'বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব দিয়ে এনেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, তিনি নিশ্চয়ই আমাদের শ্রেষ্ঠ বীর'
Published : 15 Aug 2024, 02:44 PM
আজকের আগে আমি কাউকে বলতে শুনিনি যে ১৫ অগাস্ট শোকের দিন নয়। কী ঘটেছিল ১৯৭৫ সালের এই দিনে?
বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবাইকে হতচকিত করে দিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট সেনাবাহিনীর একটি অংশ বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়।
ইতিহাস বলে, সে রাতে শুধু বঙ্গবন্ধুকেই নয়, হত্যা করা হয় মোট ২৬ জনকে। নিহতদের মধ্যে শিশু ও গর্ভবতী নারীও ছিলেন। তারপর একটি আইনও করা হয় যেন হত্যাকারীদের বিচার করা না যায়।
৫৪ বছরের জীবনে বঙ্গবন্ধুর ১২ বছরেরও বেশি সময় কেটেছে কারাগারে। তার এই কারাবরণ ছিল বাংলা ভাষার জন্য, বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য।
বঙ্গবন্ধু এক সাধারণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর জীবন যাপনও ছিল সাধারণ। তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি ছিলেন তখন তিনি সরকারি বাসভবনের সকল সুযোগ সুবিধা ত্যাগ করে পরিবারের সঙ্গে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সাদামাটা বাড়িতে থেকেছেন। তার ঘরেও ছিল অতি সাধারণ মানের আসবাবপত্র। বাইরে পায়জামা পাঞ্জাবি ও ঘরে তাঁতের লুঙ্গি পরতেন বঙ্গবন্ধু।
স্বাধীনতা সংগ্রামে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণটি ইউনেস্কো ‘ওয়ার্ল্ডস ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নাম আরো একবার স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়। স্বাধীনতার আগের ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশ ছিল সকল প্রকার বৈষম্যের শিকার। সে সময় স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হতো না। কৃষি, ব্যবসা, বানিজ্য, চাকুরি বা কর্মসংস্থান কোনো কিছুতেই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের প্রাপ্য অধিকার ছিল না।
এদেশের মানুষের কষ্টে উপার্জিত অর্থ নিয়ে যাওয়া হতো পশ্চিম পাকিস্তানে। আমাদের মাতৃভাষাটাকেও কেড়ে নিতে চেয়েছিল তারা। সাত কোটি বাঙালির মতো বঙ্গবন্ধুও এইসব অবিচার মেনে নিতে পারেননি। তাই, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ সকল অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে উঠেছিলেন অগ্র নায়ক।
যিনি এ দেশের মানুষকে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, উদ্বুদ্ধ করেছেন মুক্তি সংগ্রামে, লাখো শহিদের রক্তকে বৃথা যেতে দেননি, নেতৃত্ব দিয়ে এনেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা তিনি নিশ্চয়ই আমাদের শ্রেষ্ঠ বীর।
আমরা যদি আজ জাতির শ্রেষ্ঠ মানুষদের সন্মান দিতে না পারি তাহলে জাতি হিসেবে আমরাও একদিন হয়ত সম্মান পাব না।
সময়টা ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধু বিনা নোটিশে লন্ডন পৌঁছলেন। তখন বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ ছুটিতে ছিলেন। তিনি খবর পেলেন শেখ মুজিবুর রহমান এসেছেন তাদের দেশে।
তিনি নিজের ছুটি বাতিল করলেন। ঐদিন সন্ধ্যায়ই ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে তিনি সাক্ষাতের ব্যবস্থা করলেন সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি দেশের রাষ্ট্র নায়কের সম্মানে। এ সম্মান শুধু বঙ্গবন্ধুর ছিল না, এ সম্মান ছিল বাংলার সকল মানুষের প্রতি।
আজ বঙ্গবন্ধুর নাম, ছবি, প্রতিকৃতি ব্যবহার করে কেউ যদি অন্যায় করে, সুবিধা ভোগ করে তার দায় বঙ্গবন্ধুর নয়। বঙ্গবন্ধুর নাম, ছবি, প্রতিকৃতির প্রতি যারা অসম্মান প্রদর্শন করে, বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ ই অগাস্টে শিশু, গর্ভবতী নারী, নিরপরাধ মানুষকে হত্যার দিনটিকে যারা শোকের দিন বলতে রাজি নয় তার দায়ও তাদের বাঙালির নয়।
সকল হত্যাই বয়ে আনে শোক। ১৫ ই অগাস্ট জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। তাই এ দিনটি কান্নার, এ দিনটি শোকের। আজ যদি আমরা আবারও ভুল করি তাহলে হয়ত কবির সেই কথা আমাদের জন্যই লেখা থাকবে, “অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।”
প্রতিবেদকের বয়স: ১৫। জেলা: ঢাকা।