিয়ে উঠে জেলার। এত ছেলেকে জায়গা দেবেন কোথায় তিনি? তখনই পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠে, এতে ঘাবড়ে গেলেন? জেলখানা আরও বাড়ান সাহেব, আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হব।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: ঢাকা।