বন্যা ও নদী ভরাট এখন এই অঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা।
Published : 20 Mar 2025, 08:54 PM
কয়েক মাস আগে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় গিয়েছিলাম। এই উপজেলার বোয়ালমারা, আনচেংগ্রী, মহাজনী কান্দাসহ কয়েকটি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বোরাঘাট নদী।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, এক সময় এই নদী কৃষি কাজের জন্য আশীর্বাদ ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই নদীই তাদের সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মোসলেম উদ্দিন নামে বোয়ালমারা গ্রামের এক বাসিন্দা আমাকে বলছিলেন, “আগে নদীগুলি প্রশস্ত ছিল, গভীর ছিল। কিন্তু নদীগুলি চাপাইয়া ফেলার কারণে পানি যাইতে পারে না, ফলে নদী ভইরা ফসলেরও ক্ষতি হয়, যোগাযোগ ব্যবস্থারও ক্ষতি হয়।”
গেল বছরের অক্টোবরে হঠাৎ বন্যায় এই এলাকার অনেক কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বন্যা ও নদী ভরাট এখন এই অঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা।
মহাজনী কান্দা এলাকায় বোরাঘাট নদীর উপর যে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে তার উচ্চতা অনেকটাই কম। তাই বর্ষাকালে পানি সেতুটিতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে প্লাবনভূমির পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে।
যেখানে আগে তিন ফসল হত, এখন সেখানে কিছুই জন্মায় না। নাছিমা খাতুন নামে মহাজনী কান্দা গ্রামের এক নারী বলছিলেন, “ভরাট অইতে অইতে নদী অইয়া গেছে ছুডু, গর পানি ইডে, বালি দিয়া ক্ষেত বইরা যাইতেছেগা।”
নদীর এই পরিবর্তন শুধু কৃষকের নয়, পুরো এলাকার জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করছে। চাষের জমি হারিয়ে অনেকে দারিদ্র্যের কবলে পড়ছে। অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে সন্তানকে স্কুলের পরিবর্তে কাজে পাঠাচ্ছে।
এই গ্রামের মেয়ে শিশুদের অবস্থা আরও বেশি নাজুক বলে মনে হল। তাদের সবসময় বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে থাকতে হয়। তবে হতাশার মধ্যেও কিছু কৃষক নতুনভাবে ভাবছেন। তারা বলছেন, বালু দিয়ে ঢেকে যাওয়া জমিতে বাদাম বা ভুট্টার চাষ সম্ভব হতে পারে। কিন্তু কয়েকজন কৃষক বলছিলেন, বীজ কেনার মত সামর্থ্য তাদের নেই।
স্থানীয়রা মনে করছেন, নদীটির মাধ্যমে আর যেন কোনো জমি নতুন করে বালু দিয়ে পরিপূর্ণ না হয় তার জন্য নদীর দখলকৃত অংশ উদ্ধার করে এর নাব্যতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
আমি মনে করি, এই অঞ্চলের শিশু, নারী ও বয়োবৃদ্ধদের অনাহারে, অর্ধাহারে থাকা হতে রক্ষা করতে হলে ফসলি জমিকে এই মরুকরণের হাত থেকে বাঁচানো অতি জরুরি।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: ঢাকা।