১৯৫০ এর দশকে বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আরও গভীরভাবে চিন্তা করতে শুরু করেন।
Published : 11 Nov 2024, 08:20 PM
জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাবগুলো দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। এ নিয়ে সারা বিশ্বেই সভা, সেমিনার, গবেষণা হয়ে থাকে। তবে সবার মধ্যে বর্তমানে যতটা উদ্বেগ তা আগে ছিল না। তাহলে জলবায়ু পরিবর্তন কবে থেকে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াল?
এ নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়েবসাইট লাইভ সায়েন্সে ২০২১ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ অংশের ভাবানুবাদ নিচে তুলে ধরা হলো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ অনেক আগে থেকেই ছিল, তবে বিজ্ঞানীরা প্রথম ১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করেন।
আগে মনে করা হতো মানুষের কর্মকাণ্ড পৃথিবীর জলবায়ুকে প্রভাবিত করবে- এটা অনেক দূরের চিন্তা।
আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ ফিজিক্সের সেন্টার ফর হিস্ট্রি অফ ফিজিক্সের অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক স্পেন্সার ওয়েয়ার্ট জানান, ১৯৫০ এর দশকে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে ভবিষ্যতে বিশেষ করে একবিংশ শতাব্দীতে জলবায়ু পরিবর্তন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে এবং এর মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।
তবে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে আগ্রহ শুধুমাত্র আধুনিক সময়ে নয়, এর আগে অনেক পুরনো সময়ে মানুষ আলোচনা করত। এমনকি প্রাচীন গ্রিসেও (১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৩২৩ খ্রিস্টাব্দ) মানুষ চিন্তা করেছিল যে জলাভূমি নিষ্কাশন বা বন উচ্ছেদ করলে বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তিত হতে পারে। কিন্তু এগুলো ছিল স্থানীয় পর্যায়ের আলোচনা, পৃথিবীজুড়ে এর প্রভাব নিয়ে ভাবনা তখন ছিল না।
১৮৯৬ সালে সুইডিশ বিজ্ঞানী সভান্তে আরহেনিয়াস প্রথমবারের মতো বলেন যে, মানুষের কার্যকলাপ পৃথিবীর জলবায়ুকে প্রভাবিত করতে পারে। তিনি একটি গবেষণাপত্রে জানান, যদি বায়ুমণ্ডলে বেশি পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড জমা হয় তাহলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
আরহেনিয়াসের গবেষণা সম্পূর্ণ নতুন ছিল না, বরং তিনি আগের বিজ্ঞানীদের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে কাজ করেছিলেন। পূর্ববর্তী বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিলেন যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল না থাকলে এটি অনেক ঠাণ্ডা বা শীতল হয়ে যেত।
তারা আরও বলেছিলেন যে বায়ুমণ্ডলের কিছু গ্যাস, যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড, সূর্যের তাপ ধরে রাখতে সাহায্য করে। এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে আরহেনিয়াস দেখিয়েছিলেন যে মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেড়ে গেলে পৃথিবী উষ্ণ হতে পারে।
আরহেনিয়াসের ভবিষ্যদ্বাণী ছিল আশ্চর্যজনকভাবে সঠিক। তবে তার কাজ তখন সাধারণ মানুষের কাছে খুব একটা গুরুত্ব পায়নি এবং অনেকেই উষ্ণায়নকে একটি ভালো দিক হিসেবে দেখতেন। কারণ তারা ভাবত উষ্ণ আবহাওয়া কৃষি এবং জীবিকা উন্নত করতে পারে। আর সেই সময় মানুষ জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে তেমন চিন্তিত ছিল না।
১৯১২ সালে একটি নিবন্ধে বলা হয় যে, কয়লা পোড়ানো পৃথিবীর তাপমাত্রা কয়েক শতাব্দী ধরে বাড়িয়ে দিতে পারে, কিন্তু সেটি তখন ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেনি।
১৯৫০ এর দশকে বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আরও গভীরভাবে চিন্তা করতে শুরু করেন। ১৯৫৭ সালে রজার রেভেল একটি গবেষণায় দেখান যে, মহাসাগর মানব তৈরি কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে সক্ষম নয়, ফলে বায়ুমণ্ডলে এর পরিমাণ বাড়বে।
এর তিন বছর পর ১৯৬০ সালে চার্লস কিলিং তার গবেষণায় দেখান, প্রতি বছর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনে মানব কার্যকলাপের প্রভাবের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
১৯৮৮ সালে টরন্টোতে একটি বড় সম্মেলন হয়, যেখানে বিজ্ঞানীরা এবং রাজনীতিবিদরা একসাথে মিলিত হন। তারা এই সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এর অর্থ হলো, তারা বুঝতে পারেন যে এই সমস্যা শুধু একটি নির্দিষ্ট দেশের নয়, বরং পুরো পৃথিবীর জন্য উদ্বেগের বিষয়।
সম্মেলনে তারা আলোচনা করেন যে কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যাতে জলবায়ুর ওপর মানুষের নেতিবাচক প্রভাব কমানো যায়।
১৯৯০ এর দশকে অধিকাংশ বিজ্ঞানী একমত হন যে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরি। তাদের গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণ থেকে তারা বুঝতে পারেন যে, যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব আরও খারাপ হতে পারে।
তবে বিজ্ঞানীদের এই মতের বিপরীতে কিছু বাধা ছিল। জীবাশ্ম জ্বালানী সংস্থাগুলি, যেমন তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলি, এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করতে থাকে, কারণ কার্বন নির্গমন কমানোর উদ্যোগ তাদের ব্যবসার ক্ষতি করতে পারে।
এছাড়া, কিছু রাজনৈতিক দল এবং নেতাও এই ধরনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এ সব কারণে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনেক বাধা এবং দেরি হয়।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৫। জেলা; কুড়িগ্রাম।